মন্দির। বাহিরে ঝড়

রঘুপতি

পুজোপকরণ লইয়া

মন্দির। বাহিরে ঝড়

রঘুপতি

পুজোপকরণ লইয়া

রঘুপতি।

এতদিনে আজ বুঝি জাগিয়াছ দেবী!

ওই রোষহুহুংকার! অভিশাপ হাঁকি

নগরের 'পর দিয়ে ধেয়ে চলিয়াছ।

তিমিররূপিণী!-- ওই বুঝি তোর

প্রলয়সঙ্গিনীগণ দারুণ ক্ষুধায়

প্রাণপণে নাড়া দেয় বিশ্বমহাতরু!

আজ মিটাইব তোর দীর্ঘ উপবাস।

ভক্তেরে সংশয়ে ফেলি এতদিন ছিলি

কোথা দেবী? তোর খড়্গ তুই না তুলিলে

আমরা কি পারি? আজ কী আনন্দ তোর

চণ্ডীমূর্তি দেখে! সাহসে ভরেছে চিত্ত,

সংশয় গিয়েছে, হতমান নতশির

উঠেছে নূতন তেজে। ওই পদধ্বনি

শুনা যায়, ওই আসে তো পূজা! জয়

মহাদেবী! ......

জয়সিংহ যদি নাই আসে! কভু নহে।

সত্যভঙ্গ কভু নাহি হবে তার-- জয়

মহাকালী, সিদ্ধিদাত্রী, জয় ভয়ংকরী!--

যদি বাধা পায়-- যদি ধরা পড়ে শেষে--

যদি প্রাণ যায় তার প্রহরীর হাতে--

জয় মা অভয়া, জয় ভক্তের সহায়!

জয় মা জাগ্রত দেবী, জয় সর্বজয়া!

ভক্তবৎসলার যেন দুর্নাম না রটে

এ সংসারে, শত্রুপক্ষ নাহি হাসে যেন

নিঃশঙ্ক কৌতুকে। মাতৃ-অহংকার যদি

চূর্ণ হয় সন্তানের, মা বলিয়া তবে

কেহ ডাকিবে না তোরে। ওই পদধ্বনি!

জয়সিংহ বটে! জয় নৃমুণ্ডমালিনী,

পাষণ্ডদলনী মহাশক্তি!

জয়সিংহের দ্রুত প্রবেশ

জয়সিংহ,

রাজরক্ত কই?

জয়সিংহ।

আছে আছে। ছাড়ো মোরে।

নিজে আমি করি নিবেদন।-- রাজরক্ত

চাই তোর, দয়াময়ী, ট্টৎপালিনী

মাতা? নহিলে কিছুতে তোর মিটিবে না

তৃষা! আমি রাজপুত, পূর্বপিতামহ

ছিল রাজা, এখনো রাজত্ব করে মোর

মাতামহবংশ-- রাজরক্ত আছে দেহে।

এই রক্ত দিব। এই যেন শেষ রক্ত

হয় মাতা, এই রক্তে শেষ মিটে যেন

অনন্ত পিপাসা তোর, রক্ততৃষাতুরা!

বক্ষে ছুরি-বিন্ধন

রঘুপতি।

জয়সিংহ! জয়সিংহ! নির্দয়! নিষ্ঠুর!

এ কী সর্বনাশ করিলি রে! জয়সিংহ,

অকৃতজ্ঞ, গুরুদ্রোহী, পিতৃমর্মঘাতী,

স্বেচ্ছাচারী! জয়সিংহ, কুলিশকঠিন!

ওরে জয়সিংহ, মোর একমাত্র প্রাণ,

প্রাণাধিক, জীবন-মন্থন-করা ধন!

জয়সিংহ, বৎস মোর, হে গুরুবৎসল!

ফিরে আয়, ফিরে আয়, তোরে ছাড়া আর

কিছু নাহি চাহি! অহংকার অভিমান

দেবতা ব্রাহ্মণ সব যাক। তুই আয়!

প্রতিমার পদতলে মাথা রাখিয়া

ফিরে দে, ফিরে দে, ফিরে দে, ফিরে দে!
1 | 2 | 3 | 4 | 5