প্রাসাদকক্ষ

গোবিন্দমাণিক্য

নয়নরায়ের প্রবেশ

প্রাসাদকক্ষ

গোবিন্দমাণিক্য

নয়নরায়ের প্রবেশ

নয়নরায়।

বিদ্রোহী সৈনিকদের এনেছি ফিরায়ে,

যুদ্ধসজ্জা হয়েছে প্রস্তুত। আজ্ঞা দাও

মহারাজ, অগ্রসর হই--আশীর্বাদ

করো--

গোবিন্দমাণিক্য।

চলো সেনাপতি, নিজে আমি যাব

রণক্ষেত্রে।

নয়নরায়।

যতক্ষণ এ দাসের দেহে

প্রাণ আছে, ততক্ষণ মহারাজ, ক্ষান্ত

থাকো, বিপদের মুখে গিয়ে--

গোবিন্দমাণিক্য।

সেনাপতি,

সবার বিপদ-অংশ হতে, মোর অংশ

নিতে চাই আমি। মোর রাজ-অংশ, সব

চেয়ে বেশি। এস সৈন্যগণ, লহ মোরে

তোমাদের মাঝে। তোমাদের নৃপতিরে

দূর সিংহাসনচূড়ে নির্বাসিত করে

সমরগৌরব হতে বঞ্চিত কোরো না।

চরের প্রবেশ

চরের প্রবেশ

চর।

নির্বাসনপথ হতে লয়েছে কাড়িয়া

কুমার নক্ষত্ররায়ে মোগলের সেনা;

রাজপদে বরিয়াছে তাঁরে। আসিছেন

সৈন্য লয়ে রাজধানী পানে।

গোবিন্দমাণিক্য।

চুকে গেল।

আর ভয় নাই। যুদ্ধ তবে গেল মিটে।

প্রহরীর প্রবেশ

প্রহরীর প্রবেশ

প্রহরী।

বিপক্ষশিবির হতে পত্র আসিয়াছে।

গোবিন্দমাণিক্য।

নক্ষত্রের হস্তলিপি। শান্তির সংবাদ

হবে বুঝি।--এই কি স্নেহের সম্ভাষণ!

এ তো নহে নক্ষত্রের ভাষা! চাহে মোর

নির্বাসন, নতুবা ভাসাবে রক্তস্রোতে

সোনার ত্রিপুরা--দগ্ধ করে দিবে দেশ,

বন্দী হবে মোগলের অন্তঃপুরতরে

ত্রিপুররমণী?--দেখি, দেখি, এই বটে

তারি লিপি। "মহারাজ নক্ষত্রমাণিক্য!'

মহারাজ! দেখো সেনাপতি--এই দেখো

রাজদণ্ডে-নির্বাসিত দিয়েছে রাজারে

নির্বাসন দণ্ড। এমনি বিধির খেলা!

নয়নরায়।

নির্বাসন! এ কী স্পর্ধা! এখনো তো যুদ্ধ

শেষ হয় নাই।

গোবিন্দমাণিক্য।

এ তো নহে মোগলের

দল। ত্রিপুরার রাজপুত্র রাজা হতে

করিয়াছে সাধ, তার তরে যুদ্ধ কেন?

নয়নরায়।

রাজ্যের মঙ্গল--

গোবিন্দমাণিক্য।

রাজ্যের মঙ্গল হবে?

দাঁড়াইয়া মুখোমুখি দুই ভাই হানে

ভ্রাতৃবক্ষ লক্ষ্য করে মৃত্যুমুখী ছুরি--

রাজ্যের মঙ্গল হবে তাহে? রাজ্যে শুধু

সিংহাসন আছে--গৃহস্থের ঘর নেই,

ভাই নেই, ভ্রাতৃত্ববন্ধন নেই হেথা?

দেখি দেখি আরবার--এ কি তার লিপি?

নক্ষত্রের নিজের রচনা নহে। আমি

দস্যু, আমি দেবদ্বেষী, আমি অবিচারী,

এ রাজ্যের অকল্যাণ আমি! নহে, নহে,

এ তার রচনা নহে।--রচনা যাহারই

হোক, অক্ষর তো তারি বটে। নিজ হস্তে

লিখেছে তো সেই। যে সর্পেরই বিষ হোক,

নিজের অক্ষরমুখে মাখায়ে দিয়েছে,

হেনেছে আমার বুকে।--বিধি, এ তোমার

শাস্তি, তার নহে। নির্বাসন! তাই হোক।

তার নির্বাসনদণ্ড তার হয়ে আমি

নীরবে বিনম্র শিরে করিব বহন।
1 | 2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7