অচলায়তন

মহাপঞ্চক, তৃণাঞ্জন, সঞ্জীব, বিশ্বম্ভর, জয়োত্তম

অচলায়তন

মহাপঞ্চক, তৃণাঞ্জন, সঞ্জীব, বিশ্বম্ভর, জয়োত্তম

মহাপঞ্চক।

তোমরা অত ব্যস্ত হয়ে পড়ছ কেন। কোনো ভয় নেই।

তৃণাঞ্জন।

তুমি তো বলছ ভয় নেই, এই যে খবর এল শত্রুসৈন্য অচলায়তনের প্রাচীর ফুটো করে দিয়েছে।

মহাপঞ্চক।

এ- কথা বিশ্বাসযোগ্য নয়। শিলা জলে ভাসে! ম্লেচ্ছরা অচলায়তনের প্রাচীর ফুটো করে দেবে! পাগল হয়েছ!

সঞ্জীব।

কে যে বললে দেখে এসেছে।

মহাপঞ্চক।

সে স্বপ্ন দেখেছে।

জয়োত্তম।

আজই তো আমাদের গুরুর আসবার কথা।

মহাপঞ্চক।

তাঁর জন্যে সমস্ত আয়োজন ঠিক হয়ে গেছে; কেবল যে- ছেলের মা-বাপ ভাই-বোন কেউ মরে নি এমন নবম গর্ভের সন্তান এখনও জুটিয়ে আনতে পারলে না-- দ্বারে দাঁড়িয়ে কে যে মহারক্ষা পড়বে ঠিক করতে পারছি নে।

সঞ্জীব।

গুরু এলে তাঁকে চিনে নেবে কে। আচার্য অদীনপুণ্য তাঁকে জানতেন। আমরা তো কেউ তাঁকে দেখি নি।

মহাপঞ্চক।

আমাদের আয়তনে যে শাঁক বাজায় সেই বৃদ্ধ তাঁকে দেখেছে। আমাদের পূজার ফুল যে যোগায় সেও তাঁকে জানে।

বিশ্বম্ভর।

ওই-যে উপাধ্যায় ব্যস্ত হয়ে ছুটে আসছেন।

মহাপঞ্চক।

নিশ্চয় গুরু আসবার সংবাদ পেয়েছেন। কিন্তু মহারক্ষা-পাঠের কী করা যায়! ঠিক লক্ষণসম্পন্ন ছেলে তো পাওয়া গেল না।

উপাধ্যায়ের প্রবেশ

উপাধ্যায়ের প্রবেশ

মহাপঞ্চক।

কতদূর।

উপাধ্যায়।

কতদূর কী। এসে পড়েছে যে।

মহাপঞ্চক।

কই দ্বারে তো এখনও শাঁক বাজালে না।

উপাধ্যায়।

বিশেষ দরকার দেখি নে-- কারণ দ্বারের চিহ্নও দেখতে পাচ্ছি নে-- ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে।

মহাপঞ্চক।

বল কী! দ্বার ভেঙেছে?

উপাধ্যায়।

শুধু দ্বার নয়, প্রাচীরগুলোকে এমনি সমান করে শুইয়ে দিয়েছে যে তাদের সম্বন্ধে আর কোনো চিন্তা করবার দরকার নেই।

মহাপঞ্চক।

কিন্তু আমাদের দৈবজ্ঞ যে গণনা করে স্পষ্ট দেখিয়ে দিয়ে গেল যে--

উপাধ্যায়।

তার চেয়ে ঢের স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে শত্রুসৈন্যদের রক্তবর্ণ টুপিগুলো।

ছাত্রগণ।

কী সর্বনাশ!

সঞ্জীব।

কিসের মন্ত্র তোমার মহাপঞ্চক!

তৃণাঞ্জন।

আমি তো তখনই বলেছিলুম এ-সব কাজ এই কাঁচাবয়সের পুঁথিপড়া অকালপক্কদের দিয়ে হবার নয়।

বিশ্বম্ভর।

কিন্তু এখন করা যায় কী?

