নৃপবালা ও নীরবালা
অক্ষয়ের বাসা
নৃপবালা ও নীরবালা
নৃপবালা।
আজকাল তুই মাঝে মাঝে কেন অমন গম্ভীর হচ্ছিস বল্ তো নীরু।
নীরবালা।
আমাদের বাড়ির যত কিছু গাম্ভীর্য সব বুঝি তোর একলার? আমার খুশি আমি গম্ভীর হব।
নৃপবালা।
তুই কী ভাবছিস আমি বেশ জানি।
নীরবালা।
তোর অত আন্দাজ করবার দরকার কী ভাই। এখন তোর নিজের ভাবনা ভাববার সময় হয়েছে।
নৃপবালা।
(নীরর গলা জড়াইয়া) তুই ভাবছিস, মাগো মা, আমরা কী জঞ্জাল-- আমাদের বিদায় করে দিতেও এত ভাবনা এত ঝঞ্ঝাট।
নীরবালা।
তা, আমরা তো ভাই, ফেলে দেবার জিনিস নয় যে অমনি ছেড়ে দিলেই হল। আমাদের জন্যে যে এতটা হাঙ্গামা হচ্ছে সে তো গৌরবের কথা। কুমারসম্ভবে তো পড়েছিস গৌরীর বিয়ের জন্য একটি আস্ত দেবতা পুড়ে ছাই হয়ে গেল। যদি কোনো কবির কানে ওঠে তা হলে আমাদের বিবাহের একটা বর্ণনা বেরিয়ে যাবে।
নৃপবালা।
না ভাই, আমার ভারি লজ্জা করছে।
নীরবালা।
আর, আমার বুঝি লজ্জা করছে না? আমি বুঝি বেহায়া? কিন্তু কী করবি বল্। ইস্কুলে যেদিন প্রাইজ নিতে গিয়েছিলুম লজ্জা করেছিল, আবার তার পরবছরেও প্রাইজ নেবার জন্যে রাত জেগে পড়া মুখস্থ করেছিলেম। লজ্জাও করে, প্রাইজও ছাড়ি নে, আমার এই স্বভাব।
নৃপবালা।
আচ্ছা নীরু, এবারে যে প্রাইজটার কথা চলছে সেটার জন্যে তুই কি খুব ব্যস্ত হয়েছিস।
নীরবালা।
কোন্টা বল্ দেখি। চিরকুমার-সভার দুটো সভ্য?
নৃপবালা।
যেই হোক-না কেন, তুই তো বুঝতে পারছিস।
নীরবালা।
তা ভাই সত্যি কথা বলব? (নৃপর গলা জড়াইয়া কানে কানে) শুনেছি কুমার-সভার দুটি সভ্যের মধ্যে খুব ভাব, আমরা যদি দুজনে দুই বন্ধুর হাতে পড়ি তা হলে বিয়ে হয়েও আমাদের ছাড়াছাড়ি হবে না-- নইলে আমরা কে কোথায় চলে যাব তার ঠিক নেই। তাই তো সেই যুগল দেবতার জন্যে এত পূজার আয়োজন করছি ভাই। জোড়হস্তে মনে মনে বলছি, হে কুমার-সভার অশ্বিনীকুমারযুগল, আমাদের দুটি বোনকে এক বোঁটার দুই ফুলের মতো তোমরা একসঙ্গে গ্রহণ করো।
বিরহসম্ভাবনার উল্লেখমাত্রে দুই ভগিনী পরস্পরকে জড়াইয়া ধরিল
এবং নৃপ কোনোমতে চোখের জল সামলাইতে পারিল না
বিরহসম্ভাবনার উল্লেখমাত্রে দুই ভগিনী পরস্পরকে জড়াইয়া ধরিল
এবং নৃপ কোনোমতে চোখের জল সামলাইতে পারিল না
নৃপবালা।
আচ্ছা নীরু, মেজদিদিকে কেমন করে ছেড়ে যাবি বল্ দেখি। আমরা দুজনে গেলে ওঁর আর কে থাকবে।
নীরবালা।
সে কথা অনেক ভেবেছি। থাকতে যদি দেন তা হলে কি ছেড়ে যাই। ভাই, ওঁর তো স্বামী নেই, আমাদেরও নাহয় স্বামী না রইল। মেজদিদির চেয়ে বেশি সুখে আমাদের দরকার কী।
পুরুষবেশধারিণী শৈলবালার প্রবেশ
পুরুষবেশধারিণী শৈলবালার প্রবেশ
নীরবালা।
(টেবিলের উপরিস্থিত থালা হইতে একটি ফুলের মালা তুলিয়া লইয়া শৈলবালার গলায় পরাইয়া) আমরা দুই স্বয়ম্বরা তোমাকে আমাদের পতিরূপে বরণ করলুম।
শৈলবালাকে প্রণাম করিল
শৈলবালাকে প্রণাম করিল
শৈলবালা।
ও আবার কী।
নীরবালা।
