উৎসব-ক্ষেত্র
বিদেশী পথিকদল ও প্রহরীর প্রবেশ
বিদেশী পথিকদল ও প্রহরীর প্রবেশ
বিরাজদত্ত।
ওগো মশায়।
প্রহরী।
কেন গো?
ভদ্রসেন।
রাস্তা কোথায়? এখানে রাজাও দেখি নে রাস্তাও দেখি নে। আমরা বিদেশী, আমাদের রাস্তা ব'লে দাও।
প্রহরী।
কিসের রাস্তা।
মাধব।
ওই যে শুনেছি আজ অধরা-রাজার দেশে উৎসব হবে। কোন্ দিক দিয়ে যাওয়া যাবে?
প্রহরী।
এখানে সব রাস্তাই রাস্তা। যেদিক দিয়ে যাবে ঠিক পৌঁছোবে। সামনে চলে যাও।
বিরাজদত্ত।
শোনো একবার কথা শোনো। বলে, সবই এক রাস্তা। তাই যদি হবে তবে এতগুলোর দরকার ছিল কী?
মাধব।
তা ভাই রাগ করিস কেন? যে দেশের যেমন ব্যবস্থা। আমাদের দেশে তো রাস্তা নেই বললেই হয় -- বাঁকাচোরা গলি, সে তো গোলকধাঁধা। আমাদের রাজা বলে, খোলা রাস্তা না থাকাই ভালো -- রাস্তা পেলেই প্রজারা বেরিয়ে চলে যাবে। এদেশে উলটো, যেতেও কেউ ঠেকায় না, আসতেও কেউ মানা করে না -- তবু মানুষও তো ঢের দেখছি -- এমন খোলা পেলে আমাদের রাজ্য উজাড় হয়ে যেত।
বিরাজদত্ত।
ওহে মাধব, তোমার ওই একটা বড়ো দোষ।
মাধব।
কী দোষ দেখলে?
বিরাজদত্ত।
নিজের দেশের তুমি বড়ো নিন্দে কর। খোলা রাস্তাটাই বুঝি ভালো হল? বলো তো ভাই ভদ্রসেন, খোলা রাস্তাটাকে বলে কিনা ভালো।
ভদ্রসেন।
ভাই বিরাজদত্ত, বরাবরই তো দেখে আসছ মাধবের ওই এক রকম ত্যাড়া বুদ্ধি। কোন্ দিন বিপদে পড়বেন -- রাজার কানে যদি যায় তাহলে ম'লে ওকে শ্মশানে ফেলবার লোক পাবেন না।
বিরাজদত্ত।
আমাদের তো ভাই এই খোলা রাস্তার দেশে এসে অবধি খেয়ে শুয়ে সুখ নেই -- দিনরাত গা-ঘিনঘিন করছে। কে আসছে কে যাচ্ছে তার কোনো ঠিক-ঠিকানাই নেই -- রাম রাম।
ভদ্রসেন।
সেও তো ওই মাধবের পরামর্শ শুনেই এসেছি। আমাদের গুষ্টিতে এমন কখনো হয় নি। আমার বাবাকে তো জান -- কতবড়ো মহাত্মা লোক ছিল -- শাস্ত্রমতে ঠিক উনপঞ্চাশ হাত মেপে গণ্ডি কেটে তার মধ্যেই সমস্ত জীবনটা কাটিয়ে দিলে -- একদিনের জন্যে তার বাইরে পা ফেলে নি। মৃত্যুর পর কথা উঠল ওই উনপঞ্চাশ হাতের মধ্যেই তো দাহ করতে হয় -- সে এক বিষম মুশকিল -- শেষকালে শাস্ত্রী বিধান দিলে উনপঞ্চাশে যে দুটো অঙ্ক আছে তার বাইরে যাবার জো নেই, অতএব ওই চার নয় উনপঞ্চাশকে উলটে নিয়ে নয় চার চুরানব্বই করে দাও -- তবেই তো তাকে বাড়ির বাইরে পোড়াতে পারি, নইলে ঘরেই দাহ করতে হত। বাবা, এত আঁটাআঁটি! এ কি যে-সে দেশ পেয়েছ!
বিরাজদত্ত।
বটেই তো, মরতে গেলেও ভাবতে হবে এ কি কম কথা।
ভদ্রসেন।
সেই দেশের মাটিতে শরীর, তবু মাধব বলে কিনা, খোলা রাস্তাই ভালো।
[ সকলের প্রস্থান
[ সকলের প্রস্থান
সদলে ঠাকুরদার প্রবেশ
সদলে ঠাকুরদার প্রবেশ
ঠাকুরদা।
ওরে দক্ষিনে হাওয়ার সঙ্গে সমান পাল্লা দিতে হবে -- হার মানলে চলবে না -- আজ সব রাস্তাই গানে ভাসিয়ে দিয়ে চলব
মেয়ের দলের প্রবেশ
মেয়ের দলের প্রবেশ
প্রথমা।
ঠাকুরদা, একটা কথা জিজ্ঞাসা করি, উৎসবটা হচ্ছে কোথায়?
