আজিকে তোমার মানসসরসে

কি শোভা হয়েছে, মা!

অরুণবরণ চরণপরশে

কমলকানন হরষে কেমন

ফুটিয়ে রয়েছে, মা!

নীরবে চরণে উথলে সরসী,

নীরবে কমল করে টলমল,

নীরবে বহিছে বায়।

মিলি কত রাগ মিলিয়ে রাগিণী

আকাশ হইতে করে গীতধ্বনি,

শুনিয়ে সে গীত অকাশ-পাতাল

হয়েছে অবশপ্রায়।

শুনিয়ে সে গীত হয়েছে মোহিত

শিলাময় হিমগিরি--

পাখীরা গিয়েছে গাহিতে ভুলিয়া,

সরসীর বুক উঠিছে ফুলিয়া,

ক্রমশঃ ফুটিয়া ফুটিয়া উঠিছে

তানলয় ধীরি ধীরি।

তুমি গো জননি, রয়েছ দাঁড়ায়ে

সে গীতধারার মাঝে,

বিমল জোছনা-ধারার মাঝারে

চাঁদটি যেমন সাজে।

দশ দিশে দিশে ফুটিয়া পড়েছে

বিমল দেহের জ্যোতি,

মালতীফুলের পরিমল-সম

শীতল মৃদুল অতি।

আলুলিত চুলে কুসুমের মালা,

সুকুমার করে মৃণালের বালা,

লীলাশতদল ধরি,

ফুলছাঁচে ঢালা কোমল শরীরে

ফুলের ভূষণ পরি।

দশ দিশি দিশি উঠে গীতধ্বনি,

দশ দিশি ফুটে দেহের জ্যোতি।

দশ দিশি ছুটে ফুলপরিমল

মধুর মৃদুল শীতল অতি।

নবদিবাকর ম্লানসুধাকর

চাহিয়া মুখের পানে,

জলদ-আসনে দেববালাগণ

মোহিত বীণার তানে।

আজিকে তোমার মানসসরসে

কি শোভা হয়েছে মা!

রূপের ছটায় আকাশ পাতাল

পূরিয়া রয়েছে মা!

যেদিকে তোমার পড়েছে জননি

সুহাস কমলনয়ন দুটি,

উঠেছে উজলি সেদিক অমনি,

সেদিকে পাপিয়া উঠিছে গাহিয়া,

সেদিকে কুসুম উঠিছে ফুটি!

এস মা আজিকে ভারতে তোমার,

পূজিব তোমার চরণ দুটি!

বহুদিন পরে ভারত-অধরে

সুখময় হাসি উঠুক ফুটি!

আজি কবিদের মানসে মানসে

পড়ুক তোমার হাসি,

হৃদয়ে হৃদয়ে উঠুক ফুটিয়া

ভকতিকমলরাশি!

নামিয়া ভারতীজননী-চরণে

সঁপিয়া ভকতিকুসুমমালা,

দশ দিশি দিশি প্রতিধ্বনি তুলি

হুলুধ্বনি দিক দিকের বালা!

চরণকমলে অমল কমল

আঁচল ভরিয়া ঢালিয়া দিক!

শত শত হৃদে তব বীণাধ্বনি

জাগায়ে তুলুক শত প্রতিধ্বনি,

সে ধ্বনি শুনিবে কবির হৃদয়ে

ফুটিয়া উঠিবে শতেক কুসুম

গাহিয়া উঠিবে শতেক পিক!