ভয় নেই ভাই, আমরা দুই সতিনে তোমাকে নিয়ে ঝগড়া করব না। যদি করি মেজদিদি আমার সঙ্গে পারবে না-- আমি একলাই মিটিয়ে নিতে পারব, তোমাকে কষ্ট পেতে হবে না। না, সত্যি বলছি মেজদিদি, তোমার কাছে আমরা যেমন আদরে আছি এমন আদর কি আর কোথাও পাব। কেন তবে আমাদের পরের গলায় দিতে চাস।
নৃপর দুই চক্ষু বাহিয়া ঝর্ ঝর্ করিয়া জল পড়িতে লাগিল
নৃপর দুই চক্ষু বাহিয়া ঝর্ ঝর্ করিয়া জল পড়িতে লাগিল
শৈলবালা।
(তাহার চোখ মুছিয়া দিয়া) ও কী ও নৃপ, ছি। তোদের কিসে সুখ তা কি তোরা জানিস। আমাকে নিয়ে যদি তোদের জীবন সার্থক হত তা হলে কি আমি আর-কারো হাতে তোদের দিতে পারতুম।
রসিকের প্রবেশ
রসিকের প্রবেশ
রসিক।
ভাই, আমার মতো অসভ্যটাকে তোরা সভ্য করলি-- আজ তো সভা এখানে বসবে, কিরকম করে চলব শিখিয়ে দে।
নীরবালা।
ফের পুরোনো ঠাট্টা? তোমার ঐ সভ্য-অসভ্যর কথাটা এই পরশু থেকে বলছ।
রসিক।
যাকে জন্ম দেওয়া যায় তার প্রতি মমতা হয় না? ঠাট্টা একবার মুখ থেকে বের হলেই কি রাজপুতের কন্যার মতো তাকে গলা টিপে মেরে ফেলতে হবে। হয়েছে কী, যতদিন চিরকুমার-সভা টিঁকে থাকবে এই ঠাট্টা তোদের দু বেলা শুনতে হবে।
নীরবালা।
তবে ওটাকে তো একটু সকাল-সকাল সেরে ফেলতে হচ্ছে। মেজদিদি ভাই, আর দয়ামায়া নয়-- রসিকদাদার রসিকতাকে পুরোনো হতে দেব না, চিরকুমার-সভার চিরত্ব আমরা অচিরে ঘুচিয়ে দেব। তবেই তো আমাদের বিশ্ববিজয়িনী নারী নাম সার্থক হবে। কিরকম করে আক্রমণ করতে হবে একটা কিছু প্ল্যান ঠাউরেছিস?
শৈলবালা।
কিছুই না। ক্ষেত্রে উপস্থিত হয়ে যখন যেরকম মাথায় আসে।
নীরবালা।
আমাকে যখন দরকার হবে রণভেরী ধ্বনিত করলেই আমি হাজির হব। "আমি কি ডরাই সখী কুমার-সভারে। নাহি কি বল এ ভুজমৃণালে?'
অক্ষয়ের প্রবেশ
অক্ষয়ের প্রবেশ
অক্ষয়।
অদ্যকার সভায় বিদুষীমণ্ডলীকে একটি ঐতিহাসিক প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছা করি।
শৈলবালা।
প্রস্তুত আছি।
অক্ষয়।
বলো দেখি যে দুটি ডালে দাঁড়িয়েছিলেন সেই দুটি ডাল কাটতে চেয়েছিলেন কে।
নৃপবালা।
আমি জানি মুখুজ্জেমশায়, কালিদাস।
অক্ষয়।
না, আরো একজন বড়োলোক। শ্রীঅক্ষয়কুমার মুখোপাধ্যায়।
নীরবালা।
ডাল দুটি কে।
অক্ষয়।
(বামে নীরকে টানিয়া) এই একটি (দক্ষিণে নৃপকে টানিয়া আনিয়া) এই আর-একটি।
নীরবালা।
আর, কুড়ুল বুঝি আজ আসছে?
অক্ষয়।
আসছে কেন, এসেছে বললেও অত্যুক্তি হয় না। ঐ-যে সিঁড়িতে পায়ের শব্দ শোনা যাচ্ছে।
দৌড় দৌড়। শৈল পালাইবার সময় রসিকদাদাকে টানিয়া লইয়া গেল
চুড়িবালার ঝংকার এবং ত্রস্ত পদপল্লবকয়েকটির দ্রুতপতনশব্দ সম্পূর্ণ না মিলাইতেই
শ্রীশ ও বিপিনের প্রবেশ
দৌড় দৌড়। শৈল পালাইবার সময় রসিকদাদাকে টানিয়া লইয়া গেল
চুড়িবালার ঝংকার এবং ত্রস্ত পদপল্লবকয়েকটির দ্রুতপতনশব্দ সম্পূর্ণ না মিলাইতেই
শ্রীশ ও বিপিনের প্রবেশ
অক্ষয়।
পূর্ণবাবু এলেন না যে?
