নীরজা ও রোশনি
নীরজার ঘর
নীরজা ও রোশনি
নীরজা।
রোশনি কাগজ নিয়ে এল। কাগজ পড়ে নীরজা বললে--
রোশনি, তোদের সরলা দিদিমণির কাণ্ডটা দেখলি? হাটের লোকের সামনে ভদ্রঘরের মেয়ে--
রোশনি।
মনে পড়লে গায়ে কাঁটা দেয়, চোর-ডাকাতের বাড়া। ছি ছি!
নীরজা।
ওর সব-তাতেই গায়ে-পড়া বাহাদুরি। বেহায়াগিরির একশেষ। বাগান থেকে আরম্ভ করে জেলখানা পর্যন্ত। মরতে মরতেও দেমাক ঘোচে না।
রোশনি।
কিন্তু খোঁখী, দিদিমণির মনখানা দরাজ।
নীরজা।
ঠিক বলেছিস রোশনি, ঠিক বলেছিস। ভুলে গিয়েছিলুম। শরীর খারাপ থাকলেই মন খারাপ হয়। আগের থেকে যেন নিচু হয়ে গেছি। ছি ছি, নিজেকে মারতে ইচ্ছে করে। সরলা খাঁটি মেয়ে। মিথ্যে কথা জানে না। অমন মেয়ে দেখা যায় না। আমার চেয়ে অনেক ভালো। শিগগির আমাদের গণেশ সরকারকে ডেকে দে।
আয়া চলে গেল, পেন্সিল নিয়ে নীরজা একখানা চিঠি লিখতে বসল। গণেশ এল।
(গনেশকে) চিঠি পৌঁছিয়ে দিতে পারবে জেলখানায় সরলাদিদিকে?
গণেশ।
পারব। কিছু খরচ লাগবে। কিন্তু কী লিখলে মা শুনি, কেননা পুলিশের হাত দিয়ে যাবে চিঠিখানা।
নীরজা।
(পত্র পাঠ) ধন্য তোমার মহত্ত্ব! এবার জেলখানা থেকে বেরিয়ে যখন আসবে তখন দেখবে তোমার পথের সঙ্গে আমার পথ মিলে গেছে।
গণেশ।
ঐ যে পথটার কথা লিখেছ, ভালো শোনাচ্ছে না। আমাদের উকিলবাবুকে দেখিয়ে ঠিক করা যাবে।
[গণেশের প্রস্থান
[গণেশের প্রস্থান
ওষুধের পেয়ালা হাতে নিয়ে আদিত্যের প্রবেশ
ওষুধের পেয়ালা হাতে নিয়ে আদিত্যের প্রবেশ
নীরজা।
এ আবার কী?
আদিত্য।
ডাক্তার বলে গেছে ঘণ্টায় ঘণ্টায় ওষুধ খাওয়াতে হবে।
বিছানার পাশে বসল
বিছানার পাশে বসল
নীরজা।
ওষুধ খাওয়াবার জন্যে বুঝি আর পাড়ায় লোক জুটল না। নাহয় দিনের বেলাকার জন্যে একজন নার্স রেখে দাও-না, যদি মনে এতই উদ্বেগ্ থাকে।
আদিত্য।
সেবার ছলে কাছে আসবার সুযোগ যদি পাই ছাড়ব কেন?
নীরজা।
তার চেয়ে কোনো সুযোগে তোমার বাগানের কাজে যদি যাও তো আমি ঢের বেশি খুশি হব। আমি পড়ে আছি আর দিনে দিনে বাগান যে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
আদিত্য।
হোক-না নষ্ট। সেরে ওঠো আগে, তার পর সেদিনকার মতো দুজনে মিলে কাজ করব।
নীরজা।
সরলা চলে গেছে, তুমি একলা পড়েছ, কাজে মন যাচ্ছে না। কিন্তু উপায় কী? তাই বলে লোকসান করতে দিয়ো না।
আদিত্য।
লোকসানের কথা আমি ভাবছি নে নীরু। বাগান করাটা যে আমার ব্যাবসা সে কথা এতদিন তুমিই ভুলিয়ে রেখেছিলে, কাজে তাই সুখ ছিল। এখন মন যায় না।
নীরজা।
অমন করে আক্ষেপ করছ কেন? বেশ তো কাজ করছিলে এই সেদিন পর্যন্ত। কিছুদিনের জন্যে যদি বাধা পড়ে তাই নিয়ে এত ব্যাকুল হোয়ো না।
আদিত্য।
পাখাটা কি চালিয়ে দেব?
