বারান্দায় সোমশংকর। গহনার বাক্স খুলে জহুরি গহনা দেখাচ্ছে। কাপড়ের গাঁঠরি নিয়ে অপেক্ষা করছে কাশ্মীরী দোকানদার।

বারান্দায় সোমশংকর। গহনার বাক্স খুলে জহুরি গহনা দেখাচ্ছে। কাপড়ের গাঁঠরি নিয়ে অপেক্ষা করছে কাশ্মীরী দোকানদার।

বাঁশরি।

কিছু বলবার আছে।

সোমশংকর জহুরি ও কাশ্মীরীকে ইঙ্গিতে বিদায় করলে।

সোমশংকর জহুরি ও কাশ্মীরীকে ইঙ্গিতে বিদায় করলে।

সোমশংকর।

ভেবেছিলুম আজই যাব তোমার কাছে।

বাঁশরি।

ও-সব কথা থাক্‌। ভয় নেই, কান্নাকাটি করতে আসি নি। তবু আর কিছু না হোক তোমার ভাবনা ভাববার অধিকার একদিন দিয়েছ আমাকে। তাই একটা কথা জিজ্ঞাসা করি-- জান সুষমা তোমাকে ভালোবাসে না?

সোমশংকর।

জানি।

বাঁশরি।

তাতে তোমার কিছুই যায় আসে না?

সোমশংকর।

কিছুই না।

বাঁশরি।

তা হলে সংসারযাত্রাটা কিরকম হবে।

সোমশংকর।

সংসারযাত্রার কথা ভাবছিই নে।

বাঁশরি।

তবে কিসের কথা ভাবছ।

সোমশংকর।

একমাত্র সুষমার কথা।

বাঁশরি।

অর্থাৎ ভাবছ, তোমাকে ভালো না বেসেও কী করে সুখী হবে ঐ মেয়ে।

সোমশংকর।

না, তা নয়। সুখী হবার কথা সুষমা ভাবে না--ভালোবাসারও দরকার নেই তার

বাঁশরি।

কিসের দরকার আছে তার, টাকার?

সোমশংকর।

তোমার যোগ্য কথা হল না, বাঁশি।

বাঁশরি।

আচ্ছা, ভুল করেছি। কিন্তু, প্রশ্নটার উত্তর বাকি। কিসের দরকার আছে সুষমার।

সোমশংকর।

ওর একটি ব্রত আছে। ওর জীবনে সমস্ত দরকার তাই নিয়ে, তাকে সাধ্যমতো সার্থক করা আমারও ব্রত।

বাঁশরি।

ওর ব্রত আগে, তারই পশ্চাতে তোমার-- পুরুষের মতো শোনাচ্ছে না, এ কথা ক্ষত্রিয়ের মতো নয়ই। এতবড়ো পুরুষকে মন্ত্র পড়িয়েছে ঐ সন্ন্যাসী। বুদ্ধিকে দিয়েছে ঘোলা করে, দৃষ্টিকে দিয়েছে চাপা। শুনলুম সব, ভালো হল। গেল আমার শ্রদ্ধা ভেঙে, গেল আমার বন্ধন ছিঁড়ে। বয়স্ক শিশুকে মানুষ করবার কাজ আমার নয়, সে-কাজের ভার সম্পূর্ণ দিলেম ছেড়ে ঐ মেয়ের হাতে।

পুরন্দরের প্রবেশ

পুরন্দরের প্রবেশ

সোমশংকর প্রণাম করলে, অগ্নিশিখার মতো বাঁশরি উঠে দাঁড়াল তার সামনে।

সোমশংকর প্রণাম করলে, অগ্নিশিখার মতো বাঁশরি উঠে দাঁড়াল তার সামনে।

বাঁশরি।

আজ রাগ করবেন না, ধৈর্য ধরবেন, কিছু প্রশ্ন করব।

[ পুরন্দরের ইঙ্গিতে সোমশংকরের প্রস্থান

[ পুরন্দরের ইঙ্গিতে সোমশংকরের প্রস্থান

পুরন্দর।

আচ্ছা, বলো তুমি।

বাঁশরি।

জিজ্ঞাসা করি, সোমশংকরকে শ্রদ্ধা করেন আপনি? ওকে খেলার পুতুল বলে মনে করেন না?