শ্রীশ।
চন্দ্রবাবুর বাসায় তাঁর সঙ্গে দেখা হয়েছিল, কিন্তু হঠাৎ তাঁর শরীরটা খারাপ হয়েছে বলে আজ আর আসতে পারলেন না।
অক্ষয়।
(পথের দিকে চাহিয়া) একটু বসুন, আমি চন্দ্রবাবুর অপেক্ষায় দ্বারের কাছে গিয়ে দাঁড়াই। তিনি অন্ধ মানুষ, কোথায় যেতে কোথায় গিয়ে পড়বেন তার ঠিক নেই। কাছাকাছি এমন স্থানও আছে, যেখানে কুমার-সভার অধিবেশন কোনোমতেই প্রার্থনীয় নয়।
[ অক্ষয়ের প্রস্থান
[ অক্ষয়ের প্রস্থান
অক্ষয় চলিয়া গেলে ঘরটি শ্রীশ ভালো করিয়া দেখিয়া লইল। ঘরে দুটি দীপ জ্বলিতেছে সেই দুটিকে বেষ্টন করিয়া ফিরোজ রঙের রেশমের অবগুণ্ঠন। সেই আবরণ ভেদ করিয়া ঘরের আলোটি মৃদু এবং রঙিন হইয়া উঠিয়াছে। টেবিলের মাঝখানে ফুলদানিতে ফুল সাজানো
অক্ষয় চলিয়া গেলে ঘরটি শ্রীশ ভালো করিয়া দেখিয়া লইল। ঘরে দুটি দীপ জ্বলিতেছে সেই দুটিকে বেষ্টন করিয়া ফিরোজ রঙের রেশমের অবগুণ্ঠন। সেই আবরণ ভেদ করিয়া ঘরের আলোটি মৃদু এবং রঙিন হইয়া উঠিয়াছে। টেবিলের মাঝখানে ফুলদানিতে ফুল সাজানো
বিপিন।
(ঈষৎ হাসিয়া) যা বল ভাই, এ ঘরটি চিরকুমার-সভার উপযুক্ত নয়।
শ্রীশ।
(চকিত হইয়া) কেন নয়।
বিপিন।
ঘরের সজ্জাগুলি তোমার নবীন সন্ন্যাসীদের পক্ষেও যেন বেশি বোধ হচ্ছে।
শ্রীশ।
আমার সন্ন্যাসধর্মের পক্ষে বেশি কিছু হতে পারে না।
বিপিন।
কেবল নারী ছাড়া।
শ্রীশ।
হাঁ, ঐ একটিমাত্র।
অন্য দিনের মতো কথাটায় তেমন জোর পৌঁছিল না
অন্য দিনের মতো কথাটায় তেমন জোর পৌঁছিল না
বিপিন।
দেয়ালের ছবি এবং অন্যান্য পাঁচরকমে এ ঘরটিতে সেই নারীজাতির অনেকগুলি পরিচয় পাওয়া যায় যেন।
শ্রীশ।
সংসারে নারীজাতির পরিচয় তো সর্বত্রই আছে।
বিপিন।
তা তো বটেই। কবিদের কথা যদি বিশ্বাস করা যায় তা হলে চাঁদে ফুলে লতায় পাতায় কোনোখানেই নারীজাতির পরিচয় থেকে হতভাগ্য পুরুষমানুষের নিষ্কৃতি পাবার জো নেই।
শ্রীশ।
(হাসিয়া) কেবল ভেবেছিলুম, চন্দ্রবাবুর বাসার সেই একতলার ঘরটিতে রমণীর কোনো সংস্রব ছিল না। আজ সে ভ্রমটা হঠাৎ ভেঙে গেল। নাঃ, ওরা পৃথিবীময় ছড়িয়ে পড়েছে।
বিপিন।
বেচারা চিরকুমার ক'টির জন্যে একটা কোনো ফাঁক রাখে নি। সভা করবার জায়গা পাওয়াই দায়।
শ্রীশ।
এই দেখো-না।
কোণের একটা টিপাই হইতে গোটাদুয়েক চুলের কাঁটা তুলিয়া দেখাইল
কোণের একটা টিপাই হইতে গোটাদুয়েক চুলের কাঁটা তুলিয়া দেখাইল
বিপিন।
(কাঁটা দুটি লইয়া পর্যবেক্ষণ করিয়া) ওহে ভাই, এ স্থানটা তো কুমারদের পক্ষে নিষ্কণ্টক নয়।
শ্রীশ।
ফুলও আছে, কাঁটাও আছে।
বিপিন।
সেইটেই তো বিপদ। কেবল কাঁটা থাকলে এড়িয়ে চলা যায়।
শ্রীশ অপর কোণের ছোটো বইয়ের শেলফ হইতে বইগুলি তুলিয়া দেখিতে লাগিল-- কতকগুলি নভেল কতকগুলি ইংরাজি কাব্যসংগ্রহ। প্যাল্গ্রেভের গীতিকাব্যের স্বর্ণভাণ্ডার খুলিয়া দেখিল
