কোটালের প্রবেশ

কোটালের প্রবেশ

কোটাল।

পুরি হতে পালিয়েছে যে পুরসুন্দরী

কোথা তারে ধরি, কোথা তারে ধরি।

রক্ষা রবে না, রক্ষা রবে না--

এমন ক্ষতি রাজার সবে না,

রক্ষা রবে না।

বন হতে কেন গেল অশোকমঞ্জরী

ফাল্গুনের অঙ্গন শূন্য করি।

ওরে কে তুই ভুলালি,

তারে কে তুই ভুলালি--

ফিরিয়ে দে তারে মোদের বনের দুলালী,

তারে কে তুই ভুলালি।

[প্রস্থান

[প্রস্থান

সখীগণ।

রাজভবনের সমাদর সম্মান ছেড়ে

এল আমাদের সখী।

দেরি কোরো না, দেরি কোরো না--

কেমনে যাবি অজানা পথে

অন্ধকারে দিক নিরখি।

অচেনা প্রেমের চমক লেগে

প্রণয়রাতে সে উঠেছে জেগে--

ধ্রুবতারাকে পিছনে রেখে

ধূমকেতুকে চলেছে লখি।

কাল সকালে পুরোনো পথে

আর কখনো ফিরিবে ও কি।

দেরি কোরো না, দেরি কোরো না, দেরি কোরো না।

প্রহরী।

দাঁড়াও, কোথা চলো, তোমরা কে বলো বলো।

সখীগণ।

আমরা আহিরিনী, সারা হল বিকিকিনি--

দূর গাঁয়ে চলি ধেয়ে আমরা বিদেশী মেয়ে।

প্রহরী।

ঘাটে বসে হোথা ও কে।

সখীগণ।

সাথী মোদের ও যে নেয়ে--

যেতে হবে দূর পারে,

এনেছি তাই ডেকে তারে।

নিয়ে যাবে তরী বেয়ে

সাথী মোদের ও যে নেয়ে--

ওগো প্রহরী,বাধা দিয়ো না, বাধা দিয়ো না,

মিনতি করি,

ওগো প্রহরী।

[প্রস্থান

[প্রস্থান

সখী।

কোন্‌ বাঁধনের গ্রন্থি বাঁধিল দুই অজানারে

এ কী সংশয়েরি অন্ধকারে।

দিশাহারা হাওয়ায় তরঙ্গদোলায়

মিলনতরণীখানি ধায় রে

কোন্‌ বিচ্ছেদের পারে॥

বজ্রসেন ও শ্যামার প্রবেশ

বজ্রসেন ও শ্যামার প্রবেশ

বজ্রসেন।

হৃদয় বসন্তবনে যে মাধুরী বিকাশিল

সেই প্রেম সেই মালিকায় রূপ নিল, রূপ নিল।

এই ফুলহারে প্রেয়সী তোমারে

বরণ করি

অক্ষয় মধুর সুধাময়

হোক মিলনবিভাবরী।

প্রেয়সী তোমায় প্রাণবেদিকায়

প্রেমের পূজায় বরণ করি॥

কহো কহো মোরে প্রিয়ে,

আমারে করেছ মুক্ত কী সম্পদ দিয়ে।

অয়ি বিদেশিনী,

তোমার কাছে আমি কত ঋণে ঋণী।

শ্যামা।

নহে নহে নহে-- সে কথা এখন নহে।

সহচরী।

নীরবে থাকিস সখী,ও তুই নীরবে থাকিস।

তোর প্রেমেতে আছে যে কাঁটা

তারে আপন বুকে বিঁধিয়ে রাখিস।

দয়িতেরে দিয়েছিলি সুধা,

আজিও তাহে মেটে নি ক্ষুধা--

এখনি তাহে মিশাবি কি বিষ।

যে জ্বলনে তুই মরিবি মরমে মরমে

কেন তারে বাহিরে ডাকিস॥

বজ্রসেন।

কী করিয়া সাধিলে অসাধ্য ব্রত

কহো বিবরিয়া।

জানি যদি প্রিয়ে, শোধ দিব

এ জীবন দিয়ে এই মোর পণ॥

শ্যামা।

তোমা লাগি যা করেছি

কঠিন সে কাজ,

আরো সুকঠিন আজ তোমারে সে কথা বলা।

বালক কিশোর উত্তীয় তার নাম,

ব্যর্থ প্রেমে মোর মত্ত অধীর;

মোর অনুনয়ে তব চুরি-অপবাদ

নিজ-'পরে লয়ে

সঁপেছে আপন প্রাণ।

বজ্রসেন।

কাঁদিতে হবে রে, রে পাপিষ্ঠা,

জীবনে পাবি না শান্তি।

ভাঙিবে ভাঙিবে কলুষনীড় বজ্র-আঘাতে।

শ্যামা।

ক্ষমা করো নাথ, ক্ষমা করো।

এ পাপের যে অভিসম্পাত

হোক বিধাতার হাতে নিদারুণতর।

তুমি ক্ষমা করো, তুমি ক্ষমা করো।

বজ্রসেন।

এ জন্মের লাগি

তোর পাপমূল্যে কেনা

মহাপাপভাগী

এ জীবন করিলি ধিক্‌কৃত।

কলঙ্কিনী ধিক্‌ নিশ্বাস মোর

তোর কাছে ঋণী।

শ্যামা।

তোমার কাছে দোষ করি নাই।

দোষ করি নাই।

দোষী আমি বিধাতার পায়ে,

তিনি করিবেন রোষ--

সহিব নীরবে।

তুমি যদি না করো দয়া

সবে না, সবে না,সবে না॥

বজ্রসেন।

তবু ছাড়িবি না মোরে?

