মুরলা

মুরলা

[কবির প্রবেশ]

[কবির প্রবেশ]

কবি।

সকাল হইতে, মুরলা সখি লো,

খুঁজিয়া বেড়াই তোরে,

বড়ই অধীর-হরষে আমার

হৃদয় গিয়েছে ভরে।

পারি নে রাখিতে প্রাণের উচ্ছ্বাস,

আকুল ব্যাকুল করিতে প্রকাশ,

অধীর হইয়া সকাল হইতে

খুঁজিয়া বেড়াই তোরে।

তোরে না কহিলে হৃদয়ের কথা

মন শান্তি নাহি মানে;

কেন, সখি, তুই ব'সে রয়েছিস্‌

একা একা এই খানে?

দেখ, সখি, আজ গিয়েছিনু আমি

প্রমোদকাননে তার,

গাছের ছায়াতে আপনার মনে

বসেছিনু একধার।--

মুরলা, হেথায় অন্ধকার ঘোর,

দেখিতে পাই নে মুখখানি তোর,

এত অন্ধকার ভাল নাহি লাগে,

ওই খানে যাই উঠে।

ওখানে পড়েছে রবির কিরণ,

সমুখে সরসী হাসিছে কেমন,

গাছের উপরে শাখা শাখা ভরে

বকুল রয়েছে ফুটে।

এই খানে আয়, এই খানে বোস্‌!

শোন্‌ সখি তার পরে--

গাছের তলায় ছিলাম বসিয়া

মগন ভাবনা-ভরে।

গীতস্বর শুনি চমকি উঠিনু,

শুনিনু মধুর বাঁশরী বাজে।

গীতের প্লাবনে আকাশ পাতাল

ডুবিয়া গেল গো নিমেষমাঝে।

আকাশব্যাপিনী জোছনার, সখি,

মরমে মরমে পশিল গান!

পৃথিবী-ডুবান' জোছনারে, সখি,

ডুবায়ে দিল সে মধুর তান!

একটি একটি করি কথা তার

পশিতে লাগিল শ্রবণে যত,

শোণিত লাগিল উঠিতে পড়িতে,

হৃদয় হইল পাগল-মত।

একটি একটি একটি করিয়া

গাঁথিতে লাগিনু কথা,

গান গাওয়া তার ফুরাল' যখন

ফুরাল' আমার গাঁথা।

মুরলা, সখি লো, বল্‌ দেখি মোরে

কি গান গাহিতেছিল মধুস্বরে

বিশ্ব করি বিমোহিত!

আমারি রচিত-- আমারি রচিত--

আমারি রচিত গীত!

মুরলা, সখি লো, বল্‌ দেখি মোরে

কে গান গাহিতেছিল মধুস্বরে

উনমাদ করি মন!

আমারি নলিনী-- আমারি নলিনী--

আমারি হৃদয়ধন।

সখি, মোর সেই মনের কথা,

সখি, মোর সেই গানের কথা,

দিয়াছে মাজিয়া তার স্বর দিয়া--

প্রতি কথা তার উঠে উজলিয়া

মেঘে রবিকর যথা।

শুনিবি কি গান গাহিতেছিল সে

অমৃতমধুর রবে?

শোন্‌ মন দিয়ে তবে।

গান

কে তুমি গো খুলিয়াছ স্বর্গের দুয়ার?

ঢালিতেছ এত সুখ, ভেঙ্গে গেল-- গেল বুক--

যেন এত সুখ হৃদে ধরে না গো আর!

তোমার সৌন্দর্য্যভারে দুর্ব্বল হৃদয় হা রে

অভিভূত হয়ে যেন পড়েছে আমার!

এস তবে হৃদয়েতে, রেখেছি আসন পেতে--

ঘুচাও এ হৃদয়ের সকল আঁধার!

তোমার চরণে দিনু প্রেম-উপহার--

না যদি চাও গো দিতে প্রতিদান তার,

নাই বা দিলে তা বালা, থাক' হৃদি করি আলা,

হৃদয়ে থাকুক্‌ জেগে সৌন্দর্য্য তোমার!
1...7 | 8 | 9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 | 15...35