মার্জিনে মেয়েলি অক্ষরে নোট লেখা-- তখন গোড়ার পাতাটা উল্টাইয়া দেখিল দেখিয়া একটু নাড়িয়া-চাড়িয়া বিপিনের সম্মুখে ধরিল
শ্রীশ অপর কোণের ছোটো বইয়ের শেলফ হইতে বইগুলি তুলিয়া দেখিতে লাগিল-- কতকগুলি নভেল কতকগুলি ইংরাজি কাব্যসংগ্রহ। প্যাল্গ্রেভের গীতিকাব্যের স্বর্ণভাণ্ডার খুলিয়া দেখিল
মার্জিনে মেয়েলি অক্ষরে নোট লেখা-- তখন গোড়ার পাতাটা উল্টাইয়া দেখিল দেখিয়া একটু নাড়িয়া-চাড়িয়া বিপিনের সম্মুখে ধরিল
বিপিন।
নৃপবালা! আমার বিশ্বাস নামটি পুরুষমানুষের নয়। কী বোধ কর।
শ্রীশ।
আমারও সেই বিশ্বাস। এ নামটিও অন্যজাতীয় বলে ঠেকছে হে।
আর-একটা বই দেখাইল
আর-একটা বই দেখাইল
বিপিন।
নীরবালা! এ নামটি কাব্যগ্রন্থে চলে কিন্তু কুমার-সভায়--
শ্রীশ।
কুমার-সভাতেও এই নামধারিণীরা যদি চলে আসেন তা হলে দ্বাররোধ করতে পারি এত বড়ো বলবান তো আমাদের মধ্যে কাউকে দেখি নে।
বিপিন।
পূর্ণ তো একটি আঘাতেই আহত হয়ে পড়ল, রক্ষা পায় কি না সন্দেহ।
শ্রীশ।
কি রকম।
বিপিন।
লক্ষ্য করে দেখ নি বুঝি?
শ্রীশ।
না না, ও তোমার অনুমান।
বিপিন।
হৃদয়টা তো অনুমানেরই জিনিস-- না যায় দেখা, না যায় ধরা।
শ্রীশ।
পূর্ণর অসুখটাও তা হলে বৈদ্যশাস্ত্রের অন্তর্গত নয়?
বিপিন।
না, এ-সকল ব্যাধি সম্বন্ধে মেডিকাল কলেজে কোনো লেক্চার চলে না।
শ্রীশ।
এ বাড়ির দরজায় ঢুকতেই রসিক চক্রবর্তী বলে যে বৃদ্ধ যুবকটির সঙ্গে দেখা হল তাঁকে চিরকুমার-সভার দ্বারীর উপযুক্ত বলে বোধ হল না।
বিপিন।
মনে হল শিবের তপোবন আগলাবার জন্য স্বয়ং পঞ্চশর নন্দীর ছদ্মবেশে এসেছেন, লোকটাকে বিশ্বাসযোগ্য ঠেকছে না।
চন্দ্রের প্রবেশ
চন্দ্রের প্রবেশ
চন্দ্রবাবু।
আজকের তর্কবিতর্কের উত্তেজনায় পূর্ণবাবুর হঠাৎ শরীর খারাপ হল দেখে, আমি তাঁকে তাঁর বাড়ি পৌঁছে দেওয়া উচিত বোধ করলুম।
বিপিন।
পূর্ণবাবুর যেরকম দুর্বল অবস্থা দেখছি পূর্ব হতেই তাঁর বিশেষ সাবধান হওয়া উচিত ছিল।
চন্দ্রবাবু।
পূর্ণবাবুকে তো বিশেষ অসাবধান বলে বোধ হয় না।
অক্ষয় ও রসিকের প্রবেশ
অক্ষয় ও রসিকের প্রবেশ
অক্ষয়।
মাপ করবেন। এই নবীন সভ্যটিকে আপনাদের হাতে সমর্পণ করে দিয়েই আমি চলে যাচ্ছি।
রসিক।
(হাসিয়া) আমার নবীনতা বাইরে থেকে বিশেষ প্রত্যক্ষগোচর নয়--
অক্ষয়।
অত্যন্ত বিনয়বশত সেটা বাহ্য প্রাচীনতা দিয়ে ঢেকে রেখেছেন-- ক্রমশ পরিচয় পাবেন। ইনিই হচ্ছেন সার্থকনামা শ্রীরসিক চক্রবর্তী।
রসিক।
পিতা আমার রসবোধ সম্বন্ধে পরিচয় পাবার পূর্বেই রসিক নাম রেখেছিলেন, এখন পিতৃসত্যপালনের জন্য আমাকে রসিকতার চেষ্টা করতে হয়, তার পরে "যত্নে কৃতে যদি ন সিধ্যতি কোহত্র দোষঃ'।