তৃণাঞ্জন।

আমাদের আচার্যদেবকে এখনই ফিরিয়ে আনি গে। তিনি থাকলে এ বিপত্তি ঘটতেই পারত না। হাজার হোক লোকটা পাকা।

সঞ্জীব।

কিন্তু দেখো মহাপঞ্চক, আমাদের আয়তনের যদি কোনো বিপত্তি ঘটে তা হলে তোমাকে টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলব।

উপাধ্যায়।

সে- পরিশ্রমটা তোমাদের করতে হবে না, উপযুক্ত লোক আসছে।

মহাপঞ্চক।

তোমরা মিথ্যা বিচলিত হচ্ছ। বাইরের প্রাচীর ভাঙতে পারে, কিন্তু ভিতরের লোহার দরজা বন্ধ আছে। সে যখন ভাঙবে তখন চন্দ্রসূর্য নিবে যাবে। আমি অভয় দিচ্ছি তোমরা স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে অচলায়তনের রক্ষক-দেবতার আশ্চর্য শক্তি দেখে নাও।

উপাধ্যায়।

তার চেয়ে দেখি কোন্‌ দিক দিয়ে বেরোবার রাস্তা।

তৃণাঞ্জন।

আমাদেরও তো সেই ইচ্ছা। কিন্তু এখান থেকে বেরোবার পথ যে জানিই নে। কোনোদিন বেরোতে হবে বলে স্বপ্নেও মনে করি নি।

সঞ্জীব।

শুনছ-- ওই শুনছ, ভেঙে পড়ল সব।

ছাত্রগণ।

কী হবে আমাদের। নিশ্চয় দরজা ভেঙেছে।

তৃণাঞ্জন।

ধরো মহাপঞ্চককে। বাঁধো ওকে। একজটা দেবীর কাছে ওকে বলি দেবে চলো।

মহাপঞ্চক।

সেই কথাই ভালো। দেবীর কাছে আমাকে বলি দেবে চলো। তাঁর রোষ শান্তি হবে। এমন নিষ্পাপ বলি তিনি আর পাবেন কোথায়।

বালকদলের প্রবেশ

বালকদলের প্রবেশ

উপাধ্যায়।

কী রে তোরা সব নৃত্য করছিস কেন?

প্রথম বালক।

আজ এ কী মজা হল!

উপাধ্যায়।

মজাটা কী রকম শুনি?

দ্বিতীয় বালক।

আজ চার দিক থেকেই আলো আসছে-- সব যেন ফাঁক হয়ে গেছে।

তৃতীয় বালক।

এত আলো তো আমরা কোনোদিন দেখি নি।

প্রথম বালক।

কোথাকার পাখির ডাক এখান থেকেই শোনা যাচ্ছে।

দ্বিতীয় বালক।

এ-সব পাখির ডাক আমরা তো কোনোদিন শুনি নি। এ তো আমাদের খাঁচার ময়নার মতো একেবারেই নয়।

প্রথম বালক।

আজ আমাদের খুব ছুটতে ইচ্ছে করছে। তাতে কি দোষ হবে মহাপঞ্চকদাদা।

মহাপঞ্চক।

আজকের কথা ঠিক বলতে পারছি নে

আজ কোনো নিয়ম রক্ষা করা চলবে বলে বোধ হচ্ছে না।

প্রথম বালক।

আজ তা হলে আমাদের ষড়াসন বন্ধ?

মহাপঞ্চক।

হাঁ বন্ধ।

সকলে।

ওরে কী মজা রে মজা!

দ্বিতীয় বালক।

আজ পংক্তিধৌতির দরকার নেই?