ঠাকুরদা।
যেদিক চাইবে সেইদিকেই।
প্রথমা।
একেই বলে তোমাদের রাজাধিরাজের উৎসব!
ঠাকুরদা।
আমরা তো তাই বলি।
দ্বিতীয়া।
আমাদের দেশের সব চেয়ে খুদে সামন্তরাজও এর চেয়ে ঘটা করে পথে বেরোয়।
ঠাকুরদা।
নিজেকে না চেনাতে পারলে তারা যে বঞ্চিত।
তৃতীয়া।
আর তোমরা যে কোন্ না-দেখা রাজার কথা বলছ?
ঠাকুরদা।
তাঁকে না চিনতে পারলে আমরাই বঞ্চিত।
প্রথমা।
চেনবার উপায়টা কী করেছ?
ঠাকুরদা।
তাঁর সঙ্গে সুর মেলাচ্ছি। এই যে দখিন হাওয়া দিয়েছে, আমের বোল ধরেছে, সমান সুরে সাড়া দিতে পারলে ভিতরে ভিতরে জানাজানি হয়।
দ্বিতীয়া।
তোমাদের কর্তারা ঢাকঢোলের বায়না দেন নি বুঝি? তোমাদের উপরেই সব বরাত?
ঠাকুরদা।
তা নয় তো কী। ভাড়া করে সমারোহ? তোমরা আমরা আছি কী করতে? ওরে তোরা ধর না ভাই গান।
গান
আজি দখিন দুয়ার খোলা-
এস হে, এস হে, এস হে, আমার
বসন্ত এস।
দিব হৃদয়-দোলায় দোলা,
এস হে, এস হে, এস হে, আমার
বসন্ত এস।
নব শ্যামল শোভন রথে
এস বকুল-বিছানো পথে,
এস বাজায়ে ব্যাকুল বেণু,
মেখে পিয়াল ফুলের রেণু,
এস হে, এস হে, এস হে, আমার
বসন্ত এস
এস ঘনপল্লবপুঞ্জে
এস হে, এস হে, এস হে।
এস বনমল্লিকাকুঞ্জে
এস হে, এস হে, এস হে।
মৃদু মধুর মদির হেসে
এস পাগল হাওয়ার দেশে,
তোমার উতলা উত্তরীয়
তুমি আকাশে উড়ায়ে দিয়ো,
এস হে, এস হে, এস হে, আমার
বসন্ত এস॥
[ মেয়েদের প্রস্থান
পূব দুয়ারটা হল। এবার চলো পশ্চিম দুয়ারটার দিকে।
দেশী পথিকদলের প্রবেশ
দেশী পথিকদলের প্রবেশ
কৌণ্ডিল্য।
ঠাকুরদা, এই প্রাচীন বয়সে ছেলের দলকে নিয়ে মেতে বেড়াচ্ছ যে?
ঠাকুরদা।
নবীনকে ডাক দিতে বেরিয়েছি।
জনার্দন।
সেটা কি তোমাকে শোভা পায়?
ঠাকুরদা।
ওরে পাকা পাতাই তো ঝরবার সময় নতুন পাতাকে জাগিয়ে দিয়ে যায়।
গান
আমার জীর্ণ পাতা যাবার বেলায় বারে বারে
ডাক দিয়ে যায় নতুন পাতার দ্বারে দ্বারে।
কৌণ্ডিল্য।
ডাক দিয়েছ সেতো দেখতে পাচ্ছি, পাড়া অস্থির করে তুলেছ। কিন্তু এর দরকার ছিল কি।
ঠাকুরদা।
আমারই নবীন বয়সকে ওদের মধ্যে খুঁজে পাচ্ছি -- বুড়োটা ঢাকা পড়ে গেল।
গান
তাই তো আমার এই জীবনের বনচ্ছায়ে
ফাগুন আসে ফিরে ফিরে দখিন বায়ে,
নতুন সুরে গান উড়ে যায় আকাশ পারে,
নতুন রঙে ফুল ফোটে তাই ভারে ভারে॥
কৌণ্ডিল্য।
তা তুমি নতুন হয়েই রইলে সে-কথা সত্যি, বুড়ো হবার সময় পেলে না।
ঠাকুরদা।
নিজে নতুন না হলে সেই নতুনকে যে পাই নে।
গান
ওগো আমার নিত্য নূতন দাঁড়াও হেসে
চলব তোমার নিমন্ত্রণে নবীন বেশে।
দিনের শেষে নিবল যখন পথের আলো,
সাগরতীরে যাত্রা আমার যেই ফুরাল,
তোমার বাঁশি বাজে সাঁঝের অন্ধকারে
শূন্যে আমার উঠল তারা সারে সারে॥
কৌণ্ডিল্য।
রাখো দাদা, তোমার গান রাখো। আজকের দিনে একটা কথা মনে বড়ো লাগছে।
ঠাকুরদা।
কী বলো দেখি।
কৌণ্ডিল্য।
এবার দেশবিদেশের লোক এসেছে, সবাই বলছে সবই দেখেছি ভালো কিন্তু রাজা দেখি নে কেন -- কাউকে জবাব দিতে পারি নে। এখানে ওইটে বড়ো একটা ফাঁকা রয়ে গেছে।