[ অক্ষয়ের প্রস্থান
[ অক্ষয়ের প্রস্থান
পুরুষবেশী শৈলের প্রবেশ
শৈল আসিয়া সকলকে নমস্কার করিল। ক্ষীণদৃষ্টি চন্দ্রমাধববাবু ঝাপসাভাবে তাহাকে দেখিলেন--
বিপিন ও শ্রীশ তাহার দিকে চাহিয়া রহিল শৈলের পশ্চাতে দুইজন ভৃত্য কয়েকটি ভোজনপাত্র হাতে করিয়া উপস্থিত হইল শৈল ছোটো ছোটো রুপার থালাগুলি লইয়া সাদা পাথরের টেবিলের উপর সাজাইতে লাগিল
পুরুষবেশী শৈলের প্রবেশ
শৈল আসিয়া সকলকে নমস্কার করিল। ক্ষীণদৃষ্টি চন্দ্রমাধববাবু ঝাপসাভাবে তাহাকে দেখিলেন--
বিপিন ও শ্রীশ তাহার দিকে চাহিয়া রহিল শৈলের পশ্চাতে দুইজন ভৃত্য কয়েকটি ভোজনপাত্র হাতে করিয়া উপস্থিত হইল শৈল ছোটো ছোটো রুপার থালাগুলি লইয়া সাদা পাথরের টেবিলের উপর সাজাইতে লাগিল
রসিক।
ইনি আপনাদের সভার আর-একটি নবীন সভ্য। এঁর নবীনতা সম্বন্ধে কোনো তর্ক নেই। ঠিক আমার বিপরীত। ইনি বুদ্ধির প্রবীণতা বাহ্য নবীনতা দিয়ে গোপন করে রেখেছেন। আপনারা কিছু বিস্মিত হয়েছেন দেখছি-- হবার কথা। এঁকে দেখে মনে হয় বালক, কিন্তু আমি আপনাদের কাছে জামিন রইলুম-- ইনি বালক নন।
চন্দ্রবাবু।
এঁর নাম?
রসিক।
শ্রীঅবলাকান্ত চট্টোপাধ্যায়।
শ্রীশ।
অবলাকান্ত?
রসিক।
নামটি আমাদের সভায় চলতি হবার মতো নয় স্বীকার করি। নামটির প্রতি আমারও বিশেষ মমত্ব নেই-- যদি পরিবর্তন করে বিক্রমসিংহ বা ভীমসেন বা অন্য কোনো উপযুক্ত নাম রাখেন তাতে উনি আপত্তি করবেন না। যদিচ শাস্ত্রে আছে বটে "স্বনামা পুরুষো ধন্য'-- কিন্তু উনি অবলাকান্ত নামটির দ্বারাই জগতে পৌরুষ অর্জন করতে ব্যাকুল নন।
শ্রীশ।
বলেন কী মশায়। নাম তো আর গায়ের বস্ত্র নয় যে, বদল করলেই হল।
রসিক।
ওটা আপনাদের একেলে সংস্কার শ্রীশবাবু, নামটাকে প্রাচীনেরা পোশাকের মধ্যেই গণ্য করতেন। দেখুন-না কেন, অর্জুনের পিতৃদত্ত নাম কী ঠিক করে বলা শক্ত-- পার্থ, ধনঞ্জয়, সব্যসাচী, লোকের যখন যা মুখে আসত তাই বলেই ডাকত। দেখুন, নামটাকে আপনারা বেশি সত্য মনে করবেন না; ওঁকে যদি ভুলে আপনি অবলাকান্ত না'ও বলেন উনি লাইবেলের মকদ্দমা আনবেন না।
শ্রীশ।
(হাসিয়া) আপনি যখন এতটা অভয় দিচ্ছেন তখন অত্যন্ত নিশ্চিন্ত হলুম-- কিন্তু ওঁর ক্ষমাগুণের পরিচয় নেবার দরকার হবে না, নাম ভুল করব না মশায়।
রসিক।
আপনি না করতে পারেন, কিন্তু আমি করি মশায়। উনি আমার সম্পর্কে নাতি হন; সেইজন্যে ওঁর সম্বন্ধে আমার রসনা কিছু শিথিল, যদি কখনো এক বলতে আর বলি সেটা মাপ করবেন।
শ্রীশ।
অবলাকান্তবাবু, আপনি এ-সমস্ত কী আয়োজন করেছেন। আমাদের সভার কার্যাবলীর মধ্যে মিষ্টান্নটা ছিল না।
রসিক।
(উঠিয়া) সেই ত্রুটি যিনি সংশোধন করেছেন তাঁকে সভার হয়ে ধন্যবাদ দিই।
