ওগো পসারিনী, দেখি আয়

কী রয়েছে তব পসরায়।

এত ভার মরি মরি কেমনে রয়েছ ধরি

কোমল করুণ ক্লান্তকায়!

কোথা কোন্‌ রাজপুরে যাবে আরো কত দূরে

কিসের দুরূহ দুরাশায়!

সম্মুখে দেখো তো চাহি পথের যে সীমা নাহি,

তপ্ত বালু অগ্নিবাণ হানে।

পসারিনী, কথা রাখো-- দূর পথে যেয়ো নাকো

ক্ষণেক দাঁড়াও এইখানে।

হেথা দেখো শাখা-ঢাকা বাঁধা বটতল--

কূলে কূলে ভরা দিঘি, কাকচক্ষু জল।

ঢালু পাড়ি চারি পাশে কচি কচি কাঁচা ঘাসে

ঘনশ্যাম চিকনকোমল।

পাষাণের ঘাটখানি, কেহ নাই জনপ্রাণী,

আম্রবন নিবিড় শীতল।

থাক্‌ তব বিকি-কিনি-- ওগো শ্রান্ত পসারিনী,

এইখানে বিছাও অঞ্চল।

ব্যথিত চরণ দুটি ধুয়ে নিবে জলে,

বনফুলে মালা গাঁথি পরি নিবে গলে।

আম্রমঞ্জরীর গন্ধ বহি আনি মৃদুমন্দ

বায়ু তব উড়াবে অলক--

ঘুঘু-ডাকে ঝিল্লিরবে কী মন্ত্র শ্রবণে কবে,

মুদে যাবে চোখের পলক।

পসরা নামায়ে ভূমে যদি ঢুলে পড় ঘুমে,

অঙ্গে লাগে সুখালসঘোর--

যদি ভুলে তন্দ্রাভরে ঘোমটা খসিয়া পড়ে,

তাহে কোনো শঙ্কা নাহি তোর।

যদি সন্ধ্যা হয়ে আসে, সূর্য যায় পাটে,

পথ নাহি দেখা যায় জনশূন্য মাঠে--

নাই গেলে বহু দূরে, বিদেশের রাজপুরে,

নাই গেলে রতনের হাটে।

কিছু না করিয়ো ডর, কাছে আছে মোর ঘর,

পথ দেখাইয়া যাব আগে।

শশীহীন অন্ধ রাত, ধরিয়ো আমার হাত

যদি মনে বড়ো ভয় লাগে।

শয্যা শুভ্রফেননিভ স্বহস্তে পাতিয়া দিব,

গৃহকোণে দীপ দিব জ্বালি--

দুগ্ধদোহনের রবে কোকিল জাগিবে যবে

আপনি জাগায়ে দিব কালি।

ওগো পসারিনী,

মধ্যদিনে রুদ্ধ ঘরে সবাই বিশ্রাম করে,

দগ্ধ পথে উড়ে তপ্ত বালি--

দাঁড়াও, যেয়ো না আর, নামাও পসরাভার,

মোর হাতে দাও তব ডালি।