অনিল ও ললিতা

অনিল ও ললিতা

ললিতা।

ভেঙ্গেছে ভেঙ্গেছে যত লজ্জা ললিতার।

মুক্তকণ্ঠে শুধাইছে, সখা, বার বার--

কি করিব বল দেখি তোমার লাগিয়া?

কি করিলে জুড়াইতে পারিব ও হিয়া?

এই পেতে দিনু বুক-- রাখ, সখা, রাখ মুখ--

ঘুমাও তুমি গো, আমি রহিব জাগিয়া!

খুলে বল, বল সখা, কি দুঃখ তোমার!

অশ্রুজলে মিশাইব অশ্রুজলধার।

একদিন বলেছিলে মোর ভালবাসা

পেলেই পুরিবে তব প্রণয়পিপাসা!

বলেছিলে সব তব করিছে নির্ভর

পৃথিবীর সুখ দুঃখ আমারি উপর।

কই সখা? প্রাণ মন করেছি ত সমর্পণ,

দিয়েছি ত যাহা কিছু ছিল আপনার--

তবু কেন শুকাল না অশ্রুবারিধার?

অনিল।

ললিতা রে, ললিতা রে, আমার কিসের দুখ

হৃদয়ে জাগিছে যবে ওই তোর মধুমুখ!

জীবননিশীথ মোর ও রবিকিরণে তোর

একেবারে মিশায়েছি আপনারে পাশরিয়া--

মাঝে মাঝে হৃদাকাশে যদিও বা মেঘ আসে,

ভিতরে তবুও হাসে সে রবিকিরণ প্রিয়া!

ওই স্মিত আঁখি দুটি হৃদয়ে রহিয়া ফুটি

রেখেছে ফুল ফুটায়ে প্রাণের বিজন বনে!

তব প্রেমসুধাধারা ঝরিয়া নির্ঝর-পারা

তুলেছে হরিত করি এই মরুভূমি-মনে।

তব হাসি জ্যোৎস্না-সম এ মুগ্ধ নয়নে মম

সারা জগতের মুখে ফুটায়ে রেখেছে হাসি।

তুমি সদা আছ কাছে তাই দিবালোক আছে,

নহিলে জগতে মোর কাঁদিত আঁধাররাশি।

আয় সখি, বুকে আয়, উলসি উঠেছে প্রাণ--

ত্বরা ক'রে যা লো বালা, বাঁশি আন্‌, বীণা আন্‌!

আজি এ মধুর সাঁঝে রাখি এ বুকের মাঝে

মধুর মুখানি তোর, ধীরে ধীরে কর্‌ গান।

ললিতা।

না সখা, মনের ব্যথা কোরো না গোপন!

যবে অশ্রুজল হায় উচ্ছ্বসি উঠিতে চায়,

রুধিয়া রেখো না তাহা আমারি কারণ।

চিনি সখা, চিনি তব ও দারুণ হাসি,

ওর চেয়ে কত ভাল অশ্রুজলরাশি।

মাথা খাও, অভাগীরে কোরো না বঞ্চনা,

ছদ্মবেশে আবরিয়া রেখো না যন্ত্রণা!

মমতার অশ্রুজলে নিভাইব সে অনলে,

ভাল যদি বাস তবে রাখ এ প্রার্থনা!
1...10 | 11 | 12 | 13 | 14 | 15 | 16 | 17 | 18...35