ঠাকুরদা।
ফাঁকা! আমাদের এই দেশে রাজা এক জায়গায় দেখা দেয় না বলেই তো সমস্ত রাজ্যটা এবেবারে রাজায় ঠাসা হয়ে রয়েছে -- তাকে বল ফাঁকা! সে যে আমাদের সবাইকেই রাজা করে দিয়েছে।
গান
আমরা সবাই রাজা আমাদের এই
রাজার রাজত্বে।
নইলে মোদের রাজার সনে
মিলব কী স্বত্বে॥
আমরা যা খুশি তাই করি
তবু তাঁর খুশিতেই চরি,
আমরা নই বাঁধা নই দাসের রাজার
ত্রাসের দাসত্বে।
নইলে মোদের রাজার সনে
মিলব কী স্বত্বে॥
রাজা সবারে দেন মান
সে মান আপনি ফিরে পান,
মোদের খাটো করে রাখে নি কেউ
কোনো অসত্যে,
নইলে মোদের রাজার সনে
মিলব কী স্বত্বে।
আমরা চলব আপন মতে
শেষে মিলব তাঁরি পথে,
মোরা মরব না কেউ বিফলতার
বিষম আবর্তে।
নইলে মোদের রাজার সনে
মিলব কী স্বত্বে?
কুম্ভ।
কিন্তু দাদা, যা বল তাঁকে দেখতে পায় না বলে লোকে অনায়াসে তাঁর নামে যা খুশি বলে, সেইটে অসহ্য হয়।
জনার্দন।
এই দেখো না, আমাকে গাল দিলে শাস্তি আছে কিন্তু রাজাকে গাল দিলে কেউ তার মুখ বন্ধ করবার নেই।
ঠাকুরদা।
ওর মানে আছে; প্রজার মধ্যে যে-রাজাটুকু মিশিয়ে আছে তারই গায়ে আঘাত লাগে, তাকে ছাড়িয়ে যিনি তাঁর গায়ে কিছুই বাজে না। সূর্যের যে তেজ প্রদীপে আছে তাতে ফুঁ টুকু সয় না, কিন্তু হাজার লোকে মিলে সূর্যে ফুঁ দিলে সূর্য অম্লান হয়েই থাকেন
[ সকলের প্রস্থান
[ সকলের প্রস্থান
বিদেশীদলের পুনঃ প্রবেশ
বিদেশীদলের পুনঃ প্রবেশ
বিরাজদত্ত।
দেখো ভাই ভদ্রসেন, আসল কথাটা হচ্ছে, এদের মূলেই রাজা নেই। সকলে মিলে একটা গুজব রটিয়ে রেখেছে।
ভদ্রসেন।
আমারও তো তাই মনে হয়েছে। সকল দেশেই রাজাকে দেখে দেশসুদ্ধ লোকের আত্মাপুরুষ বাঁশপাতার মতো হীহী করে কাঁপতে থাকে, আর এখানে রাজাকে খুঁজেও মেলে না! কিছু না হ'ক, মাঝে মাঝে বিনা কারণে এক-একবার যদি চোখ পাকিয়ে বলে, বেটার শির লেও, তাহলেও বুঝি রাজার মতো রাজা আছে বটে
মাধব।
কিন্তু এ-রাজ্যে আগাগোড়া যেমন নিয়ম দেখছি, রাজা না থাকলে তো এমন হয় না।
বিরাজদত্ত।
এতকাল রাজার দেশে বাস করে এই বুদ্ধি হল তোমার? নিয়মই যদি থাকবে তাহলে রাজা থাকবার দরকার কী?
মাধব।
এই দেখো না, আজ এত লোক মিলে আনন্দ করছে -- রাজা না থাকলে এরা এমন করেই মিলতেই পারত না।
বিরাজদত্ত।
ওহে মাধব, আসল কথাটাই যে তুমি এড়িয়ে যাচ্ছ। একটা নিয়ম আছে -- সেটা তো দেখছি, উৎসব হচ্ছে সেটাও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, সেখানে তো কোনো গোল বাধছে না -- কিন্তু রাজা কোথায়, তাকে দেখলে কোথায় সেইটে বলো।
মাধব।
আমার কথাটা হচ্ছে এই যে, তোমরা তো এমন রাজ্য জান যেখানে রাজা কেবল চোখেই দেখা যায় কিন্তু রাজ্যের মধ্যে তার কোনো পরিচয় নেই, সেখানে কেবল ভূতের কীর্তন -- কিন্তু এখানে দেখো --
ভদ্রসেন।
আবার ঘুরে ফিরে সেই একই কথা! তুমি বিরাজদত্তর আসল কথাটার উত্তর দাও না হে -- হাঁ, কি, না? রাজাকে দেখেছ, কি, দেখ নি?