শৈল।
(থালা সাজাইতে সাজাইতে) শ্রীশবাবু, আহারটাও কি আপনাদের নিয়মবিরুদ্ধ।
শ্রীশ।
(বিপুলায়তন বিপিনকে টানিয়া আনিয়া) এই সভ্যটির আকৃতি নিরীক্ষণ করে দেখলেই ও সম্বন্ধে কোনো সংশয় থাকবে না।
বিপিন।
নিয়মের কথা যদি বলেন অবলাকান্তবাবু, সংসারের শ্রেষ্ঠ জিনিস মাত্রই নিজের নিয়ম নিজেই সৃষ্টি করে; ক্ষমতাশালী লেখক নিজের নিয়মে চলে, শ্রেষ্ঠ কাব্য সমালোচকের নিয়ম মানে না। যে মিষ্টান্নগুলি সংগ্রহ করেছেন এ সম্বন্ধেও কোনো সভার নিয়ম খাটতে পারে না; এর একমাত্র নিয়ম, বসে যাওয়া এবং নিঃশেষ করা। ইনি যতক্ষণ আছেন ততক্ষণ জগতের অন্য সমস্ত নিয়মকে দ্বারের কাছে অপেক্ষা করতে হবে।
শ্রীশ।
তোমার হল কী বিপিন। তোমাকে খেতে দেখেছি বটে, কিন্তু এক নিশ্বাসে এত কথা কইতে শুনি নি তো।
বিপিন।
রসনা উত্তেজিত হয়েছে, এখন সরস বাক্য বলা আমার পক্ষে অত্যন্ত সহজ হয়েছে। যিনি আমার জীবনবৃত্তান্ত লিখবেন, হায়, এ সময়ে তিনি কোথায়?
রসিক।
(টাকে হাত বুলাইতে বুলাইতে) আমার দ্বারা সে কাজটা প্রত্যাশা করবেন না, আমি এত দীর্ঘকাল অপেক্ষা করতে পারব না।
নূতন ঘরের বিলাসসজ্জার মধ্যে আসিয়া চন্দ্রমাধববাবুর মনটা বিক্ষিপ্ত হইয়া গিয়াছিল। তাঁহার উৎসাহস্রোত যথাপথে প্রবাহিত হইতেছিল না। তিনি ক্ষণে ক্ষণে কার্যবিবরণের খাতা ক্ষণে ক্ষণে নিজের করকোষ্ঠী অকারণে নিরীক্ষণ করিয়া দেখিতেছিলেন
নূতন ঘরের বিলাসসজ্জার মধ্যে আসিয়া চন্দ্রমাধববাবুর মনটা বিক্ষিপ্ত হইয়া গিয়াছিল। তাঁহার উৎসাহস্রোত যথাপথে প্রবাহিত হইতেছিল না। তিনি ক্ষণে ক্ষণে কার্যবিবরণের খাতা ক্ষণে ক্ষণে নিজের করকোষ্ঠী অকারণে নিরীক্ষণ করিয়া দেখিতেছিলেন
শৈলবালা।
(চন্দ্রবাবুর সম্মুখে গিয়ে) সভার কার্যের যদি কিছু ব্যাঘাত করে থাকি তো মাপ করবেন চন্দ্রবাবু, কিছু জলযোগ--
চন্দ্রবাবু।
এ-সমস্ত সামাজিকতায় সভার কার্যের ব্যাঘাত করে, তাতে সন্দেহ নেই।
রসিক।
আচ্ছা, পরীক্ষা করে দেখুন, মিষ্টান্নে যদি সভার কার্য রোধ হয় তা হলে--
বিপিন।
(মৃদুস্বরে) তা হলে ভবিষ্যতে নাহয় সভাটা বন্ধ রেখে মিষ্টান্নটা চালালেই হবে।
শ্রীশ।
আসুন রসিকবাবু। আপনি উঠছেন না যে?
রসিক।
রোজ রোজ যেচে এবং মাঝে মাঝে কেড়ে খেয়ে থাকি, আজ চিরকুমারসভার সভ্যরূপে আপনাদের সংসর্গগৌরবে কিঞ্চিৎ উপরোধের প্রত্যাশায় ছিলুম, কিন্তু--
শৈলবালা।
"কিন্তু' আবার কী রসিকদাদা। তুমি যে রবিবার করে থাক, আজ তুমি কিছু খাবে নাকি।
রসিক।
দেখছেন মশায়! নিয়ম আর-কারো বেলায় নয়, কেবল রসিকদাদার বেলায়। নাঃ, "বলং বলং বাহুবলম্'। উপরোধ-অনুরোধের অপেক্ষা করা নয়।
বিপিন।
(চারটিমাত্র ভোজনপাত্র দেখিয়া) আপনি আমাদের সঙ্গে বসবেন না?
