এস' এস' বসন্ত ধরাতলে।
আন' কুহুতান, প্রেমগান,
আন' গন্ধমদভরে অলস সমীরণ;
আন' নবযৌবনহিল্লোল, নব প্রাণ-
প্রফুল্ল নবীন বাসনা ধরাতলে।
পুরুষগণ।
এস' থর'থর'কম্পিত, মর্মরমুখরিত,
নব পল্লবপুলকিত
ফুল-আকুল মালতীবল্লিবিতানে-
সুখছায়ে মধুবায়ে, এস' এস'।
এস' অরুণচরণ কমলবরণ তরুণ উষার কোলে।
এস জ্যোৎস্নাবিবশ নিশীথে কলকল্লোলতটিনীতীরে,
সুখসুপ্তসরসীনীরে, এস' এস'।
স্ত্রীগণ।
এস' যৌবনকাতর হৃদয়ে,
এস' মিলনসুখালস নয়নে,
এস' মধুর শরমমাঝারে- দাও বাহুতে বাহু বাঁধি,
নবীনকুসুমপাশে রচি দাও নবীন মিলনবাঁধন॥
প্রমদা ও সখীগণের প্রবেশ
প্রমদা ও সখীগণের প্রবেশ
অমর।
এ কি স্বপ্ন! এ কি মায়া!
এ কি প্রমদা! এ কি প্রমদার ছায়া॥
পুরুষগণ।
ও কি এল, ও কি এল না—
বোঝা গেল না,গেল না।
ও কি মায়া কি স্বপনছায়া—ও কি ছলনা।
অমর।
ধরা কি পড়ে ও রূপেরই ডোরে।
গানেরই তানে কি বাঁধিবে ওরে।
ও-যে চিরবিরহেরই সাধনা।
শান্তা।
ওর বাঁশিতে করুন কি সুর লাগে
বিরহমিলনমিলিত রাগে।
সুখে কি দুখে ও পাওয়া না-পাওয়া,
হৃদয়বনে ও উদাসী হাওয়া—
বুঝি শুধু ও পরম কামনা॥
অমর।
এ কি স্বপ্ন! এ কি মায়া!
এ কি প্রমদা! এ কি প্রমদার ছায়া!
সখীগণ।
কোন্ সে ঝড়ের ভুল ঝরিয়ে দিল ফুল,
প্রথম যেমনি তরুণ মাধুরী মেলেছিল এ মুকুল।
নব প্রভাতের তারা
সন্ধ্যাবেলায় হয়েছে পথহারা।
অমরাবতীর সুরযুবতীর এ ছিল কানের দুল।
এ যে মুকুটশোভার ধন—
হায় গো দরদী কেহ থাক যদি, শিরে দাও পরশন।
এ কি স্রোতে যাবে ভেসে দূরদয়াহীন দেশে—
জানি নে, কে জানে দিন-অবসানে কোন্খানে পাবে কূল॥
শান্তা।
ছি ছি,মরি লাজে।
কে সাজালো মোরে মিছে সাজে।
বিধাতার নিষ্ঠুর বিদ্রূপে নিয়ে এল চুপে চুপে
মোরে তোমাদের দুজনের মাঝে।
আমি নাই, আমি নাই—
আদরিণী,লহো তব ঠাঁই যেথা তব আসন বিরাজে॥
শান্তা ও স্ত্রীগণ।
শুভমিলনলগনে বাজুক বাঁশি,
মেঘমুক্ত গগনে জাগুক হাসি।
পুরুষগণ।
কত দুখে কত দূরে দূরে আঁধারসাগর ঘুরে ঘুরে
সোনার তরী তীরে এল ভাসি।
ওগো পুরবালা,আনো সাজিয়ে বরণডালা।
যুগলমিলনমহোৎসবে শুভ শঙ্খরবে
বসন্তের আনন্দ দাও উচ্ছ্বাসি॥
প্রমদা।
আর নহে, আর নহে।
বসন্তবাতাস কেন আর শুষ্ক ফুলে বহে।
লগ্ন গেল বয়ে, সকল আশা লয়ে—
এ কোন্ প্রদীপ জ্বালো! এ-যে বক্ষ আমার দহে।
আমার কানন মরু হল—
আজ এই সন্ধ্যা-অন্ধকারে সেথায় কী ফুল তোলো।
কাহার ভাগ্য হতে বরণমালা হরণ করো—
ভাঙা ডালি ভরো।
মিলনমালার কন্টকভার কন্ঠে কি আর সহে॥
অমর।
ছিন্ন শিকল পায়ে নিয়ে ওরে পাখি,
যা উড়ে,যা উড়ে,যা রে একাকী।
বাজবে তোর পায়ে সেই বন্ধ,পাখাতে পাবি আনন্দ—
দিশাহারা মেঘ যে গেল ডাকি।
নির্মল দুঃখে যে সেই তো মুক্তি নির্মল শূন্যের প্রেমে।
আত্মবিড়ম্বন দারুন লজ্জা, নিঃশেষে যাক সে থেমে।
দুরাশার মরাবাঁচায় এতদিন ছিলি তোর খাঁচায়—
ধূলিতলে যাবি রাখি॥
শান্তা।
যাক ছিঁড়ে,যাক ছিঁড়ে যাক মিথ্যার জাল।
দুঃখের প্রাসাদে এলে আজি মুক্তির কাল।
এই ভালো ওগো,এই ভালো—বিচ্ছেদবহ্নিশিখার আলো।
নিষ্ঠুর সত্য করুক করুক বরদান—ঘুচে যাক ছলনার অন্তরাল।
যাও প্রিয়,যাও তুমি যাও জয়রথে। বাধা দিব না পথে।
বিদায় নেবার আগে মন তব স্বপ্ন হতে যেন জাগে—
নির্মল হোক হোক সব জঞ্জাল॥
মায়াকুমারী।
দুঃখের যজ্ঞ-অনল-জ্বলনে জন্মে যে প্রেম
দীপ্ত সে হেম—
নিত্য সে নিঃসংশয়, গৌরব তার অক্ষয়।
দুরাকাঙ্খার পরপারে বিরহতীর্থে করে বাস
যেথা জ্বলে ক্ষুব্ধ হোমাগ্নিশিখায় চিরনৈরাশ,
তৃষ্ণাদাহনমুক্ত অনুদিন অমলিন রয়।
গৌরব তার অক্ষয়—
অশ্রু-উৎস-জল-স্নান তাপস মৃত্যুঞ্জয়॥
প্রস্থান
প্রস্থান
সকলে।
আজ খেলা ভাঙার খেলা খেলবি আয়।
সুখের বাসা ভেঙে ফেলবি আয়।
মিলন-মালার বাঁধন তো টুটবে,
ফাগুন-দিনের আজ স্বপন তো ছুটবে—
উধাও মনের পাখা মেলবি আয়।
অস্তগিরির ওই শিখর-চূড়ে
ঝড়ের মেঘের আজ ধ্বজা উড়ে।
কালবৈশাখীর হবে-যে নাচন—
সাথে নাচুক তোর মরণ-বাঁচন,
হাসি কাঁদন পায়ে ঠেলবি আয়॥