বিরাজদত্ত।
রেখে দাও ভাই ভদ্রসেন, ওর ন্যায়শাস্ত্রটা পর্যন্ত এ-দেশী রকমের হয়ে উঠেছে। বিনা চক্ষে ও যখন দেখতে শুরু করেছে তখন আর ভরসা নেই। বিনা অন্নে কিছুদিন ওকে আহার করতে দিলে আবার বুদ্ধিটা সাধারণ লোকের মতো পরিষ্কার হয়ে আসতে পারে।
[সকলের প্রস্থান
বাউলের প্রবেশ
গান
আমার প্রাণের মানুষ আছে প্রাণে
তাই হেরি তায় সকল খানে।
আছে সে নয়নতারায় আলোকধারায়,
তাই না হারায়,
ওগো তাই দেখি তায় যেথায় সেথায়
তাকাই আমি যেদিক পানে॥
আমি তার মুখের কথা
শুনব বলে গেলাম কোথা,
শোনা হল না, হল না,
আজ ফিরে এসে নিজের দেশে
এই যে শুনি,
শুনি তাহার বাণী আপন গানে॥
কে তোরা খুঁজিস তারে
কাঙাল-বেশে দ্বারে দ্বারে,
দেখা মেলে না মেলে না,--
ও তোরা আয় রে ধেয়ে দেখ্ রে চেয়ে
আমার বুকে --
ওরে দেখ্ রে আমার দুই নয়ানে॥
[প্রস্থান
একদল পদাতিক ও দেশী পথিকের প্রবেশ
প্রথম পদাতিক।
সরে যাও সব, সরে যাও। তফাত যাও।
কৌণ্ডিল্য।
ইস, তাই তো। মস্ত লোক বটে। লম্বা পা ফেলে চলছেন। কেন রে বাপু, সরব কেন? আমরা সব পথের কুকুর না কি?
দ্বিতীয় পদাতিক।
আমাদের রাজা আসছেন।
জনার্দন।
রাজা? কোথাকার রাজা?
প্রথম পদাতিক।
আমাদের এই দেশের রাজা।
কুম্ভ।
লোকটা পাগল হল নাকি? আমাদের এই অবাক দেশের রাজা পাইক নিয়ে হাঁকতে হাঁকতে আবার রাস্তায় কবে বেরোয়?
দ্বিতীয় পদাতিক।
মহারাজ আজ আর গোপন থাকবেন না, তিনি স্বয়ং আজ উৎসব করবেন।
জনার্দন।
সত্যি না কি ভাই?
দ্বিতীয় পদাতিক।
ওই দেখো না নিশেন উড়ছে।
কৌণ্ডিল্য।
তাই তো রে, ওটা নিশেনই তো বটে।
দ্বিতীয় পদাতিক।
নিশেনে কিংশুক ফুল আঁকা আছে, দেখছ না?
কুম্ভ।
ওরে কিংশুক ফুলই তো বটে, মিথ্যে বলে নি -- একেবারে টকটক করছে।
প্রথম পদাতিক।
তবে! কথাটা যে বড়ো বিশ্বাস হল না!
জনার্দন।
না দাদা, আমি তো অবিশ্বাস করি নি। ওই কুম্ভই গোলমাল করেছিল। আমি একটি কথাও বলি নি।
প্রথম পদাতিক।
ওটা বোধ হয় শূন্যকুম্ভ, তাই আওয়াজ বেশি।
দ্বিতীয় পদাতিক।
লোকটা কে হে? তোমাদের কে হয়?
কৌণ্ডিল্য।
কেউ না, কেউ না। আমাদের গ্রামের যে মোড়ল, ও তার খুড়শ্বশুর -- অন্য পাড়ায় বাড়ি।
দ্বিতীয় পদাতিক।
হাঁ হাঁ, খুড়শ্বশুর গোছের চোহারা বটে, বুদ্ধিটাও নেহাত খুড়শ্বশুরে ধাঁচার।
কুম্ভ।
অনেক দুঃখে বুদ্ধিটা এইরকম হয়েছে। এই যে সেদিন কোথা থেকে এক রাজা বেরোল, নামের গোড়ায় তিন-শ পঁয়তাল্লিশটা শ্রী লাগিয়ে ঢাক পিটোতে পিটোতে শহর ঘুরে বেড়াল -- আমি তার পিছনে কি কম ফিরেছি? কত ভোগ দিলেম কত সেবা করলেম, ভিটেমাটি বিকিয়ে যাবার জো হল। শেষকালে তার রাজাগিরি রইল কোথায়? লোকে যখন তার কাছে তালুক চায়, মুলুক চায় সে তখন পাঁজিপুঁথি খুলে শুভদিন কিছুতেই খুঁজে পায় না। কিন্তু আমাদের কাছে খাজনা নেবার বেলায় মঘা অশ্লেষা ত্র৻স্পর্শ কিছুই তো বাধত না।
দ্বিতীয় পদাতিক।
হাঁ হে কুম্ভ, আমাদের রাজাকে তুমি সেই রকম মেকি রাজা বলতে চাও।
কুম্ভ।
না বাবা, রাগ ক'রো না। আমি নাকে খত দিচ্ছি -- যতদূর সরতে বল তত দূরই সরে দাঁড়াব।
দ্বিতীয় পদাতিক।
আচ্ছা, বেশ এইখানে সার বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকো। রাজা এলেন বলে -- আমরা এগিয়ে গিয়ে রাস্তা ঠিক করে রাখি।
[পদাতিকদের প্রস্থান
[পদাতিকদের প্রস্থান
জনার্দন।
কুম্ভ, তোমার ওই মুখের দোষেই তুমি মরবে!