পুরন্দর।

বিশেষ শ্রদ্ধা করি।

বাঁশরি।

তবে কেন এমন মেয়ের ভার দিচ্ছেন ওর হাতে যে ওকে ভালোবাসে না।

পুরন্দর।

জান না এ অতি মহৎ ভার, একই কালে ক্ষত্রিয়ের পুরস্কার এবং পরীক্ষা। সোমশংকরই এই ভার গ্রহণ করবার যোগ্য।

বাঁশরি।

যোগ্য ব'লেই ওর চিরজীবনের সুখ নষ্ট করতে চান আপনি?

পুরন্দর।

সুখকে উপেক্ষা করতে পারে ঐ বীর মনের আনন্দে।

বাঁশরি।

আপনি মানবপ্রকৃতিকে মানেন না?

পুরন্দর।

মানবপ্রকৃতিকেই মানি, তার চেয়ে নিচের প্রকৃতিকে নয়।

বাঁশরি।

এতই যদি হল, ওরা বিয়ে নাই করত?

পুরন্দর।

ব্রতকে নিষ্কামভাবে পোষণ করবে মেয়ে, ব্রতকে নিষ্কামভাবে প্রয়োগ করবে পুরুষ, এই কথা মনে করে দুটি মেয়ে-পুরুষ অনেকদিন খুঁজেছি। দৈবাৎ পেয়েছি।

বাঁশরি।

পুরুষ ব'লেই বুঝতে পারছ না যে, ভালোবাসা নইলে দুজন মানুষকে মেলানো যায় না।

পুরন্দর।

মেয়ে ব'লেই বুঝতে ইচ্ছা করছ না, ভালোবাসার মিলনে মোহ আছে, প্রেমের মিলনে মোহ নেই।

বাঁশরি।

মোহ চাই, চাই সন্ন্যাসী, মোহ নইলে সৃষ্টি কিসের! তোমার মোহ তোমার ব্রত নিয়ে-- সেই ব্রতের টানে তুমি মানুষের মনগুলো নিয়ে কেটে ছিঁড়ে জোড়াতাড়া দিতে বসেছ-- বুঝতেই পারছ না তারা সজীব পদার্থ, তোমার প্ল্যানের মধ্যে খাপ-খাওয়াবার জন্য তৈরি হয় নি। আমাদের মোহ সুন্দর, আর ভয়ংকর তোমাদের মোহ।

পুরন্দর।

মোহ নইলে সৃষ্টি হয় না, মোহ ভাঙলে প্রলয়, এ কথা মানতে রাজি আছি। কিন্তু, তুমিও এ কথা মনে রেখো, আমার সৃষ্টি তোমার সৃষ্টির চেয়ে অনেক উপরে। তাই আমি নির্মম হয়ে তোমার সুখ দেব ছারখার করে। আমিও চাইব না সুখ; যারা আসবে আমার কাছে সুখের দিক থেকে, মুখ দেব ফিরিয়ে। আমার ব্রতই আমার সৃষ্টি, তার যা প্রাপ্য তা তাকে দিতেই হবে। যতই কঠিন হোক।

বাঁশরি।

সেইজন্যেই সজীব নয় তোমার আইডিয়া, সন্ন্যাসী। তুমি জান মন্ত্র, জান না মানুষকে। মানুষের মর্মগ্রন্থি টেনে ছিঁড়ে সেইখানে তোমার কেঠো আইডিয়ার ব্যাণ্ডেজ বেঁধে অসহ্য ব্যথার 'পরে মস্ত মস্ত বিশেষণ চাপা দিতে চাও। তাকে বল শান্তি? টিঁকবে না ব্যাণ্ডেজ্‌, ব্যথা যাবে থেকে। তোমরা সব অমানুষ, মানুষের বসতিতে এলে কী করতে! যাও-না তোমাদের গুহাগহ্বরে বদরিকাশ্রমে। সেখানে মনের সাধে নিজেদের শুকিয়ে পাথর করে ফেলো। আমরা সামান্য মানুষ, আমাদের তৃষ্ণার জল মুখের থেকে কেড়ে নিয়ে মরুভূমিতে ছড়িয়ে দিয়ে তাকে সাধনা বলে প্রচার করতে চাও কোন্‌ করুণায়! ব্যর্থজীবনের অভিশাপ লাগবে না তোমাকে? যা নিজে ভোগ করতে জান না তা ভোগ করতে দেবে না ক্ষুধিতকে?