নীরজা।
বাড়াবাড়ি কোরো না তুমি, এ-সব কাজ তোমাদের নয়। এতে আমাকে আরো ব্যস্ত করে তোলে। যদি কোনোরকম করে দিন কাটাতে চাও তো তোমাদের তো হর্টিকাল্চরিস্ট ক্লাব আছে।
আদিত্য।
তুমি যে রঙিন লিলি ভালোবাস, বাগানে অনেক খুঁজে একটাও পাই নি। এবারে ভালো বৃষ্টি হয় নি বলে গাছগুলোর তেজ নেই।
নীরজা।
কী তুমি মিছিমিছি বকছ! তার চেয়ে হলাকে ডেকে দাও, আমি শুয়ে শুয়েই বাগানের কাজ করব। তুমি কি বলতে চাও আমি শয্যাগত বলেই আমার বাগানও হবে শয্যাগত। শোনো আমার কথা। শুকনো সীজন ফুলের গাছগুলো উপড়িয়ে ফেলে সেখানে জমি তৈরি করিয়ে নাও। আমার সিঁড়ির নীচের ঘরে সরষের খোলের বস্তা আছে। হলার কাছে আছে তার চাবি।
আদিত্য।
তাই নাকি? হলা তো এতদিন কিছুই বলে নি।
নীরজা।
বলতে ওর রুচবে কেন? ওকে কি তোমরা কম হেনস্তা করেছ? কাঁচা সাহেব এসে প্রবীণ কেরানিকে যে-রকম গ্রাহ্য করে না সেই রকম আর-কি।
আদিত্য।
হলা মালী সম্বন্ধে সত্য কথা বলতে যদি চাই তবে সেটা অপ্রিয় হয়ে উঠবে।
নীরজা।
আচ্ছা, আমি এই বিছানায় পড়ে থেকেই ওকে দিয়ে কাজ করাব, দেখবে দুদিনেই বাগানের চেহারা ফেরে কি না। বাগানের ম্যাপটা আমার কাছে দিয়ো। আর আমার বাগানের ডায়েরিটা। আমি ম্যাপে পেন্সিলের দাগ দিয়ে সমস্ত ব্যবস্থা করে দেব।
আদিত্য।
আমার তাতে কোনো হাত থাকবে না?
নীরজা।
না, যাবার আগে এ বাগানে সম্পূর্ণ আমার ছাপ মেরে দেব। বলে রাখছি, রাস্তার ধারের ঐ বট্ল্পামগুলো আমি একটাও রাখব না। ওখানে ঝাউগাছের সার লাগিয়ে দেব। অমন করে মাথা নেড়ো না। হয়ে গেলে তখন দেখো। তোমাদের ঐ লন্টা আমি রাখব না, ওখানে মার্বলের একটা বেদী বাঁধিয়ে দেব।
আদিত্য।
বেদীটা কি ও জায়গায় মানাবে? একটু যেন যাকে বলে সস্তা নবাবী।
নীরজা।
চুপ করো। খুব মানাবে। তুমি কোনো কথা বলতে পারবে না। কিছুদিনের জন্যে এ বাগানটা হবে একলা আমার, সম্পূর্ণ আমার। তার পর সেই আমার বাগানটা আমি তোমাকে দিয়ে যাব। ভেবেছিলে আমার শক্তি গেছে। দেখিয়ে দেব কী করতে পারি। আরো তিনজন মালী আমার চাই, আর মজুর লাগবে জন-ছয়েক। মনে আছে একদিন তুমি বলেছিলে বাগান সাজিয়ে তোলার শিক্ষা আমার হয় নি। হয়েছে কি না তার পরীক্ষা দিয়ে যাব| তোমাকে মনে রাখতেই হবে যে এ আমার বাগান, আমারই বাগান, আমার স্বত্ব কিছুতে যাবে না।
আদিত্য।
আচ্ছা সেই ভালো, তা হলে আমি কি করব?