কুম্ভ।
না ভাই জনার্দন, ও মুখের দোষ নয়, ও কপালের দোষ। যেবারে মিছে রাজা বেরোল একটি কথাও কই নি -- অত্যন্ত ভালোমানুষের মতো নিজের সর্বনাশ করেছি -- আর এবার হয়তো বা সত্যি রাজা বেরিয়েছে, তাই বেফাঁস কথাটা মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল। ওটা কপাল।
জনার্দন।
আমি এই বুঝি, রাজা সত্যি হ'ক মিথ্যে হ'ক, মেনে চলতেই হবে। আমরা কি রাজা চিনি যে বিচার করব। অন্ধকারে ঢেলা মারা -- যত বেশি মারবে একটা না একটা লেগে যাবে। আমি তাই একধার থেকে গড় করে যাই -- সত্যি হলে লাভ, মিথ্যে হলেই বা লোকসান কী।
কুম্ভ।
ঢেলাগুলো নেহাত ঢেলা হলে ভাবনা ছিল না -- দামি জিনিস -- বাজে খরচ করতে গিয়ে ফতুর হতে হয়।
কৌণ্ডিল্য।
ওই যে আসছেন রাজা। আহা রাজার মতন রাজা বটে। কী চেহারা। যেন ননির পুতুল। কেমন হে কুম্ভ, এখন কী মনে হচ্ছে।
কুম্ভ।
দেখাচ্ছে ভালো -- কী জানি ভাই হতে পারে।
কৌণ্ডিল্য।
ঠিক যেন রাজাটি গড়ে রেখেছে। ভয় হয়, পাছে রোদ্দুর লাগলে গলে যায়।
রাজবেশধারীর প্রবেশ
রাজবেশধারীর প্রবেশ
সকলে।
জয় মহারাজের জয়।
জনার্দন।
দর্শনের জন্যে সকাল থেকে দাঁড়িয়ে। দয়া রাখবেন।
কুম্ভ।
বড়ো ধাঁধাঁ ঠেকছে, ঠাকুরদাকে ডেকে আনি।
[সকলের প্রস্থান
[সকলের প্রস্থান
বিদেশী পথিকদলের প্রবেশ
বিদেশী পথিকদলের প্রবেশ
মাধব।
ওরে রাজা রে রাজা। দেখবি আয়।
বিরাজদত্ত।
মনে রেখো রাজা, আমি কুশলীবস্তুর উদয়দত্তর নাতি। আমার নাম বিরাজদত্ত। রাজা বেরিয়েছে শুনেই ছুটেছি, লোকের কারও কথায় কান দিই নি -- আমি সক্কলের আগে তোমাকে মেনেছি।
ভদ্রসেন।
শোনো একবার, আমি যে ভোর থেকে এখানে দাঁড়িয়ে--তখনও কাক ডাকে নি -- এতক্ষণ ছিলে কোথায়? রাজা, আমি বিক্রমস্থলীর ভদ্রসেন -- ভক্তকে স্মরণ রেখো।
রাজবেশী।
তোমাদের ভক্তিতে বড়ো প্রীত হলাম।
বিরাজদত্ত।
মহারাজ, আমাদের অভাব বিস্তর -- এতদিন দর্শন পাই নি, জানাব কাকে?
