ওগো আমার প্রাণের কর্ণধার,

দিকে দিকে ঢেউ জাগালো

লীলার পারাবার।

আলোক-ছায়া চমকিছে

ক্ষণেক আগে ক্ষণেক পিছে,

অমার আঁধার ঘাটে ভাসায়

নৌকা পূর্ণিমার।

ওগো কর্ণধার

ডাইনে বাঁয়ে দ্বন্দ্ব লাগে

সত্যের মিথ্যার।

ওগো আমার লীলার কর্ণধার,

জীবন-তরী মৃত্যুভাঁটায়

কোথায় কর পার।

নীল আকাশের মৌনখানি

আনে দূরের দৈববাণী,

গান করে দিন উদ্দেশহীন

অকূল শূন্যতার।

তুমি ওগো লীলার কর্ণধার

রক্তে বাজাও রহস্যময়

মন্ত্রের ঝংকার।

তাকায় যখন নিমেষহারা

দিনশেষের প্রথমতারা

ছায়াঘন কুঞ্জবনে

মন্দ মৃদু গুঞ্জরণে

বাতাসেতে জাল বুনে দেয়

মদির তন্দ্রার।

স্বপ্নস্রোতে লীলার কর্ণধার

গোধূলিতে পাল তুলে দাও

ধূসরচ্ছন্দার।

অস্তরবির ছায়ার সাথে

লুকিয়ে আঁধার আসন পাতে।

ঝিল্লিরবে গগন কাঁপে,

দিগঙ্গনা কী জপ জাপে,

হাওয়ায় লাগে মোহপরশ

রজনীগন্ধার।

হৃদয়-মাঝে লীলার কর্ণধার

একতারাতে বেহাগ বাজাও

বিধুর সন্ধ্যার।

রাতের শঙ্খকুহর ব্যেপে

গম্ভীর রব উঠে কেঁপে।

সঙ্গবিহীন চিরন্তনের

বিরহগান বিরাট মনের

শূন্যে করে নিঃশবদের

বিষাদ বিস্তার।

তুমি আমার লীলার কর্ণধার

তারার ফেনা ফেনিয়ে তোল

আকাশগঙ্গার।

বক্ষে যবে বাজে মরণভেরি

ঘুচিয়ে ত্বরা ঘুচিয়ে সকল দেরি,

প্রাণের সীমা মৃত্যুসীমায়

সূক্ষ্ম হয়ে মিলায়ে যায়,

ঊর্ধ্বে তখন পাল তুলে দাও

অন্তিম যাত্রার।

ব্যক্ত কর, হে মোর কর্ণধার,

আঁধারবিহীন অচিন্ত্য সে

অসীম অন্ধকার।