শ্যামা।

এখনো কেন সময় নাহি হল

নাম-না-জানা অতিথি—

আঘাত হানিলে না দুয়ারে,

কহিলে না ‘দ্বার খোলো’।

হাজার লোকের মাঝে

রয়েছি একেলা যে,

এসো আমার হঠাৎ-আলো—

পরান চমকি তোলো।

আঁধার-বাধা আমার ঘরে,

জানি না কাঁদি কাহার তরে।

চরণসেবার সাধনা আনো,

সকল দেবার বেদনা আনো,

নবীন প্রানের জাগরমন্ত্র

কানে কানে বোলো।।

প্রহরীগণ।

রাজার আদেশ ভাই—

চোর ধরা চাই,চোর ধরা চাই।

কোথা তারে পাই?

যারে পাও তারে ধরো,

কোনো ভয় নাই।।

প্রহরী।

ধর্ ধর্,ওই চোর,ওই চোর।

বজ্রসেন।

নই আমি,নই নই নই চোর।

অন্যায় অপবাদে

আমারে ফেলো না ফাঁদে।

নই আমি নই চোর।

প্রহরী।

ওই বটে, ওই চোর, ওই চোর।

বজ্রসেন।

এ কথা মিথ্যা অতি ঘোর।

আমি পরদেশী—

হেথা নেই স্বজন বন্ধু কেহ মোর।

নই চোর,নই আমি নই চোর।।

শ্যামা।

আহা মরি মরি,

মহেন্দ্রনিন্দিতকান্তি উন্নতদর্শন

কারে বন্দী ক’রে আনে চোরের মতন

কঠিন শৃঙ্খলে।—শীঘ্র যা লো সহচরী,

বল্ গে নগরপালে মোর নাম করি,

শ্যামা ডাকিতেছে তারে। বন্দী সাথে লয়ে

একবার আসে যেন আমার আলয়ে

দয়া করি।।

সহচরী।

সুন্দরের বন্ধন নিষ্ঠুরের হাতে ঘুচাবে কে।

নিঃসহায়ের অশ্রুবারি পীড়িতের চক্ষে মুছাবে কে

আর্তের ক্রন্দনে হেরো ব্যথিত বসুন্ধরা,

অন্যায়ের আক্রমণে বিষবাণে জর্জরা।

প্রবলের উৎপীড়নে কে বাঁচাবে দুর্বলেরে—

অপমানিতেরে কার দয়া বক্ষে লবে ডেকে।।

শ্যামা।

তোমাদের একি ভ্রান্তি—

কে ওই পুরুষ দেবকান্তি,

প্রহরী, মরি মরি—

এমন ক’রে কি ওকে বাঁধে।

দেখে যে আমার প্রাণ কাঁদে।

বন্দী করেছ কোন্ দোষে।।

প্রহরী।

চুরি হয়ে গেছে রাজকোষে—

চোর চাই যে ক’রেই হোক।

নহিলে মোদের যাবে মান।।

শ্যামা।

নির্দোষী বিদেশীর রাখো প্রাণ—

দুই দিন মাগিনু সময়।

প্রহরী।

রাখিব তোমার অনুনয়।

দুই দিন কারাগারে রবে,

তার পর যা হয় তা হবে।।

বজ্রসেন।

এ কী খেলা,হে সুন্দরী,কিসের এ কৌতুক।

কেন দাও অপমানদুখ—

মোরে নিয়ে কেন, কেন এ কৌতুক।।

শ্যামা।

নহে নহে নহে এ কৌতুক।

মোর অঙ্গের স্বর্ণ-অলঙ্কার

সঁপি দিয়া, শৃঙ্খল তোমার

নিতে পারি নিজদেহে। তব অপমানে

মোর অন্তরাত্মা আজি অপমান মানে।।

বজ্রসেন।

কোন্ অযাচিত আশার আলো

দেখা দিল রে তিমিররাত্রি ভেদি দুর্দিনদুর্যোগ।

কাহার মাধুরী বাজাইল করুণ বাঁশি।

অচেনা নির্মম ভুবনে দেখিনু এ কী সহসা—

কোন্ অজানার সুন্দর মুখে সান্ত্বনাহাসি।।
1 | 2 | 3 | 4 | 5