রাজবেশী।
তোমাদের সমস্ত অভাব মিটিয়ে দেব।
[রাজবেশীর প্রস্থান
[রাজবেশীর প্রস্থান
দেশী পথিকদের প্রবেশ
দেশী পথিকদের প্রবেশ
কৌণ্ডিল্য।
ওরে পিছিয়ে থাকলে চলবে না -- ভিড়ে মিশে গেলে রাজার চোখে পড়ব না।
বিরাজদত্ত।
দেখ্ দেখ্ একবার নরোত্তমের কাণ্ডখানা দেখ্! আমরা এত লোক আছি, সবাইকে ঠেলেঠুলে কোথা থেকে এক তালপাতার পাখা নিয়ে রাজাকে বাতাস করতে লেগে গেছে।
কৌণ্ডিল্য।
তাই তো হে, লোকটার আস্পর্ধা তে কম নয়।
মাধব।
ওকে জোর করে ধরে সরিয়ে দিতে হচ্ছে -- ও কি রাজার পাশে দাঁড়াবার যুগ্যি।
কৌণ্ডিল্য।
ওহে রাজা কি আর এটুকু বুঝবে না? এযে অতিভক্তি।
বিরাজদত্ত।
না হে না -- রাজাদের যদি মগজই থাকবে তাহলে মুকুট থাকবার দরকার কী। ওই তালপাখার হাওয়া খেয়েই ভুলবে।
[সকলের প্রস্থান
[সকলের প্রস্থান
ঠাকুরদাকে লইয়া কুম্ভের প্রবেশ
ঠাকুরদাকে লইয়া কুম্ভের প্রবেশ
কুম্ভ।
এখনই এই রাস্তা দিয়েই যে গেল।
ঠাকুরদা।
রাস্তা দিয়ে গেলেই রাজা হয় নাকি রে।
কুম্ভ।
দাদা, একেবারে স্পষ্ট চোখে দেখা গেল -- একজন না দুজন না, রাস্তার দুধারের লোক তাকে দেখে নিয়েছে।
ঠাকুরদা।
সেইজন্যেই তো সন্দেহ। কবে আমার রাজা রাস্তার লোকের চোখ ধাঁধিয়ে বেড়ায়।
কুম্ভ।
তা আজকে যদি মর্জি হয়ে থাকে, বলা যায় কী।
ঠাকুরদা।
বলা যায় রে বলা যায় -- আমার রাজার মর্জি বরাবর ঠিক আছে -- ঘড়ি-ঘড়ি বদলায় না!
কুম্ভ।
কিন্তু কী বলব দাদা -- একেবারে ননির পুতুলটি। ইচ্ছে করে সর্বাঙ্গ দিয়ে তাকে ছায়া করে রাখি।
ঠাকুরদা।
তোর এমন বুদ্ধি কবে হল? আমার রাজা ননির পুতুল, আর তুই তাকে ছায়া করে রাখবি!
কুম্ভ।
যা বল দাদা, দেখতে বড়ো সুন্দর -- আজ তো এত লোক জুটেছে অমনটি কাউকে দেখলুম না।
ঠাকুরদা।
আমার রাজা তোদের চোখেই পড়ত না।
কুম্ভ।
ধ্বজা দেখতে পেলুম যে গো। লোকে যে বলে, এই উৎসবে রাজা বেরিয়েছে।
ঠাকুরদা।
বেরিয়েছে বই কি। কিন্তু সঙ্গে পাইক নেই, বাদ্যি নেই।
কুম্ভ।
কেউ বুঝি ধরতেই পারে না।
ঠাকুরদা।
হয়তো কেউ কেউ পারে।
কুম্ভ।
যে পারে সে বোধ হয় যা চায় তা-ই পায়।
ঠাকুরদা।
সে কিচ্ছু চায় না। ভিক্ষুকের কর্ম নয় রাজাকে চেনা। ছোটো ভিক্ষুক বড়ো ভিক্ষুককেই রাজা বলে মনে করে বসে।
[সকলের প্রস্থান
[সকলের প্রস্থান
রাজা বিজয়বর্মা, বিক্রমবাহু ও বসুসেনের প্রবেশ
রাজা বিজয়বর্মা, বিক্রমবাহু ও বসুসেনের প্রবেশ
বসুসেন।
এই উৎসবের রাজা কি আমাদেরও দেখা দেবে না?
বিক্রম।
এর রাজত্ব করবার প্রণালী কী রকম? রাজার বনে উৎসব, সেখানেও সাধারণ লোকের কারও কোনো বাধা নেই?
বিজয়।
আমাদের জন্যে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র জায়গা তৈরি করে রাখা উচিত ছিল।
বিক্রম।
জোর করে নিজেরা তৈরি করে নেব।
বিজয়।
এই সব দেখেই সন্দেহ হয়, এখানে রাজা নেই, একটা ফাঁকি চলে আসছে।
বিক্রম।
কিন্তু কান্তিকরাজকন্যা সুদর্শনা তো দৃষ্টিগোচর।
বিজয়।
তাঁকে দেখা চাই। যিনি দেখা দেন না তাঁর জন্যে আমার ঔৎসুক্য নেই, কিন্তু যিনি দেখবার যোগ্য তাঁকে না দেখে ফিরে গেলে ঠকতে হবে।
বিক্রম।
একটা ফন্দি দেখাই যাক না।
বসুসেন।
ফন্দি জিনিসটা খুব ভালো, যদি তার মধ্যে নিজে আটকা না পড়া যায়।
বিক্রম।
এদিকে এরা কারা আসছে? সং না কি? রাজা সেজেছে।
বিজয়।
এ তামাশা এখানকার রাজা সইতে পারে কিন্তু আমরা সইব না তো।
বসুসেন।
কোথাকার গ্রাম্যরাজা হতেও পারে।
পদাতিকগণের প্রবেশ
পদাতিকগণের প্রবেশ
বিক্রম।
তোমাদের রাজা কোথাকার?
