কোথা রে তরুর ছায়া, বনের শ্যামল স্নেহ।

তট-তরু কোলে কোলে সারাদিন কলরোলে

স্রোতস্বিনী যায় চলে সুদূরে সাধের গেহ;

কোথা রে তরুর ছায়া বনের শ্যামল স্নেহ,

কোথা রে সুনীল দিশে বনান্ত রয়েছে মিশে

অনন্তের অনিমিষে নয়ন নিমেষ-হারা।

দূর হতে বায়ু এসে চলে যায় দূর-দেশে,

গীত-গান যায় ভেসে, কোন্‌ দেশে যায় তারা।

হাসি, বাঁশি, পরিহাস, বিমল সুখের শ্বাস,

মেলামেশা বারো মাস নদীর শ্যামল তীরে;

কেহ খেলে, কেহ দোলে, ঘুমায় ছায়ার কোলে,

বেলা শুধু যায় চলে কুলুকুলু নদীনীরে।

বকুল কুড়োয় কেহ, কেহ গাঁথে মালাখানি;

ছায়াতে ছায়ার প্রায় বসে বসে গান গায়,

করিতেছে কে কোথায় চুপিচুপি কানাকানি।

খুলে গেছে চুলগুলি, বাঁধিতে গিয়েছে ভুলি,

আঙুলে ধরেছে তুলি আঁখি,পাছে ঢেকে যায়,

কাঁকন খসিয়া গেছে, খুঁজিছে গাছের ছায়।

বনের মর্মের মাঝে বিজনে বাঁশরি বাজে,

তারি সুরে মাঝে মাঝে ঘুঘু দুটি গান গায়।

ঝুরু ঝুরু কত পাতা গাহিছে বনের গাথা,

কত না মনের কথা তারি সাথে মিশে যায়।

লতাপাতা কত শত খেলে কাঁপে কত মতো

ছোটো ছোটো আলোছায়া ঝিকিমিকি বন ছেয়ে,

তারি সাথে তারি মতো খেলে কত ছেলেমেয়ে।

কোথায় সে গুন গুন ঝরঝর মরমর,

কোথা সে মাথার 'পরে লতাপাতা থরথর।

কোথায় সে ছায়া আলো, ছেলেমেয়ে খেলাধূলি,

কোথা সে ফুলের মাঝে এলোচুলে হাসিগুলি।

কোথা রে সরল প্রাণ, গভীর আনন্দ-গান,

অসীম শান্তির মাঝে প্রাণের সাধের গেহ,

তরুর শীতল ছায়া, বনের শ্যামল স্নেহ।