সুষমার প্রবেশ

এই-যে সুষমা, শোন্‌ বলি। মরিয়া হয়ে মেয়েরা চিতার আগুনে মরেছে অনেক, ভেবেছে তাতেই পরমার্থ। তেমনি করেই নিজের হাতে নিজের ভাগ্যে আগুন লাগিয়ে দিনে দিনে মরতে চাস জ্বলে জ্বলে। চাস নে তুই ভালোবাসা, কিন্তু যে-মেয়ে চায়, পাষাণ সে করে নি আপন নারীর প্রাণ, কেন কেড়ে নিতে এলি তার চিরজীবনের আনন্দ। এই আমি আজ বলে দিলুম তোকে, ঘোড়ায় চড়িস, শিকার করিস, সন্ন্যাসীর কাছে মন্ত্র নিস, তবু তুই পুরুষ নোস-- আইডিয়ার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে তোর দিন কাটবে না গো, তোর রাত বিছিয়ে দেবে কাঁটার শয়ন।

সোমশংকরের প্রবেশ

সোমশংকরের প্রবেশ

সোমশংকর।

বাঁশি, শান্ত হও, চলো এখান থেকে।

বাঁশরি।

যাব না তো কী! মনে কোরো না মরব বুক ফেটে। জীবন হবে চিরচিতানলের শ্মশান। কখনও এমন বিচলিত দশা হয় নি আমার। আজ কেন এল বন্যার মতো এই পাগলামি। লজ্জা! লজ্জা! লজ্জা! তোমাদের তিনজনের সামনে এই অপমান। থামো, সোমশংকর, আমাকে দয়া করতে এসো না। মুছে ফেলব এই অপমান, কোনো চিহ্ন থাকবে না এর কাল। এই আমি বলে গেলুম।

[ বাঁশরি ও সুষমার প্রস্থান

[ বাঁশরি ও সুষমার প্রস্থান

পুরন্দর।

সোমশংকর, একটা কথা জিজ্ঞাসা করি।

সোমশংকর।

বলুন।

পুরন্দর।

যে-ব্রত তুমি স্বীকার করেছ তা সম্পূর্ণই তোমার আপন হয়েছে কি। তার ক্রিয়া চলেছে তোমার প্রাণক্রিয়ার সঙ্গে?

সোমশংকর।

কেন সন্দেহ বোধ করছেন।

পুরন্দর।

আমার প্রতি ভক্তিতেই যদি এই সংকল্প গ্রহণ করে থাক তবে এখনই ফেলে দাও এই বোঝা।

সোমশংকর।

এমন কথা কেন বলছেন আজ। আমার মধ্যে দুর্বলতার লক্ষণ কিছু দেখছেন কি।

পুরন্দর।

মোহিনী শক্তি আছে আমার, এমন কথা কেউ কেউ বলে-- শুনে লজ্জা পাই; জাদুকর নই আমি।

সোমশংকর।

আত্মার ক্রিয়াকে যারা বিশ্বাস করে না তারা তাকে বলে জাদুর ক্রিয়া।

পুরন্দর।

ব্রতের মাহাত্ম্য তার স্বাধীনতায়। যদি ভুলিয়ে থাকি তোমাকে, সে-ভুল ভাঙতে হবে। গুরুবাক্য বিষ সে-বাক্য যদি তোমার নিজের বাক্য না হয়।

সোমশংকর।

সন্ন্যাসী, যে-ব্রত নিয়েছি সে আজ আমার রক্তে বইছে তেজরূপে, জ্বলছে বুকের মধ্যে হোমাগ্নির মতো। মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েছি, আজ আমার দ্বিধা কোথায়।

পুরন্দর।

এই কথাই শুনতে চেয়েছিলুম তোমার মুখ থেকে। আর-একটি কথা বাকি আছে। কেউ কেউ প্রশ্ন করে, কেন সুষমার বিবাহ দিলুম তোমার সঙ্গে। তোমারই কাছ থেকে আমি তার উত্তর চাই।

সোমশংকর।

এতদিনের তপস্যায় এই নারীর চিত্তকে তুমি যজ্ঞের অগ্নিশিখার মতো ঊর্ধ্বে জ্বালিয়ে তুলেছ, আমারই 'পরে ভার দিলে এই অনির্বাণ অগ্নিকে চিরদিন রক্ষা করতে।