প্রথম পদাতিক।
এই দেশের। তিনি আজ উৎসব করতে বেরিয়েছেন।
[পদাতিকগণের প্রস্থান
[পদাতিকগণের প্রস্থান
বিজয়।
এ কী কথা। এখানকার রাজা বেরিয়েছে!
বসুসেন।
তাই তো। তা হলে এঁকেই দেখে ফিরতে হবে! অন্য দর্শনীয়টা?
বিক্রম।
শোন কেন? এখানে রাজা নেই বলেই যে-খুশি নির্ভাবনায় আপনাকে রাজা বলে পরিচয় দেয়। দেখছ না, যেন সেজে এসেছে -- অত্যন্ত বেশি সাজ।
বসুসেন।
কিন্তু লোকটাকে দেখাচ্ছে ভালো, চোখ ভোলাবার মতো চেহারাটা আছে।
বিক্রম।
চোখ ভুলতে পারে কিন্তু ভালো করে তাকালেই ভুল থাকে না। আমি তোমাদের সামনেই ওর ফাঁকি ধরে দিচ্ছি।
রাজবেশী সুবর্ণের প্রবেশ
রাজবেশী সুবর্ণের প্রবেশ
সুবর্ণ।
রাজগণ, স্বাগত। এখানে তোমাদের অভ্যর্থনার কোনো ত্রুটি হয় নি তো?
রাজগণ।
(কপট বিনয়ে নমস্কার করিয়া) কিছু না।
বিক্রম।
যে অভাব ছিল তা মহারাজের দর্শনেই পূর্ণ হয়েছে।
সুবর্ণ।
আমি সাধারণের দর্শনীয় নই কিন্তু তোমরা আমার অনুগত, এই জন্যই একবার দেখা দিতে এলুম।
বিক্রম।
অনুগ্রহের এত আতিশয্য সহ্য করা কঠিন।
সুবর্ণ।
আমি অধিকক্ষণ থাকব না।
বিক্রম।
সেটা অনুভবেই বুঝেছি -- বেশিক্ষণ স্থায়ী হবার ভাব দেখছি নে।
সুবর্ণ।
ইতিমধ্যে যদি কোনো প্রার্থনা থাকে --
বিক্রম।
আছে বই কি। কিন্তু অনুচরদের সামনে জানাতে লজ্জা বোধ করি।
সুবর্ণ।
(অনুবর্তীদের প্রতি) ক্ষণকালের জন্য তোমরা দূরে যাও --(রাজগণের প্রতি) এইবার তোমাদের প্রার্থনা অসংকোচে জানাতে পার।
বিক্রম।
অসংকোচেই জানাব -- তোমারও যেন লেশমাত্র সংকোচ হয় না।
সুবর্ণ।
না, সে আশঙ্কা ক'রো না।
বিক্রম।
এস তবে -- মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে আমাদের প্রত্যেককে প্রণাম করো।
সুবর্ণ।
বোধ হচ্ছে আমার ভৃত্যগণ বারুণী মদ্যটা রাজশিবিরে কিছু মুক্তহস্তেই বিতরণ করেছে।
বিক্রম।
ভণ্ডরাজ, মদ যাকে বলে সেটা তোমার ভাগেই অতিমাত্রায় পড়েছে সেই জন্যেই এখন ধুলোয় লোটাবার অবস্থা হয়েছে।
সুবর্ণ।
রাজগণ, পরিহাসটা রাজোচিত নয়।
বিক্রম।
পরিহাসের অধিকার যাদের আছে তারা নিকটেই প্রস্তুত। সেনাপতি।
সুবর্ণ।
আর প্রয়োজন নেই। স্পষ্টই দেখতে পাচ্ছি আপনারা আমার প্রণম্য। মাথা আপনিই নত হচ্ছে, কোনো তীক্ষ্ন উপায়ে তাকে ধুলায় টানবার দরকার হবে না। আপনারা যখন আমাকে চিনেছেন তখন আমিও আপনাদের চিনে নিলুম। অতএব এই আমার প্রণাম গ্রহণ করুন। যদি দয়া করে পালাতে অনুমতি দেন তাহলে বিলম্ব করব না।
বিক্রম।
পালাবে কেন? তোমাকেই আমরা এখানকার রাজা করে দিচ্ছি--পরিহাসটা শেষ করেই যাওয়া যাক। দলবল কিছু আছে?
