শ্যামা।

এবার ভাসিয়ে দিতে হবে আমার এই তরী।

তীরে বসে যায় বেলা, মরি গো মরি।

ফুল ফোটান সারা ক’রে

বসন্ত যে গেল স’রে—

নিয়ে ঝরা ফুলের ডালা বলো কি করি।

জল উঠিছে ছল্‌ছলিয়ে, ঢেউ উঠেছে দুলে—

মর্মরিয়ে ঝরে পাতা বিজন তরুমূলে।

শূন্যমনে কোথায় তাকাস—

সকল বাতাস সকল আকাশ

ওই পারের ওই বাঁশির সুরে উঠে শিহরি।

বজ্রসেন।

কহো কহো মোরে প্রিয়ে,

আমারা করেছ মুক্ত কী সম্পদ দিয়ে।

অয়ি বিদেশিনী,

তোমার কাছে আমি কত ঋণে ঋণী।।

শ্যামা।

নহে নহে নহে। সে কথা এখন নহে।।

ওই রে তরী দিল খুলে।

তোর বোঝা কে নেবে তুলে।

সামনে যখন যাবি ওরে,

থাক্-না পিছন পিছে পড়ে—

পিঠে তার বইতে গেলে

একলা প’ড়ে রইবি কূলে।

ঘরের বোঝা টেনে টেনে

পারের ঘাটে রাখলি এনে—

তাই যে তোরে বারে বারে

ফিরতে হল গেলি ভুলে।

ডাক্ রে অবার মাঝিরে ডাক্,

বোঝা তোমার যাক ভেসে যাক—

জীবনখানি উজাড় ক’রে

সঁপে দে তার চরণমূলে।।

বজ্রসেন।

কী করিয়া সাধিলে অসাধ্য ব্রত কহো বিবরিয়া।

জানি যদি,প্রিয়ে, শোধ দিব এ জীবন দিয়ে—

এই মোর পণ।।

শ্যামা।

নহে নহে নহে। সে কথা এখন নহে।।

তোমা লাগি যা করেছি কঠিন সে কাজ,

আরো সুকঠিন আজ তোমারে সে কথা বলা—

বালক কিশোর, উত্তীয় তার নাম—

ব্যর্থ প্রেমে মোর মত্ত অধীর।

মোর অনুনয়ে তব চুরি-অপবাদ

নিজ’পরে লয়ে সঁপিছে আপন প্রাণ।

এ জীবনে মম, ওগো সর্বোত্তম,

সর্বাধিক মোর এই পাপ

তোমার লাগিয়া।।

বজ্রসেন।

কাঁদিতে হবে রে, রে পাপিষ্ঠা,

জীবনে পাবি না শান্তি।

ভাঙিবে ভাঙিবে কলুষনীড় বজ্র-আঘাতে।

কোথা তুই লুকাবি মুখ মৃত্যু-আঁধারে।।

শ্যামা।

ক্ষমা কর নাথ, ক্ষমা করো।

এ পাপের যে অভিসম্পাত

হোক বিধাতার হাতে নিদারুণতর।

তুমি ক্ষমা করো।।

বজ্রসেন।

এ জন্মের লাগি

তোর পাপমূল্যে কেনা মহাপাপভাগী

এ জীবন করিলি ধিক্‌কৃত। কলঙকিনী,

ধিক্ নিশ্বাস মোর তোর কাছে ঋণী।।

শ্যামা।

তোমার কাছে দোষ করি নাই,

দোষ করি নাই,

দোষী আমি বিধাতার পায়ে;

তিনি করিবেন রোষ—

সহিব নীরবে।

তুমি যদি না করো দয়া

সবে না, সবে না,সবে না।।

বজ্রসেন।

তবু ছাড়িবি নে মোরে?

শ্যামা।

ছাড়িব না, ছাড়িব না।

তোমা লাগি পাপ নাথ,

তুমি করো মর্মাঘাত।

ছাড়িব না।।

নেপথ্যে।

হায়, এ কী সমাপন! অমৃতপাত্র ভাঙিলি,

করিলি মৃত্যুরে সমর্পণ।

এ দুর্লভ প্রেম মূল্য হারালো হারালো

কলঙ্কে অসম্মানে।।
1 | 2 | 3 | 4 | 5