পুরন্দর।

বৎস, যতদিন রক্ষা করবে তার দ্বারা তুমি আপনাকেই রক্ষা করতে পারবে। ঐ তোমার মূর্তিমান ধর্ম, রইল তোমার সঙ্গে-- ধর্মো রক্ষতি রক্ষিতম্‌। আমার বন্ধন থেকে তুমি মুক্ত, সেই সঙ্গে শিষ্যের বন্ধন থেকে আমিও মুক্তি পেলুম। তোমাদের বিবাহের পর আমাকে যেতে হবে দূরে-- হয়তো কোনোদিন আমার আর দেখা পাবে না। আমার এই আশীর্বাদ রইল, জানথ আত্মানম্‌--আপনাকে পূর্ণ করে জানো।

[ পুরন্দরের প্রস্থান। সোমশংকর অনেকক্ষণ স্তব্ধ হয়ে রইল

[ পুরন্দরের প্রস্থান। সোমশংকর অনেকক্ষণ স্তব্ধ হয়ে রইল

সোমশংকর।

ওরে ভোলা, সেই নতুন গানটা--

গান

ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলে আগুন জ্বালো।

একলা রাতের অন্ধকারে আমি চাই পথের আলো।

দুন্দুভিতে হল রে কার আঘাত শুরু,

বুকের মধ্যে উঠল বেজে গুরু গুরু,

পালায় ছুটে সুপ্তিরাতের স্বপ্নে-দেখা মন্দ ভালো।

নিরুদ্দেশের পথিক, আমায় ডাক দিলে কি --

দেখতে তোমায় না যদি পাই নাই-বা দেখি।

ভিতর থেকে ঘুচিয়ে দিলে চাওয়া পাওয়া,

ভাবনাতে মোর লাগিয়ে দিলে ঝড়ের হাওয়া,

বজ্রশিখায় এক পলকে মিলিয়ে দিলে সাদা কালো॥

নেপথ্য থেকে।

যেতে পারি কি।

সোমশংকর।

এসো এসো।

তারকের প্রবেশ

তারকের প্রবেশ

তারক।

রাজাবাহাদুর, আজকাল তোমার কাছে আসতে কিরকম ভয়-ভয় করে।

সোমশংকর।

কোনো কারণ তো দেখি নে।

তারক।

কারণ নেই বলেই তো ভয় বেশি। আজ বাদে কাল বিয়ে কিন্তু মনে হচ্ছে যেন দ্বীপান্তরে চলেছ। ভয়ানক গাম্ভীর্য।

সোমশংকর।

বিয়েটা তো এক লোক থেকে অন্য লোকে যাত্রাই বটে।

তারক।

সব বিয়ে তা নয় রাজন্‌। নিজের কথা বলতে পারি। আমার বরযাত্রা হয়েছিল পটলডাঙা থেকে চোরবাগানে। মনের ভিতরটাও তার বেশি এগোয় নি। আমার স্ত্রীর নাম পুষ্প। রসিকবন্ধু তার কবিতায় আমাকে খেতাব দিলে পুষ্পচোর। কবিতাটার হেডিং ছিল চৌর-পঞ্চাশিকা। কবিকে প্রশ্ন করলেম, চৌর-পঞ্চাশিকার একটা কবিতাই তো দেখছি, বাকী উনপঞ্চাশটা গেল কোথায়। উত্তর পেলেম, তারা উনপঞ্চাশ পবনরূপে বরের হৃদয়গহ্বরে বেড়াচ্ছে ঘুরপাক দিয়ে।

সোমশংকর।

এর থেকে প্রমাণ হয় আমার রসিকবন্ধু নেই, তাই গাম্ভীর্য রয়েছে ঘনিয়ে।

তারক।

আমাদের পাড়ার লক্ষ্মীছাড়ার দল অশোক গুপ্তদেব বাগানে দর্মা-ঘেরা একটা পোড়ো ফর্নরিতে ক্লাব করেছে। আপিস থেকে ফিরে এসে সেইখানে সন্ধেবেলায় বিষম হল্লা করতে থাকে। সান্ত্বনা দেবার জন্যে আমরা লক্ষ্মীমন্তরা ওদের নিমন্ত্রণ করছি। তোমাকে প্রিজাইড করতে হবে।

