কে তুই লো হরহৃদি অলো করি দাঁড়ায়ে,

ভিখারীর সর্ব্বত্যাগী বুকখানি মাড়ায়ে?

নাই হোথা সুখ-আশা, বিষয়ের কামনা,

নাই হোথা সংসারের-- পৃথিবীর ভাবনা!

আছে শুধু এই রূপে বুকখানি ভরিয়ে--

আছে শুধু ওই রূপে মনে মন মরিয়ে।

বুকের জলন্ত শিরে রক্তরাশি নাচায়ে,

পাষাণ পরাণখানি এখনও বাঁচায়ে,

নাচিছে হৃদয়মাঝে জ্যোতির্ন্ময়ী কামিনী,

শোণিততরঙ্গে ছুটে প্রস্ফুরিত দামিনী।

ঘুমায়েছে মনখানা, ঘুমায়েছে প্রাণ গো,

এক স্বপ্নে ভরা শুধু হৃদয়ের স্থান গো!

জগতে থাকিয়া আমি থাকি তার বাহিরে,

জগৎ বিদ্রপছলে পাগল ভিখারী বলে--

তাই আমি চাই হতে, আর কিবা চাহি রে!

ভিখারী করিব ভিক্ষা বাঘাম্বর পরিয়ে,

বিমোহন রূপখানি হৃদিমাঝে ধরিয়ে।

...

একদা প্রলয়শিঙ্গা বাজিয়া রে উঠিবে!

অমনি নিভিবে রবি, অমনি মিশাবে তারা,

অমনি এ জগতের রাশরজ্জু টুটিবে।

আলোকসর্ব্বম্ব হারা, অন্ধ যত গ্রহ তারা।

দারুণ উন্মাদ হয়ে মহাশূন্যে ছুটিবে!

ঘুম হ'তে জাগি উঠি রক্ত আঁখি মেলিয়া

প্রলয়, জগৎ লয়ে বেড়াইবে খেলিয়া।

প্রলয়ের তালে তালে ওই বামা নাচিবে,

প্রলয়ের তালে তালে এই হৃদি বাজিবে!

আঁধারকুন্তল তোর মহাশূন্য জুড়িয়া

প্রলয়ের কালঝড়ে বোড়াইবে উড়িয়া!

অন্ধকারে দিশাহারা কম্পমান গ্রহ তারা

চররের তলে আসি পড়িবেক গুঁড়ায়ে,

দিবি সেই বিশ্বচূর্ণ নিঃশ্বাসেতে উড়ায়ে!

এমনি রহিব স্তব্ধ ওই মুখে চাহিয়া--

দেখিব হৃদয়মাঝে কেমনে ও বামা নাচে

উন্মাদিনী, প্রলয়ের ঘোর গীতি গাহিয়া!

জগতের হাহাকার যবে স্তব্ধ হইবে--

ঘোর স্তব্ধ, মহাস্তব্ধ, মহাশূন্য রহিবে,

আঁধারের সিন্দুরবে অনন্তেরে গ্রাসিয়া--

সে মহান্‌ জলধির নাই ঊর্ম্মি, নাই তীর--

সেই স্তব্ধ সিন্ধু ব্যাপি রব আমি ভাসিয়া!

তখনো র'বি কি তুই এই বুকে দাঁড়ায়ে,

ভাবনাবাসনাহীন এই বুক মাড়ায়ে?