নীরজা।
তুমি তোমার দোকান নিয়ে থাকো; সেখানে তোমার অফিসের কাজ তো কম নয়।
আদিত্য।
তোমাকে নিয়ে থাকাও তা হলে নিষিদ্ধ।
নীরজা।
হাঁ, সর্বদা কাছে থাকবার মতো সে আমি আর নেই-- এখন আমি কেবল আর-একজনকে মনে করিয়ে দিতে পারি-- তাতে লাভ কী?
আদিত্য।
আচ্ছা বেশ। যখন তুমি আমাকে সহ্য করতে পারবে, তখনি আসব। ডেকে পাঠিয়ো আমাকে। আজ সাজিতে তোমার জন্য গন্ধরাজ এনেছি, রেখে যাই তোমার বিছানায়, কিছু মনে কোরো না।
বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ল
আদিত্যের হাত ধরে
বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ল
আদিত্যের হাত ধরে
নীরজা।
না, যেয়ো না, একটু বোসো।
ফুলদানিতে একটা ফুল দেখিয়ে
জানো এ ফুলের নাম।
আদিত্য।
না, জানি নে।
নীরজা।
আমি জানি। বলব, পেট্যুনিয়া। তুমি মনে করো আমি কিছু জানি নে, মুর্খু আমি।
আদিত্য।
(হেসে) সহধর্মিণী তুমি, যদি মুর্খ হও অন্তত আমার সমান মূর্খ। আমাদের জীবনে মূর্খতার কারবার আধাআধি ভাগে চলছে।
নীরজা।
সে কারবার আমার ভাগ্যে এইবারে শেষ হয়ে এল। ঐ যে দারোয়ানটা ঐখানে বসে তামাক কুটছে ও থাকবে দেউড়িতে, কিছুদিন পরে আমি থাকব না। ঐ যে গোরুর গাড়িটা পাথুরে কয়লা আজাড় করে দিয়ে খালি ফিরে যাচ্ছে ওর যাতায়াত চলবে রোজ রোজ, কিন্তু চলবে না আমার এই হৃদ্যন্ত্রটা।
আদিত্যের হাত হঠাৎ জোর করে চেপে ধরে
একেবারেই থাকব না,কিছুই থাকব না? বলো আমাকে, তুমি তো অনেক বই পড়েছ, বলো-না আমাকে সত্যি করে।
আদিত্য।
যাদের বই পড়েছি তাদের বিদ্যে যতদূর আমারও ততদূর। যমের দরজার কাছটাতে এসে থেমেছি আর এগোয় নি।
নীরজা।
বলো-না তুমি কি মনে করো। একটুও থাকব না? এতটুকুও না?
আদিত্য।
এখন আছি এটাই যদি সম্ভব হয়, তখন থাকব সেও সম্ভব।
নীরজা।
নিশ্চয়ই সম্ভব, ঐ বাগানটা সম্ভব, আর আমিই হব অসম্ভব, এ হতেই পারে না, কিছুতেই না। সন্ধেবেলায় অমনি করেই অস্পষ্ট আলোয় কাকেরা ফিরবে বাসায়, এমনি করেই দুলবে সুপুরিগাছের ডাল ঠিক আমারই চোখের সামনে। সেদিন তুমি মনে রেখো, আমি আছি, আমি আছি, সমস্ত বাগানময় "আমি আছি'। মনে কোরো বাতাস যখন তোমার চুল ওড়াচ্ছে আমার আঙুলের ছোঁওয়া আছে তাতে। বলো মনে করবে।
আদিত্য।
হাঁ, মনে করব।
বলল বটে, কিন্তু এমন সুরে বলতে পারলে না যাতে তার বিশ্বাসের প্রমাণ হয়।
বলল বটে, কিন্তু এমন সুরে বলতে পারলে না যাতে তার বিশ্বাসের প্রমাণ হয়।
নীরজা।
(অস্থির হয়ে) তোমাদের বই যারা লেখে ভারী তো পণ্ডিত তারা। কিছু জানে না। আমি নিশ্চয় জানি, আমার কথা বিশ্বাস করো। আমি থাকব, আমি এইখানেই থাকব, আমি তোমারই কাছে থাকব, একেবারে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। এই তোমাকে বলে যাচ্ছি, কথা দিয়ে যাচ্ছি, তোমার বাগানের গাছপালা সমস্তই আমি দেখব। যেমন আগে দেখতুম তার চেয়ে অনেক ভালো করে দেখব। কাউকে দরকার হবে না। কাউকে না।
শুয়ে ছিল, উঠে বালিশে ঠেসান দিয়ে বসে
আমাকে দয়া কোরো, দয়া কোরো। তোমাকে এত ভালোবাসি সেই কথা মনে করে আমাকে দয়া কোরো। এতদিন তুমি আমাকে যেমন আদরে স্থান দিয়েছ তোমার ঘরে, সেদিনও তেমনি করেই স্থান দিয়ো। ঋতুতে ঋতুতে তোমার যে-সব ফুল ফুটবে তেমনি করেই মনে মনে তুলে দিয়ো আমার হাতে। যদি নিষ্ঠুর হও তুমি, তা হলে তো এখানে আমি থাকতে পারব না। আমার বাগান যদি কেড়ে নাও তা হলে হাওয়ায় হাওয়ায় কোন্ শূন্যে আমি ভেসে বেড়াব?