সোমশংকর।

শুনেছি বৈকুণ্ঠলুণ্ঠন পাঁচালি লিখে ওরা আমাকে লক্ষ্মীহারী দৈত্য বানিয়েছে।

তারক।

সে কথা সত্যি। ওদের টেম্পেরেচর কমানো দরকার হয়েছে।

সোমশংকর।

বৈধ উপায়ে ওদের ঠাণ্ডা করতে রাজি আছি।

তারক।

আমাদের কমলবিলাস সেনগুপ্তকে দিয়ে একটা নিমন্ত্রণপত্র রচিয়ে নিয়ে এলুম।

সোমশংকর।

পড়ে শোনাও।

তারক।।

প্রজাপতি যাঁদের সাথে পাতিয়ে আছেন সখ্য,

আর যাঁরা সব প্রজাপতির ভবিষ্যতের লক্ষ্য,

উদরসেবার উদার ক্ষেত্রে মিলুন উভয় পক্ষ,

রসনাতে রসিয়ে উঠুক নানা রসের ভক্ষ্য।

সত্যযুগে দেবদেবীদের ডেকেছিলেন দক্ষ,

অনাহূত পড়ল এসে মেলাই যক্ষ রক্ষ,

আমরা সে-ভুল করব না তো, মোদের অন্নকক্ষ

দুই পক্ষেই অপক্ষপাত দেবে ক্ষুধার মোক্ষ।

আজও যাঁরা বাঁধন-ছাড়া ফুলিয়ে বেড়ান বক্ষ

বিদায়কালে দেব তাঁদের আশিস্‌ লক্ষ লক্ষ,

তাঁদের ভাগ্যে অবিলম্বে জুটুন কারাধ্যক্ষ,

এর পরে আর মিল মেলে না -- য র ল ব হ ক্ষ।

ঐ আসছে ওদের দল।

সুধাংশু শচীন প্রভৃতির প্রবেশ

সুধাংশু শচীন প্রভৃতির প্রবেশ

সোমশংকর।

কী উদ্দেশ্যে আগমন।

সুধাংশু।

গান শোনাব।

সোমশংকর।

তার পরে?

সুধাংশু।

তার পরে নোব্‌ল্‌ রেভেঞ্জ্‌, সুমহতী প্রতিহিংসা।

সোমশংকর।

ঐ মানুষটার কাঁধে ওটা কী। বোমা নয়?

সুধাংশু।

ক্রমশ প্রকাশ্য। এখন গান।

সোমশংকর।

কার রচনা।

শচীন।

কপিরাইটের তর্ক আছে। বিষয় অনুসারে কপিরাইট-স্বত্ব আমাদেরই, বাক্যগুলি যার তাকে আমরা গণ্য করি নে।

গান

আমরা লক্ষ্মীছাড়ার দল

ভবের পদ্মপত্রে জল॥

সদাই করছি টলোমল,

মোদের আসাযাওয়া শূন্য হাওয়া,

নাইকো ফলাফল॥

নাহি জানি করণকারণ, নাহি জানি ধরনধারণ

নাহি মানি শাসন বারণ গো--॥

আমরা আপন রোখে মনের ঝোঁকে ছিঁড়েছি শিকল।

লক্ষ্মী তোমার বাহনগুলি ধনে পুত্রে উঠুন ফুলি,

লুঠুন তোমার চরণধুলি গো --

আমরা স্কন্ধে লয়ে কাঁথা ঝুলি ফিরব ধরাতল।

তোমার বন্দরেতে বাঁধাঘাটে বোঝাই-করা সোনার পাটে

অনেক রত্ন অনেক হাটে গো,॥

আমরা নোঙরছেঁড়া ভাঙা তরী ভেসেছি কেবল।

আমরা এবার খুঁজে দেখি অকূলেতে কূল মেলে কি,

দ্বীপ আছে কি ভবসাগরে -- ॥

যদি সুখ না জোটে দেখব ডুবে কোথায় রসাতল।

আমরা জুটে সারাবেলা করব হতভাগার মেলা,

গাব গান করব খেলা গো॥

কণ্ঠে যদি সুর না আসে করব কোলাহল॥

সোমশংকর।

এবার কিঞ্চিৎ ফলাহারের আয়োজন করি।

সুধাংশু।

আগে দেবী আসুন ঘরে, তার পরে ফল কামনা করব।

সোমশংকর।

তৎপূর্বে--

সুধাংশু।

তৎপূর্বে সুমহতী প্রতিহিংসা। (গাঁঠরি থেকে কিংখাবের আসন বেরল) লক্ষ্মীর সঙ্গে তাঁর ভক্তদের যোগ থাকবে এই আসনটিতে। তোমাদের ঘরের মাটি রইল তোমাদের, তার উপরে আসনটা রইল আমাদেরই। আর তাঁর কমলাসন, সে আছে আমাদের হৃদয়ের মধ্যে।

সোমশংকর।

কী তোমাদের বলব। বলবার কথা আমি জানি নে।
1 | 2 | 3