মহাপঞ্চক।

না।

সকলে।

ওরে কী মজা! আঃ আজ চারিদিকে কী আলো।

জয়োত্তম।

আমারও মনটা নেচে উঠেছে বিশ্বম্ভর। এ কি ভয়, না আনন্দ, কিছুই বুঝতে পারছি নে।

বিশ্বম্ভর।

আজ একটা অদ্ভুত কাণ্ড হচ্ছে জয়োত্তম।

সঞ্জীব।

কিন্তু ব্যাপারটা যে কী ভেবে উঠতে পারছি নে। ওরে ছেলেগুলো, তোরা হঠাৎ এত খুশি হয়ে উঠলি কেন বল্‌ দেখি।

প্রথম বালক।

দেখছ না সমস্ত আকাশটা যেন ঘরের মধ্যে দৌড়ে এসেছে।

দ্বিতীয় বালক।

মনে হচ্ছে ছুটি-- আমাদের ছুটি।

তৃতীয় বালক।

সকাল থেকে পঞ্চকদাদার সেই গানটা কেবলই আমরা গেয়ে বেড়াচ্ছি।

জয়োত্তম।

কোন্‌ গান?

প্রথম বালক।

সেই যে--

আলো, আমার আলো, ওগো

আলো ভুবনভরা।

আলো নয়ন-ধোওয়া আমার

আলো হৃদয়হরা।

নাচে আলো নাচে-- ও ভাই

আমার প্রাণের কাছে,

বাজে আলো বাজে-- ও ভাই

হৃদয়-বীণার মাঝে;

জাগে আকাশ ছোটে বাতাস

হাসে সকল ধরা।

আলো, আমার আলো, ওগো

আলো ভুবনভরা।

আলোর স্রোতে পাল তুলেছে

হাজার প্রজাপতি।

আলোর ঢেউয়ে উঠল নেচে

মল্লিকা মালতী।

মেঘে মেঘে সোনা-- ও ভাই

যায় না মানিক গোনা,

পাতায় পাতায় হাসি-- ও ভাই

পুলক রাশি রাশি,

সুরনদীর কূল ডুবেছে

সুধা-নিঝর-ঝরা।

আলো, আমার আলো, ওগো

আলো ভুবনভরা।

[ বালকদের প্রস্থান

[ বালকদের প্রস্থান

জয়োত্তম।

দেখো মহাপঞ্চকদাদা, আমার মনে হচ্ছে ভয় কিছুই নেই-- নইলে ছেলেদের মন এমন অকারণে খুশি হয়ে উঠল কেন।

মহাপঞ্চক।

ভয় নেই সে তো আমি বরাবর বলে আসছি।

শঙ্খবাদক ও মালীর প্রবেশ

শঙ্খবাদক ও মালীর প্রবেশ

উভয়ে।

গুরু আসছেন।

সকলে।

গুরু!

মহাপঞ্চক।

শুনলে তো। আমি নিশ্চয় জানতুম তোমার আশঙ্কা বৃথা।

সকলে।

ভয় নেই আর ভয় নেই।

তৃণাঞ্জন।

মহাপঞ্চক যখন আছেন তখন কি আমাদের ভয় থাকতে পারে।

সকলে।

জয় আচার্য মহাপঞ্চকের।

যোদ্ধৃবেশে দাদাঠাকুরের প্রবেশ

যোদ্ধৃবেশে দাদাঠাকুরের প্রবেশ

শঙ্খবাদক ও মালী।

(প্রণাম করিয়া) জয় গুরুজির জয়।

(সকলে স্তম্ভিত)

মহাপঞ্চক।

উপাধ্যায়, এই কি গুরু?

উপাধ্যায়।

তাই তো শুনছি।

মহাপঞ্চক।

তুমি কি আমাদের গুরু?

দাদাঠাকুর।

হাঁ। তুমি আমাকে চিনবে না, কিন্তু আমিই তোমাদের গুরু।

মহাপঞ্চক।

তুমি গুরু? তুমি আমাদের সমস্ত নিয়ম লঙ্ঘন করে এ কোন্‌ পথ দিয়ে এলে! তোমাকে কে মানবে?

দাদাঠাকুর।

আমাকে মানবে না জানি, কিন্তু আমিই তোমাদের গুরু।

মহাপঞ্চক।

তুমি গুরু? তবে এই শত্রুবেশে কেন?