নীরজার দুই চক্ষু দিয়ে জল ঝরে পড়তে লাগল। আদিত্য মোড়া ছেড়ে বিছানার উপর
উঠে বসল। নীরজার মুখ বুকে টেনে নিয়ে আস্তেআস্তে হাত বুলোতে লাগল তার মাথায়।
নীরজার দুই চক্ষু দিয়ে জল ঝরে পড়তে লাগল। আদিত্য মোড়া ছেড়ে বিছানার উপর
উঠে বসল। নীরজার মুখ বুকে টেনে নিয়ে আস্তেআস্তে হাত বুলোতে লাগল তার মাথায়।
আদিত্য।
নীরু, শরীর নষ্ট কোরো না।
নীরজা।
যাক গে আমার শরীর। আমি আর কিচ্ছু চাই নে, আমি কেবল তোমাকে চাই এই সমস্ত কিছু নিয়ে। শোনো একটা কথা বলি, রাগ কোরো না আমার উপর, রাগ কোরো না, (বলতে বলতে স্বর রুদ্ধ হয়ে এল। একটু শান্ত হয়ে--) সরলার উপর অন্যায় করেছি। তোমার পায়ে ধরে বলছি আর অন্যায় করব না। যা হয়েছে তার জন্যে আমাকে মাপ করো। কিন্তু আমাকে ভালোবাস তুমি, যা চাও আমি সব করব।
আদিত্য।
শরীরের সঙ্গে সঙ্গে মন ছিল অসুস্থ নীরু, তাই নিজেকে মিথ্যা পীড়ন করেছ।
নীরজা।
শোনো বলি। কাল রাত্রি থেকে বার বার পণ করেছি, এবার দেখা হলে নির্মল মনে ওকে বুকে টেনে নেব আপন বোনের মতো। তুমি আমাকে এই শেষ প্রতিজ্ঞা রক্ষায় সাহায্য করো। বলো, আমি তোমার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হব না। তা হলে সবাইকে আমার ভালোবাসা দিয়ে যেতে পারব।
এ কথার কোনো উত্তর না করে মুদে এল নীরজার চোখ।
খানিক বাদে নীরজা জিজ্ঞাসা করলে--
সরলা কবে খালাস পাবে সেই দিনই গুনছি। ভয় হয় পাছে তার আগে মরে যাই। পাছে বলে যেতে না পারি যে আমার মন একেবারে সাদা হয়ে গেছ। এইবার আলো জ্বালাও। আমাকে পড়ে শোনাও অক্ষয় বড়ালের "এষা'।
বালিশের নীচ থেকে বই বের করে দিলে। আদিত্য পড়ে শোনাতে লাগল।
শুনতে শুনতে যেই একটু ঘুম এসেছে আয়া ঘরে এসে বললে--
বালিশের নীচ থেকে বই বের করে দিলে। আদিত্য পড়ে শোনাতে লাগল।
শুনতে শুনতে যেই একটু ঘুম এসেছে আয়া ঘরে এসে বললে--
রোশনি।
চিঠি।
আদিত্যের হাতে প্রদান
আদিত্যের হাতে প্রদান
নীরজা।
ও কী, ও কার চিঠি?
আদিত্য।
(একটু চুপ করে থেকে) টেলিগ্রাম এসেছে!
নীরজা।
কিসের টেলিগ্রাম?
