কোথা তুমি গেলে যে মোটরে

শহরের গলির কোটরে,

এক্‌জামিনেশনের তাড়া।

কেতাবের 'পরে ঝুঁকে থাকো,

বেণীর ডগাও দেখি নাকো,

দিনে রাতে পাই নে যে সাড়া।

আমার চায়ের সভা শূন্য,

মনটা নিরতিশয় ক্ষুণ্ন,

সুমুখে নফর বনমালী।

"সুমুখ' তাহারে বলা মিছে,

মুখ দেখে মন যায় খিঁচে,

বিনাদোষে দিই তারে গালি।

ভোজন ওজনে অতি কম--

নাই রুটি, নাই আলুদম,

নাই রুইমাছের কালিয়া।

জঠর ভরাই শুধু দিয়ে

দু-পেয়ালা Chinese tea-য়ে

আধসের দুগ্ধ ঢালিয়া।

উদাস হৃদয়ে খাই একা

টিনের মাখন দিয়ে সেঁকা

রুটি-তোস্‌ শুধু খান-তিন।

গোটা-দুই কলা খাই গুনে,

তারই সাথে বিলিতি-বেগুনে

কিছু পাওয়া যায় ভিটামিন।

মাঝে মাঝে পাই পুলিপিঠে,

পার করে দিই দু চারিটে

খেজুরগুড়ের সাথে মেখে।

পিরিচে পেড়াকি যবে আনে

আড়চোখে চেয়ে তার পানে

"পরে খাব' বলে দিই রেখে।

তারপর দুপুর অবধি

না ক্ষীর, না ছানা সর দধি,

ছুঁই নেকো কোফতা কাবাব।

নিজের এ দশা ভেবে ভেবে

বুক যায় সাত হাত নেবে,

কারে বা জানাই মনোভাব।

করছি নে exaggerate--

কিছু আছে সত্য নিরেট,

কবিত্ব সেও অল্প না।

বিরহ যে বুকে ব্যথা দাগে

সাজিয়ে বলতে গেলে লাগে

পনেরো-আনাই কল্পনা।

অতএব এই চিঠি-পাঠে

পরান তোমার যদি ফাটে

খুব বেশি রবে না প্রমাণ।

চিঠির জবাব দেব যবে

ভাষা ভরে দিয়ো হাহারবে

কবি-নাতনির রেখো মান।

পুনশ্চ

বাড়িয়ে বলাটা ভালো নয়

যদি কোনো নীতিবাদী কয়

কোস্‌ তারে, "অতিশয় উক্তি--

মসলার যোগে যথা রান্না,

আবদারে ছল ক'রে কান্না,

নাকিসুর-যোগে যথা যুক্তি।

ঝুমকোর ফুল ফোটে ডালে,

চোরেও চায় না কোনোকালে,

কানে ঝুমকোর ফুল দামি।

কৃত্রিম জিনিসেরই দাম,

কৃত্রিম উপাধিতে নাম,

জমকালো করেছি তো আমি।"

অতএব মনে রেখো দড়ো,

এ চিঠির দাম খুব বড়ো,

যে-হেতুক বাড়িয়ে বলায়

বাজারে তুলনা এর নেই--

কেবলই বানানো বচনেই

ভরা এ যে ছলায় কলায়।

পাল্লা যে দিবি মোর সাথে

সে ক্ষমতা নেই তোর হাতে,

তবুও বলিস প্রাণপণ

বাড়িয়ে বাড়িয়ে মিঠে কথা--

ভুলিবে, হবে না অন্যথা,

দাদামশায়ের বোকা মন।

যা হোক, এ কথা চাই শোনা,

তাড়াতাড়ি ছন্দে লিখো না,

না-হয় না হলে কবিবর--

অনুকরণের শরাহত

আছি আমি ভীষ্মের মতো,

তাহে তুমি বাড়িয়ো না স্বর।

যে ভাষায় কথা কয়ে থাকো

আদর্শ তারে বলে নাকো,

আমার পক্ষে সে তো ঢের--

করিতে যদি পার

গ্রাম্যতাদোষ যত তারো

একটু পাব না আমি টের।