দাদাঠাকুর।

এই তো আমার গুরুর বেশ। তুমি যে আমার সঙ্গে লড়াই করবে-- সেই লড়াই আমার গুরুর অভ্যর্থনা।

মহাপঞ্চক।

কেন তুমি আমাদের প্রাচীর ভেঙে দিয়ে এলে।

দাদাঠাকুর।

তুমি কোথাও তোমার গুরুর প্রবেশের পথ রাখ নি।

মহাপঞ্চক।

তুমি কি মনে করেছ তুমি অস্ত্র হাতে করে এসেছ বলে আমি তোমার কাছে হার মানব।

দাদাঠাকুর।

না, এখনই না। কিন্তু দিনে দিনে হার মানতে হবে, পদে পদে।

মহাপঞ্চক।

আমাকে নিরস্ত্র দেখে ভাবছ আমি তোমাকে আঘাত করতে পারি নে?

দাদাঠাকুর।

আঘাত করতে পার কিন্তু আহত করতে পার না-- আমি যে তোমার গুরু।

মহাপঞ্চক।

উপাধ্যায়, তোমরা এঁকে প্রণাম করবে নাকি?

উপাধ্যায়।

দয়া করে উনি যদি আমাদের প্রণাম গ্রহণ করেন তা হলে প্রণাম করব বই কি-- তা নইলে যে--

মহাপঞ্চক।

না, আমি তোমাকে প্রণাম করব না।

দাদাঠাকুর।

আমি তোমার প্রণাম গ্রহণ করব না-- আমি তোমাকে প্রণত করব।

মহাপঞ্চক।

তুমি আমাদের পূজা নিতে আস নি?

দাদাঠাকুর।

আমি তোমাদের পূজা নিতে আসি নি, অপমান নিতে এসেছি।

মহাপঞ্চক।

তোমার পশ্চাতে অস্ত্রধারী এ কারা?

দাদাঠাকুর।

এরা আমার অনুবর্তী-- এরা শোণপাংশু।

সকলে।

শোণপাংশু!

মহাপঞ্চক।

এরাই তোমার অনুবর্তী?

দাদাঠাকুর।

হাঁ।

মহাপঞ্চক।

এই মন্ত্রহীন কর্মকাণ্ডহীন ম্লেচ্ছদল!

দাদাঠাকুর।

এসো তো, তোমাদের মন্ত্র এদের শুনিয়ে দাও। এদের কর্মকাণ্ড কী রকম তাও ক্রমে দেখতে পাবে।

শোণপাংশুদের গান

যিনি সকল কাজের কাজি, মোরা

তাঁরি কাজের সঙ্গী।

যাঁর নানারঙের রঙ্গ, মোরা

তাঁরি রসের রঙ্গী।

তাঁরি বিপুল ছন্দে ছন্দে

মোরা যাই চলে আনন্দে,

তিনি যেমনি বাজান ভেরী, মোদের

তেমনি নাচের ভঙ্গি।

এই জন্মমরণ-খেলায়

মোরা মিলি তাঁরি মেলায়

এই দুখঃসুখের জীবন মোদের

তাঁরি খেলার অঙ্গী।

ওরে, ডাকেন তিনি যবে

তাঁর জলদমন্দ্র রবে

ছুটি পথের কাঁটা পায়ে দলে

সাগরগিরি লঙ্ঘি।

মহাপঞ্চক।

আমি এই আয়তনের আচার্য-- আমি তোমাকে আদেশ করছি তুমি এখন ওই ম্লেচ্ছদলকে সঙ্গে নিয়ে বাহির হয়ে যাও।

দাদাঠাকুর।

আমি যাকে আচার্য নিযুক্ত করব সেই আচার্য; আমি যা আদেশ করব সেই আদেশ।

মহাপঞ্চক।

উপাধ্যায়, আমরা এমন করে দাঁড়িয়ে থাকলে চলবে না। এসো আমরা এদের এখান থেকে বাহির করে দিয়ে আমাদের আয়তনের সমস্ত দরজাগুলো আবার একবার দ্বিগুণ দৃঢ় করে বন্ধ করি।

উপাধ্যায়।

এরাই আমাদের বাহির করে দেবে, সেই সম্ভাবনাটাই প্রবল বলে বোধ হচ্ছে!