শৈলবালা।
না, আমি পরিবেশন করব।
শ্রীশ।
সে কি হয়।
শৈলবালা।
আমাকে পরিবেশন করতে দিন, খাওয়ার চেয়ে তাতে আমি ঢের বেশি খুশি হব।
শ্রীশ।
রসিকবাবু, এটা কি ঠিক হচ্ছে।
রসিক।
ভিন্নরুচির্হি লোকঃ। উনি পরিবেশন করতে ভালোবাসেন, আমরা আহার করতে ভালোবাসি, এরকম রুচিভেদে বোধ হয় পরস্পরের কিছু সুবিধা আছে।
সকলের আহার
সকলের আহার
শৈলবালা।
চন্দ্রবাবু, ওটা মিষ্টি, ওটা আগে খাবেন না, এই দিকে তরকারি আছে। জলের গ্লাস খুঁজছেন? এই-যে গ্লাস।
চন্দ্রবাবুর পাতে আম ছিল, তিনি সেটাকে ভালোরূপ আয়ত্ত করিতে পারিতে ছিলেন না-- অনুতপ্ত শৈল তাড়াতাড়ি তাহা কাটিয়া সহজসাধ্য করিয়া দিল। যে সময়ে যেটি আবশ্যক আস্তে আস্তে হাতের কাছে জোগাইয়া দিয়া তাঁহার ভোজনব্যাপারটি নির্বিঘ্ন করিতে লাগিল
চন্দ্রবাবুর পাতে আম ছিল, তিনি সেটাকে ভালোরূপ আয়ত্ত করিতে পারিতে ছিলেন না-- অনুতপ্ত শৈল তাড়াতাড়ি তাহা কাটিয়া সহজসাধ্য করিয়া দিল। যে সময়ে যেটি আবশ্যক আস্তে আস্তে হাতের কাছে জোগাইয়া দিয়া তাঁহার ভোজনব্যাপারটি নির্বিঘ্ন করিতে লাগিল
চন্দ্রবাবু।
শ্রীশবাবু, স্ত্রীসভ্য নেওয়া সম্বন্ধে আপনি কিছু বিবেচনা করেছেন?
শ্রীশ।
ভেবে দেখতে গেলে ওতে আপত্তির কারণ বিশেষ নেই, কেবল সমাজের আপত্তির কথাটা আমি ভাবি।
বিপিন।
সমাজকে অনেক সময় শিশুর মতো গণ্য করা উচিত। শিশুর সমস্ত আপত্তি মেনে চললে শিশুর উন্নতি হয় না, সমাজ সম্বন্ধেও ঠিক সেই কথা খাটে।
শ্রীশ।
আমার বোধ হয় আমাদের দেশে যে এত সভাসমিতির আয়োজন অনুষ্ঠান অকালে ব্যর্থ হয় তার প্রধান কারণ, সে-সকল কার্যে স্ত্রীলোকদের যোগ নেই। রসিকবাবু কী বলেন।
রসিক।
অবস্থাগতিকে যদিও স্ত্রীজাতির সঙ্গে আমার বিশেষ সম্বন্ধ নেই তবু এটুকু জেনেছি-- স্ত্রীজাতি হয় যোগ দেন নয় বাধা দেন, হয় সৃষ্টি নয় প্রলয়। অতএব ওঁদের দলে টেনে অন্য সুবিধা যদিবা না'ও হয় তবু বাধার হাত এড়ানো যায়। বিবেচনা করে দেখুন, চিরকুমার-সভার মধ্যে যদি স্ত্রীজাতিকে আপনারা গ্রহণ করতেন তা হলে গোপনে এই সভাটিকে নষ্ট করবার জন্যে ওঁদের উৎসাহ থাকত না, কিন্তু বর্তমান অবস্থায়--
শৈলবালা।
কুমার-সভার উপর স্ত্রীজাতির আক্রোশের খবর রসিকদাদা কোথায় পেলে।
রসিক।
বিপদের খবর না পেলে কি আর সাবধান করতে নেই। একচক্ষু হরিণ যে দিকে কানা ছিল সেই দিক থেকেই তো তীর খেয়েছিল-- কুমার-সভা যদি স্ত্রীজাতির প্রতিই কানা হন তা হলে সেই দিক থেকেই হঠাৎ ঘা খাবেন।
শ্রীশ।
(বিপিনের প্রতি মৃদুস্বরে) একচক্ষু হরিণ তো আজ একটা তীর খেয়েছেন, একটি সভ্য ধূলিশায়ী।
চন্দ্রবাবু।
