সব-কিছু কেন নিল না, নিল না,

নিল না ভালোবাসা।

আপনাতে কেন মিটালো না যত-কিছু দ্বন্দ্বেরে—

ভালো আর মন্দেরে।

নদী নিয়ে আসে পঙ্কিল জলধারা,

সাগরহৃদয়ে গহন হয় হারা।

ক্ষমার দীপ্তি দেয় স্বর্গের আলো প্রেমের আনন্দের।।

বজ্রসেন।

ক্ষমিতে পারিলাম না যে

ক্ষমো হে মম দীনতা

পাপজনশরণ প্রভু!

মরিছে তাপে মরিছে লাজে

প্রেমের বলহীনতা—

ক্ষমো হে মম দীনতা।

প্রিয়ারে নিতে পারিনি বুকে, প্রেমেরে আমি হেনেছি।

পাপীরে দিতে শাস্তি শুধু পাপের ডেকে এনেছি।

জানি গো তুমি ক্ষমিবে তারে

যে অভাগিনী পাপের ভারে

চরণে তব বিনতা—

ক্ষমিবে না, ক্ষমিবে না আমার ক্ষমাহীনতা।।

এসো এসো এসো প্রিয়ে,

মরণলোক হতে নূতন প্রাণ নিয়ে।

নিষ্ফল মম জীবন, নীরস মম ভুবন—

শূন্য হৃদয় পূরণ করো মাধুরীসুধা দিয়ে।।

হায় রে নূপুর,

তার করুণ চরণ ত্যজিলি, হারালি কলগুঞ্জনসুর।

নীরব ক্রন্দনে বেদনাবন্ধনে

রাখিলি ধরিয়া বিরহ ভরিয়া স্মরণ সুমধুর।

তোর ঝঙ্কারহীন ধিক্কারে কাঁদে প্রাণ মম নিষ্ঠুর।।

শ্যামা।

এসেছি, প্রিয়তম।—

ক্ষমো মোরে ক্ষমো।

গেল না, গেল না কেন কঠিন পরান মম

তব নিঠুর করুণ করে।।

বজ্রসেন।

কেন এলি, কেন এলি,কেন এলি ফিরে—

যাও যাও, চলে যাও।।

বজ্রসেন।

ধিক্ ধিক্ ওরে মুগ্ধ,কেন চাস্ ফিরে ফিরে।

এ যে দূষিত নিষ্ঠুর স্বপ্ন,

এ যে মোহবাষ্পঘন কুজ্ঝটিকা—

দীর্ণ করিবি না কি রে।

অশুচি প্রেমের উচ্ছিষ্টে

নিদারুণ বিষ—

লোভ না রাখিস

প্রেতবাস তোর ভগ্ন মন্দিরে।

নির্মম বিচ্ছেদসাধনায়

পাপক্ষালন হোক—

না কোরো মিথ্যা শোক,

দুঃখের তপস্বী রে—

স্মৃতিশৃঙ্খল করো ছিন্ন—

আয় বাহিরে,

আয় বাহিরে।

নেপথ্যে।

কঠিন বেদনার তাপস দোঁহে

যাও চিরবিরহের সাধনায়।

ফিরো না, ফিরো না-ভুলো না মোহে।

গভীর বিষাদের শান্তি পাও হৃদয়ে,

জয়ী হও অন্তরবিদ্রোহে।

যাক পিয়াসা,ঘুচাক দুরাশা,

স্বপ্ন-আবেশ-বিহীন পথে

যাও বাঁধনহারা

তাপবিহীন মধুর স্মৃতি নীরবে ব’হে।।
1 | 2 | 3 | 4 | 5