বাড়িওয়ালা ও তাহার স্ত্রী
স্ত্রী।
মাতাজি যদি হবে, তবে অমন চেহারা কেন?
বাড়িওয়ালা।
দেখতে শুনতে তাড়কা-রাক্ষসীর মতো না হলেই বুঝি আর মাতাজি হয় না!
স্ত্রী।
হবে না কেন? কিন্তু তা হলে কি এই সমর্থবয়সে স্বামীর ঘরে না থেকে তোমার মতো বোকা ভোলাবার জন্যে মাতাজি-গিরি করতে বেরোত? তা হলে কি পিতাজি তোমার মাতাজিকে ছাড়ত? আর এত টাকাই বা পেলে কোথায়?
বাড়িওয়ালা।
ওগো, যারা যোগবিদ্যা জানে তাদের যদি টাকা না হবে, চেহারা না হবে,তবে কি তোমার হবে? রোসো-না, ওঁর কাছে মন্তর-টন্তরগুলো শিখে নেওয়া যাক-না।
স্ত্রী।
বুড়োবয়সে মন্তর শিখে হবে কী শুনি? কাকে বশ করবে?
বাড়িওয়ালা।
যাঁকে কিছুতেই বশ মানাতে পারলেম না।
স্ত্রী।
তিনি কে?
বাড়িওয়ালা।
আগে বশ মানাই, তার পরে সাহস করে নাম বলব।
মাতাজির প্রবেশ
মাতাজির প্রবেশ
মাতাজি।
এ বাড়িতে আমার থাকার সুবিধা হচ্ছে না। এর চেয়ে বড়ো বাড়ি আমাকে দিতে হবে।
বাড়িওয়ালা।
এ বাড়ি ছাড়া আমার আর একটিমাত্র বড়ো বাড়ি আছে। সেটা বড়ো বটে, কিন্তু--
মাতাজি।
তা, ভাড়া বেশি দেব, কিন্তু সেই বাড়িতেই আমি কাল যেতে চাই।
বাড়িওয়ালা।
সবে পরশু দিন সেখানে একটি ভাড়াটে এসেছে। একটি কোন্ সদরআলার বিধবা স্ত্রী-- পশ্চিম থেকে মেয়ের জন্যে পাত্র খুঁজতে এসে আমার সেই উনপঞ্চাশ নম্বরের বাড়িতে উঠেছে।
মাতাজি।
উনপঞ্চাশ নম্বর! ঠিক আমি যা চাই। তোমার এ বাড়ির নম্বর ভালো নয়।
বাড়িওয়ালা।
বাইশ নম্বর ভালো নয় মাতাজি? কারণটা কী বুঝিয়ে বলুন।
মাতাজি।
বুঝতে পারছ না-- দুয়ের পিঠে দুই--
বাড়িওয়ালা।
ঠিক বলেছেন মাতাজি, দুয়ের পিছে দুইই তো বটে। এতদিন ওটা ভাবি নি।
মাতাজি।
দুইয়েতে কিছু শেষ হয় না, তিন চাই। দেখো-না আমরা কথায় বলি, দু-তিন জন--
বাড়িওয়ালা।
ঠিক ঠিক, তা তো বলেই থাকি।
মাতাজি।
যদি দুই বললেই চুকে যেত, তা হলে তার সঙ্গে আবার তিন বলব কেন? বুঝে দেখো।
বাড়িওয়ালা।
আমাদের কী বা বুদ্ধি, তাই বুঝব। সবই জানতুম, তবু তো বুঝি নি।
মাতাজি।
তাই, ঐ দুইয়ের পিঠে দুই বলেই আমার মন্ত্র কিছুই সফল হচ্ছে না।
স্ত্রী ।
(আত্মগত) বেঁচে থাক্ আমার দুয়ের পিঠে দুই। মন্ত্র সফল হয়ে কাজ নেই।
মাতাজি।
উনপঞ্চাশের মতো এমন সংখ্যা আর হয় না।
বাড়িওয়ালা।
(জনান্তিকে) শুনলে তো গিন্নি?
স্ত্রী।
(জনান্তিকে) শুনে হবে কী? তোমার উনপঞ্চাশ যে অনেক কাল হল পেরিয়েছে।
বাড়িওয়ালা।
কিন্তু মাতাজিকে কি কালই সে বাড়িতে যেতে হবে?
মাতাজি।
কাল উনত্রিশ তারিখে মঙ্গলবার পড়েছে। এমন দিন আর পাওয়া যাবে না।
বাড়িওয়ালা।
ঠিক কথা। কাল উনত্রিশেও বটে, আবার মঙ্গলবারও বটে। কী আশ্চর্য! তা হলে তো কালই যেতে হচ্ছে বটে। তা-ই ঠিক করে দেব। (মাতাজির প্রস্থান) এখন আমার এই নতুন ভাড়াটেদের ওঠাই কী বলে? বিদেশ থেকে এসেছে, হঠাৎ তারা এখন বাড়িই বা পায় কোথায়?
স্ত্রী।
তাদের আপাতত এই বাড়িতে এনেই রাখো-না। আমরা নাহয় কিছুদিন ঝামাপুকুরে জামাইবাড়ি গিয়েই থাকব। তোমার ঐ মন্তর-জানা মেয়েমানুষকে এখানে রেখে কাজ নেই। বিদেয় করে দাও। ছেলেপিলের ঘর, কার কখন অপরাধ হয়, বলা যায় কি?
বাড়িওয়ালা।
সেই ভালো। তাদের কোনোরকম করে ভুলিয়ে-ভালিয়ে আজকের মধ্যেই উনপঞ্চাশ নম্বর থেকে বাইশ নম্বরে এনে ফেলা যাক্। বলি গে, পাড়ায় প্লেগ দেখা দিয়েছে, উনপঞ্চাশ নম্বরে প্লেগ হাঁসপাতাল বসবে।
অগ্রহায়ণ, ১৩০৮ শিলাইদহ