সুবর্ণ।
আছে। আরম্ভে যখন আমার দল বেশি ছিল না, তখন সবাই সন্দেহ করছিল -- লোক যত বেড়ে গেল, সন্দেহ ততই দূর হল। এখন ভিড়ের লোক নিজেদের ভিড় দেখেই মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছে, আমাকে কোনো কষ্ট পেতে হচ্ছে না
বিক্রম।
বেশ কথা। এখন থেকে আমরা তোমায় সাহায্য করব। কিন্তু তোমাকে আমাদেরও একটা কাজ করে দিতে হবে।
সুবর্ণ।
আপনাদের দত্ত আদেশ এবং মুকুট আমি মাথায় করে রাখব।
বিক্রম।
আর কিছু চাই নে, রাজকুমারী সুদর্শনাকে দেখতে চাই -- সেইটে তোমাকে করে দিতে হবে।
সুবর্ণ।
যথাসাধ্য চেষ্টার ত্রুটি হবে না।
বিক্রম।
তোমার সাধ্যের উপর ভরসা নেই, আমাদের বুদ্ধিমতো চলতে হবে। আমার পরামর্শ শোনো, ভুল ক'রো না।
সুবর্ণ।
ভুল হবে না।
বিক্রম।
করভোদ্যানের মধ্যেই রাজকুমারী সুদর্শনার প্রাসাদ।
সুবর্ণ।
হাঁ মহারাজ।
বিক্রম।
সেই উদ্যানে আগুন লাগাবে। তারপর অগ্নিদাহের গোলমালে কাজ সিদ্ধ করব।
সুবর্ণ।
অন্যথা হবে না।
বিক্রম।
দেখো হে ভণ্ডরাজ, আমরা মিথ্যা সাবধান হচ্ছি, এদেশে রাজা নেই।
সুবর্ণ।
আমি সেই অরাজকতা দূর করতে বেরিয়েছি, সাধারণের জন্যে সত্য হ'ক মিথ্যা হ'ক, একটা রাজা খাড়া করা চাই; নইলে অনিষ্ট ঘটে। একটা কথা বুঝতে পারছি নে মহারাজ।
বিক্রম।
আমার অনেক কথাই তুমি বুঝতে পারবে না। তবু বলো শুনি।
সুবর্ণ।
রাজকুমারীর পিতা-মহারাজের কাছে দূত পাঠিয়ে কন্যাকে যথারীতি প্রার্থনা করুন না।
বিক্রম।
সে তো সকলেই করে থাকে। আমি তো সকলের দলে নই। আগুন করবে আমার ঘটকালি, আমি বিপদ ঘটিয়ে বিপদের পারে যাব।
সুবর্ণ।
আপনি তো পারে যাবেন মহারাজ, আমি সামান্য লোক, পার পর্যন্ত না পৌঁছোতেও পারি।
বিক্রম।
অসম্ভব নয়। কিন্তু তাতে কী আসে যায়। সামান্য লোক, কাজে লাগবে এই যথেষ্ট, তার পরে থাকবে কি না থাকবে সেটা ভাববার কথাই নয়। -- চলো আর বিলম্ব ক'রো না।
বিজয়।
দেখো দেখো, সেই লোকটা আবার একদল লোক নিয়ে আসছে।
বসুসেন।
ও যেন উৎসবের খেয়া পার করছে; নতুন নতুন দলকে দ্বারের কাছ পর্যন্ত পৌঁছে দিচ্ছে
সদলে ঠাকুরদার প্রবেশ
সদলে ঠাকুরদার প্রবেশ
বিজয়।
কী হে, তুমি যে কখন কোথা দিয়ে ঘুরে আসছ, তার ঠিকানা পাবার জো নেই।
ঠাকুরদা।
আমরা নটরাজের চেলা, তিনি ঘুরছেন আর ঘুরিয়ে বেড়াচ্ছেন। কোথাও দাঁড়িয়ে থাকবার জো কী -- শিঙ্গা যে বেজে উঠছে।
নৃত্য ও গীত
মম চিত্তে নিতি নৃত্যে কে যে নাচে
তাতা থৈথৈ তাতা থৈথৈ তাতা থৈথৈ।
তারি সঙ্গে কী মৃদঙ্গে সদা বাজে
তাতা থৈথৈ তাতা থৈথৈ তাতা থৈথৈ॥
হাসিকান্না হীরাপান্না দোলে ভালে,
কাঁপে ছন্দে ভালোমন্দ তালে তালে,
নাচে জন্ম নাচে মৃত্যু পাছে পাছে,
তাতা থৈথৈ তাতা থৈথৈ তাতা থৈথৈ।
কী আনন্দ, কী আনন্দ, কী আনন্দ
দিবারাত্রি নাচে মুক্তি নাচে বন্ধ,
সে তরঙ্গে ছুটি রঙ্গে পাছে পাছে
তাতা থৈথৈ তাতা থৈথৈ তাতা থৈথৈ॥
[প্রস্থান
[প্রস্থান
বসুসেন।
লোকটার মধ্যে কিছু কৌতুক আছে।
বিক্রম।
কিন্তু এ-সব লোকের কৌতুকে যোগ দেওয়া কিছু নয় -- প্রশ্রয় দেওয়া হয় - চলো সরে যাই
[রাজাদের প্রস্থান
[রাজাদের প্রস্থান