কানন

প্রমদা সখীগণ অশোক ও কুমারের প্রবেশ

কানন

প্রমদা সখীগণ অশোক ও কুমারের প্রবেশ

কুমার।

সখী, সাধ করে যাহা দেবে তাই লইব।

সখীগণ।

আহা মরি মরি সাধের ভিখারি,

তুমি মনে মনে চাহ প্রাণ মন।

কুমার।

দাও যদি ফুল, শিরে তুলে রাখিব

সখী। দেয় যদি কাঁটা?

কুমার।

তাও সহিব।

সখীগণ।

আহা মরি মরি সাধের ভিখারি,

তুমি মনে মনে চাহ প্রাণ মন।

কুমার।

যদি এক বার চাও, সখী, মধুর নয়ানে

ওই আঁখিসুধাপানে চিরজীবন মাতি রহিব।

সখীগণ।

যদি কঠিন কটাক্ষ মিলে?

কুমার।

তাও হৃদয়ে বিঁধায়ে চিরজীবন বহিব।

সখীগণ।

আহা মরি মরি সাধের ভিখারি,

তুমি মনে মনে চাহ প্রাণমন।

প্রমদা।

এ তো খেলা নয়, খেলা নয়-

এ যে হৃদয়দহন জ্বালা, সখী।

এ-যে প্রাণভরা ব্যাকুলতা, গোপন মর্মের ব্যথা,

এ যে, কাহার চরণোদ্দেশে জীবন মরণ ঢালা।

কে যেন সতত মোরে ডাকিয়ে আকুল করে-

যাই যাই করে প্রাণ, যেতে পারি নে।

যে কথা বলিতে চাহি তা বুঝি বলিতে নাহি-

কোথায় নামায়ে রাখি, সখী, এ প্রেমের ডালা!

যতনে গাঁথিয়ে শেষে, পরাতে পারি নে মালা॥

প্রথমা সখী।

সে জন কে, সখী, বোঝা গেছে,

আমাদের সখী যারে মন প্রাণ সঁপেছে।

দ্বিতীয়া ও তৃতীয়া।

ও সে কে, কে, কে।

প্রথমা।

ওই-যে তরুতলে, বিনোদমালা গলে,

না জানি কোন্‌ ছলে বসে রয়েছে।

দ্বিতীয়া।

সখী কী হবে-

ও কি কাছে আসিবে কভু, কথা কবে?

তৃতীয়া।

ও কি প্রেম জানে। ও কি বাঁধন মানে।

ও কী মায়াগুণে মন লয়েছে।

দ্বিতীয়া।

বিভল আঁখি তুলে আঁখি-পানে চায়,

যেন কী পথ ভুলে এল কোথায় ওগো

তৃতীয়া।

যেন কী গানের স্বরে শ্রবণ আছে ভ'রে,

যেন কোন্‌ চাঁদের আলোয় মগ্ন হয়েছে॥

সখী।

সখী প্রতিদিন হায় এসে ফিরে যায় কে।

তারে আমার মাথার একটি কুসুম দে।

যদি শুধায় কে দিল কোন ফুলকাননে-

মোর শপথ, আমার নামটি বলিস নে॥

সখীগণ।

তারে কেমনে ধরিবে, সখী, যদি ধরা দিলে!

প্রথমা।

তারে কেমনে কাঁদাবে, যদি আপনি কাঁদিলে!

দ্বিতীয়া।

যদি মন পেতে চাও, মন রাখো গোপনে।

তৃতীয়া।

কে তারে বাঁধিবে, তুমি আপনায় বাঁধিলে॥

নিকটে আসিয়া প্রমদার প্রতি

নিকটে আসিয়া প্রমদার প্রতি

অমর।

সকল হৃদয় দিয়ে ভালো বেসেছি যারে,

সে কি ফিরাতে পারে, সখী।

সংসারবাহিরে থাকি জানি নে কী ঘটে সংসারে।

কে জানে, হেথায় প্রাণপণে প্রাণ যারে চায়,

তারে পায় কি না-পায় - জানি নে।

ভয়ে ভয়ে তাই এসেছি গো, অজানা-হৃদয়-দ্বারে।

তোমার সকলি ভালোবাসি- ওই রূপরাশি,

ওই খেলা, ওই গান, ওই মধুহাসি।

ওই দিয়ে আছ ছেয়ে জীবন আমারি-

কোথায় তোমার সীমা, ভুবন-মাঝারে।

সখীগণ।

তুমি কে গো, সখীরে কেন জানাও বাসনা।

দ্বিতীয়া।

কে জানিতে চায়, তুমি ভালোবাস, কি ভালোবাস না।

প্রথমা।

হাসে চন্দ্র, হাসে সন্ধ্যা, ফুল্ল কুঞ্জকানন-

হাসে হৃদয়-বসন্তে বিকচ যৌবন।

তুমি কেন ফেল শ্বাস, তুমি কেন হাস না।

সকলে।

এসেছ কি ভেঙে দিতে খেলা-

সখীতে সখীতে এই হৃদয়ের মেলা।

দ্বিতীয়া।

আপন দুঃখ আপন ছায়া লয়ে যাও।

প্রথমা।

জীবনের আনন্দ-পথ ছেড়ে দাঁড়াও।

তৃতীয়া।

দূর হতে করো পূজা হৃদয়কমল-আসনা॥

অমর।

তবে সুখে থাকো, সুখে থাকো। আমি যাই-- যাই।

প্রমদা।

সখী, ওরে ডাকো, মিছে খেলায় কাজ নাই।

সখীগণ।

অধীর হ'য়ো না, সখী,

আশ মেটালে ফেরে না কেহ, আশ রাখিলে ফেরে।

অমর।

ছিলাম একেলা সেই আপন ভুবনে- এসেছি এ কোথায়।

হেথাকার পথ জানি নে, ফিরে যাই।

যদি সেই বিরামভবন ফিরে পাই।

প্রস্থান

প্রস্থান

প্রমদা।

সখী, ওরে ডাকো ফিরে। মিছে খেলা মিছে হেলা কাজ নাই।

সখীগণ।

অধীরা হ'য়ো না, সখী,

আশ মেটালে ফেরে না কেহ আশ রাখিলে ফেরে॥

[ প্রস্থান

[ প্রস্থান
1 | 2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7