শ্যামা।

ছাড়িব না, ছাড়িব না, ছাড়িব না,

তোমা লাগি পাপ নাথ,

তুমি করো মর্মাঘাত।

ছাড়িব না।

শ্যামাকে বজ্রসেনের আঘাত ও শ্যামার পতন

শ্যামাকে বজ্রসেনের আঘাত ও শ্যামার পতন

[বজ্রসেনের প্রস্থান

[বজ্রসেনের প্রস্থান

নেপথ্যে।

হায় এ কী সমাপন!

অমৃতপাত্র ভাঙিলি,

করিলি মৃত্যুরে সমর্পণ;

এ দুর্লভ প্রেম মূল্য হারালো

কলঙ্কে, অসম্মানে॥

বজ্রসেনের প্রবেশ

বজ্রসেনের প্রবেশ

পল্লীরমণীরা।

তোমায় দেখে মনে লাগে ব্যথা,

হায় বিদেশী পান্থ।

এই দারুণ রৌদ্রে, এই তপ্ত বালুকায়

তুমি কি পথভ্রান্ত।

দুই চক্ষুতে এ কী দাহ

জানি নে, জানি নে, জানি নে, কী যে চাহ।

চলো চলো আমাদের ঘরে,

চলো চলো ক্ষণেকের তরে,

পাবে ছায়া, পাবে জল।

সব তাপ হবে তব শান্ত।

কথা কেন নেয় না কানে,

কোথা চ'লে যায় কে জানে।

মরণের কোন্‌ দূত ওরে

করে দিল বুঝি উদ্‌ভ্রান্ত।

[সকলের প্রস্থান

[সকলের প্রস্থান

বজ্রসেনের প্রবেশ

বজ্রসেনের প্রবেশ

বজ্রসেন।

এসো এসো এসো প্রিয়ে,

মরণলোক হতে নূতন প্রাণ নিয়ে।

নিষ্ফল মম জীবন,

নীরস মম ভুবন,

শূন্য হৃদয় পূরণ করো

মাধুরীসুধা দিয়ে।

সহসা নূপুর দেখিয়া কুড়াইয়া লইল

সহসা নূপুর দেখিয়া কুড়াইয়া লইল

[প্রস্থান

[প্রস্থান

নেপথ্যে।

সব কিছু কেন নিল না, নিল না,

নিল না ভালোবাসা--

ভালো আর মন্দেরে।

আপনাতে কেন মিটাল না

যত কিছু দ্বন্দ্বেরে--

ভালো আর মন্দেরে।

নদী নিয়ে আসে পঙ্কিল জলধারা

সাগরহৃদয়ে গহনে হয় হারা,

ক্ষমার দীপ্তি দেয় স্বর্গের আলো

প্রেমের আনন্দেরে--

ভালো আর মন্দেরে॥

বজ্রসেনের প্রবেশ

বজ্রসেনের প্রবেশ

বজ্রসেন।

এসো এসো এসো প্রিয়ে,

মরণলোক হতে নূতন প্রাণ নিয়ে।

শ্যামার প্রবেশ

শ্যামার প্রবেশ

শ্যামা।

এসেছি প্রিয়তম, ক্ষমো মোরে ক্ষমো।

গেল না গেল না কেন কঠিন পরান মম--

তব নিঠুর করুণ করে! ক্ষমো মোরে।

বজ্রসেন।

কেন এলি, কেন এলি, কেন এলি ফিরে।

যাও যাও যাও যাও, চলে যাও।

বজ্রসেন।

যাও যাও যাও যাও, চলে যাও।

[বজ্রসেনকে প্রণাম করে শ্যামার প্রস্থান

[বজ্রসেনকে প্রণাম করে শ্যামার প্রস্থান

বজ্রসেন।

ক্ষমিতে পারিলাম না যে

ক্ষমো হে মম দীনতা,

পাপীজনশরণ প্রভু।

মরিছে তাপে মরিছে লাজে

প্রেমের বলহীনতা--

ক্ষমো হে মম দীনতা,

পাপীজনশরণ প্রভু।

প্রিয়ারে নিতে পারি নি বুকে,

প্রেমেরে আমি হেনেছি,

পাপীরে দিতে শাস্তি শুধু

পাপেরে ডেকে এনেছি।

জানি গো তুমি ক্ষমিবে তারে

যে অভাগিনী পাপের ভারে

চরণে তব বিনতা।

ক্ষমিবে না, ক্ষমিবে না

আমার ক্ষমাহীনতা,

পাপীজনশরণ প্রভু॥
1 | 2