কেবল পুরুষ নিয়ে যারা সমাজের ভালো করতে চায় তারা এক পায়ে চলতে চায়। সেইজন্যই খানিক দূর গিয়েই তাদের বসে পড়তে হয়। সমস্ত মহৎ চেষ্টা থেকে মেয়েদের দূরে রেখেছি বলেই আমাদের দেশের কাজে প্রাণসঞ্চার হচ্ছে না। আমাদের হৃদয়, আমাদের কাজ, আমাদের আশা বাইরে ও অন্তঃপুরে খণ্ডিত-- সেইজন্যে আমরা বাইরে গিয়ে বক্তৃতা দিই, ঘরে এসে ভুলি। দেখো অবলাকান্তবাবু, এখনো তোমার বয়স অল্প আছে, এই কথাটি ভালো করে মনে রেখো-- স্ত্রীজাতিকে অবহেলা কোরো না। স্ত্রীজাতিকে যদি আমরা নিচু করে রাখি তা হলে তাঁরাও আমাদের নীচের দিকেই আকর্ষণ করেন; তা হলে তাঁদের ভারে আমাদের উন্নতির পথে চলা অসাধ্য হয়, দু পা চলেই আবার ঘরের কোণে এসেই আবদ্ধ হয়ে পড়ি। তাঁদের যদি আমরা উচ্চে রাখি তা হলে ঘরের মধ্যে এসে নিজের আদর্শকে খর্ব করতে লজ্জাবোধ হয়। আমাদের দেশে বাইরে লজ্জা আছে, কিন্তু ঘরের মধ্যে সেই লজ্জাটি নেই, সেইজন্যেই আমাদের সমস্ত উন্নতি কেবল বাহ্যাড়ম্বরে পরিণত হয়।
শৈলবালা।
আশীর্বাদ করুন আপনার উপদেশ যেন ব্যর্থ না হয়, নিজেকে যেন আপনার আদর্শের উপযুক্ত করতে পারি।
চন্দ্রবাবু।
আমার ভাগ্নী নির্মলাকে কুমার-সভার সভ্যশ্রেণীতে ভুক্ত করতে আপনাদের কোনো আপত্তি নেই?
রসিক।
আর-কোনো আপত্তি নেই, কেবল একটু ব্যাকরণের আপত্তি। কুমারসভায় কেউ যদি কুমারীবেশে আসেন তা হলে বোপদেবের অভিশাপ।
শৈলবালা।
বোপদেবের অভিশাপ এ কালে খাটে না।
রসিক।
আচ্ছা, অন্তত লোহারামকে তো বাঁচিয়ে চলতে হবে? আমি তো বোধ করি, স্ত্রীসভ্যরা যদি পুরুষসভ্যদের অজ্ঞাতসারে বেশ ও নাম পরিবর্তন করে আসেন তা হলে সহজে নিষ্পত্তি হয়।
শ্রীশ।
তা হলে একটা কৌতুক এই হয় যে, কে স্ত্রী কে পুরুষ নিজেদের এই সন্দেহটা থেকে যায়--
বিপিন।
আমি বোধ হয় সন্দেহ থেকে নিষ্কৃতি পেতে পারি।
রসিক।
আমাকেও বোধ হয় আমার নাতনী বলে কারো হঠাৎ আশঙ্কা না হতে পারে।
শ্রীশ।
কিন্তু অবলাকান্তবাবু সম্বন্ধে একটা সন্দেহ থেকে যায়।
শৈল অদূরবর্তী টিপাই হইতে মিষ্টান্নের থালা আনিতে প্রস্থান করিল
শৈল অদূরবর্তী টিপাই হইতে মিষ্টান্নের থালা আনিতে প্রস্থান করিল
চন্দ্রবাবু।
দেখুন রসিকবাবু, ভাষাতত্ত্বে দেখা যায়, ব্যবহার করতে করতে একটা শব্দের মূল অর্থ লোপ পেয়ে বিপরীত অর্থ ঘটে থাকে। স্ত্রীসভ্য গ্রহণ করলে চিরকুমারসভার অর্থের যদি পরিবর্তন ঘটে তাতে ক্ষতি কী।
রসিক।
কিছু না। আমি পরিবর্তনের বিরোধী নই-- তা নামপরিবর্তন বা বেশ-পরিবর্তন যাই হোক-না কেন, যখন যা ঘটে আমি বিনা বিরোধে গ্রহণ করি বলেই আমার প্রাণটা নবীন আছে।
মিষ্টান্ন শেষ হইল এবং স্ত্রীসভ্য লওয়া সম্বন্ধে কাহারো আপত্তি হইল না
মিষ্টান্ন শেষ হইল এবং স্ত্রীসভ্য লওয়া সম্বন্ধে কাহারো আপত্তি হইল না
রসিক।
আশা করি সভার কাজের কোনো ব্যাঘাত হয় নি।
শ্রীশ।
কিছু না-- অন্যদিন কেবল মুখেরই কাজ চলত, আজ দক্ষিণ হস্তও যোগ দিয়েছে।
বিপিন।
তাতে আভ্যন্তরিক তৃপ্তিটা কিছু বেশি হয়েছে। আজ তা হলে এইখানেই সভা ভঙ্গ করা হোক, কারণ এর পরে আর-কোনো আলোচনা চলবে না। এ দিকে দেরিও হয়ে গেছে।
[ সকলের প্রস্থান
[ সকলের প্রস্থান