আদিত্য।
মেয়াদ শেষ হবার আগেই সরলা ছাড়া পেয়েছে।
নীরজা।
ছাড়া পেয়েছে? দেখি। (টেলিগ্রাম হাতে নিয়ে) তা হলে তো আর দেরি নেই। এখনি আসবে। ওকে নিশ্চয় এনো আমার কাছে। (বলতে বলতে মূর্ছার উপক্রম)
আদিত্য।
ও কী! কী হল নীরু! নার্স, ডাক্তার আছেন?
নেপথ্য হতে
নেপথ্য হতে
নার্স।
আছেন বাইরের ঘরে।
আদিত্য।
এখনি নিয়ে এসো, এই যে ডাক্তার।
ডাক্তারের প্রবেশ
এইমাত্র বেশ সহজ শরীরে কথা বলছিল, বলতে বলতে অজ্ঞান হয়ে গেল।
ডাক্তার নীরজার নাড়ী দেখে চুপ করে রইল। কিছুক্ষণ পরে রোগী
চোখ মেলেই বললে--
ডাক্তার নীরজার নাড়ী দেখে চুপ করে রইল। কিছুক্ষণ পরে রোগী
চোখ মেলেই বললে--
নীরজা।
ডাক্তার, আমাকে বাঁচাতেই হবে। সরলাকে না দেখে যেতে পারব না, ভালো হবে না তাতে। আশীর্বাদ করব তাকে। শেষ আশীর্বাদ।
আবার এল চোখ বুজে, হাতের মুঠো শক্ত হল, বলে উঠল--
ঠাকুরপো, কথা রাখব, কৃপণের মতো মরব না।
এক-একবার চেতনা ক্ষীণ হয়ে জগৎ ঝাপসা হয়ে আসছে, আবার নিবু-নিবু
প্রদীপের মতো জীবন-শিখা উঠছে জ্বলে। স্বামীকে থেকে থেকে জিজ্ঞাসা করছে--
কখন আসবে সরলা?
(থেকে থেকে ডেকে ওঠে) রোশনি।
রোশনি।
কী খোঁখী?
নীরজা।
ঠাকুরপোকে ডেকে দে এক্ষুনি।
(এক-একবার আপনি বলে ওঠে--) কী হবে আমার, ঠাকুরপো! দেব দেব দেব, সব দেব।
ভৃত্যের প্রবেশ
ভৃত্যের প্রবেশ
ভৃত্য।
(আদিত্যের কানে কানে) সরলা দিদিমণি এসেছেন।
আদিত্যের প্রস্থান ও সরলাকে নিয়ে প্রবেশ
নীরজার কানের কাছে মাথা নামিয়ে
আদিত্যের প্রস্থান ও সরলাকে নিয়ে প্রবেশ
নীরজার কানের কাছে মাথা নামিয়ে
আদিত্য।
সরলা এসেছে।
নীরজা।
(চোখ ঈষৎ মেলে আদিত্যকে) তুমি যাও।
আদিত্য ও ডাক্তারের প্রস্থান। নীরজা একবার ডেকে উঠল--
ঠাকুরপো।
সব নিস্তব্ধ
সরলা এসে প্রণাম করবার জন্য পায়ে হাত দিতেই যেন বিদ্যুতের আঘাতে ওর
সমস্ত শরীর আক্ষিপ্ত হয়ে উঠল। পা দ্রুত আপনি গেল সরে। ভাঙা গলায়--
পারলুম না, পারলুম না, দিতে পারব না, পারব না।
বলতে বলতে অস্বাভাবিক জোর এল দেহে, চোখের তারা প্রসারিত হয়ে জ্বলতে লাগল। চেপে ধরলে সরলার হাত, তীক্ষ্ণ কণ্ঠে--
জায়গা হবে না তোর রাক্ষসী, জায়গা হবে না। আমি থাকব, থাকব, থাকব।
হঠাৎ ঢিলে সেমিজ-পরা পাংশুবর্ণ শীর্ণ মূর্তি বিছানা ছেড়ে খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে উঠল। অদ্ভুত গলায়--
পালা, পালা, পালা এখনি, নইলে দিনে দিনে শেল বিঁধব তোর বুকে--শুকিয়ে ফেলব তোর রক্ত।
বলেই পড়ে গেল মেঝের উপর। ছুটে আদিত্যের ঘরে প্রবেশ--
নীরজার মৃত্যু
বলেই পড়ে গেল মেঝের উপর। ছুটে আদিত্যের ঘরে প্রবেশ--
নীরজার মৃত্যু