প্রথম শোণপাংশু।

অচলায়তনের দরজার কথা বলছ-- সে আমরা আকাশের সঙ্গে দিব্যি সমান করে দিয়েছি।

উপাধ্যায়।

বেশ করেছ ভাই। আমাদের ভারি অসুবিধা হচ্ছিল। এত তালা-চাবির ভাবনাও ভাবতে হত।

মহাপঞ্চক।

পাথরের প্রাচীর তোমরা ভাঙতে পার, লোহার দরজা তোমরা খুলতে পার, কিন্তু আমি আমার ইন্দ্রিয়ের সমস্ত দ্বার রোধ করে এই বসলুম-- যদি প্রায়োপবেশনে মরি তবু তোমাদের হাওয়া তোমাদের আলো লেশমাত্র আমাকে স্পর্শ করতে দেব না।

প্রথম শোণপাংশু।

এ পাগলটা কোথাকার রে! এই তলোয়ারের ডগা দিয়ে ওর মাথার খুলিটা একটু ফাঁক করে দিলে ওর বুদ্ধিতে একটু হাওয়া লাগতে পারে।

মহাপঞ্চক।

কিসের ভয় দেখাও আমায়? তোমরা মেরে ফেলতে পার, তার বেশি ক্ষমতা তোমাদের নেই।

প্রথম শোণপাংশু।

ঠাকুর, এই লোকটাকে বন্দী করে নিয়ে যাই-- আমাদের দেশের লোকের ভারি মজা লাগবে।

দাদাঠাকুর।

ওকে বন্দী করবে তোমরা? এমন কী বন্ধন তোমাদের হাতে আছে।

দ্বিতীয় শোণপাংশু।

ওকে কি কোনো শাস্তিই দেব না।

দাদাঠাকুর।

শাস্তি দেবে! ওকে স্পর্শ করতেও পারবে না। ও আজ যেখানে বসেছে সেখানে তোমাদের তলোয়ার পৌঁছয় না।

বালকদলের প্রবেশ

বালকদলের প্রবেশ

সকলে।

তুমি আমাদের গুরু?

দাদাঠাকুর।

হাঁ, আমি তোমাদের গুরু।

সকলে।

আমরা প্রণাম করি।

দাদাঠাকুর।

বৎস, তোমরা মহাজীবন লাভ করো।

প্রথম বালক।

ঠাকুর, তুমি আমাদের কী করবে।

দাদাঠাকুর।

আমি তোমাদের সঙ্গে খেলব।

সকলে।

খেলবে!

দাদাঠাকুর।

নইলে তোমাদের গুরু হয়ে সুখ কিসের।

সকলে।

কোথায় খেলবে?

দাদাঠাকুর।

আমার খেলার মস্ত মাঠ আছে।

প্রথম বালক।

মস্ত। এই ঘরের মতো মস্ত?

দাদাঠাকুর।

এর চেয়ে অনেক বড়ো।

দ্বিতীয় বালক।

এর চেয়েও বড়ো? ওই আঙিনাটার মতো?

দাদাঠাকুর।

তার চেয়েও বড়ো।

দ্বিতীয় বালক।

তার চেয়েও বড়ো! উঃ কী ভয়ানক!

প্রথম বালক।

সেখানে খেলতে গেলে পাপ হবে না?

দাদাঠাকুর।

কিসের পাপ।

দ্বিতীয় বালক।

খোলা জায়গায় গেলে পাপ হয় না?

দাদাঠাকুর।

না বাছা, খোলা জায়গাতেই সব পাপ পালিয়ে যায়।

সকলে।

কখন নিয়ে যাবে।

দাদাঠাকুর।

এখানকার কাজ শেষ হলে।

জয়োত্তম।

(প্রণাম করিয়া) প্রভু, আমিও যাব।

বিশ্বম্ভর।

সঞ্জীব, আর দ্বিধা করলে কেবল সময় নষ্ট হবে। প্রভু, ওই বালকদের সঙ্গে আমাদেরও ডেকে নাও।

সঞ্জীব।

মহাপঞ্চকদাদা, তুমিও এসো না!

মহাপঞ্চক।

না, আমি না।

১৫ আষাঢ়, ১৩১৮ শিলাইদহ
1 | 2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7