রুদ্রচণ্ড

রুদ্রচণ্ড

রুদ্রচণ্ড ।

অনুগ্রহ ক'রে মোরে চ'লে গেল চাঁদ!

গৃহে ব'সে ভাবিতেছে প্রসন্নবদনে

রুদ্রচণ্ডে বাঁচালেম অনুগ্রহ ক'রে?

অনুগ্রহ! রুদ্রচণ্ডে অনুগ্রহ করা!

এ অনুগ্রহের ছুরি মর্ম্মের মাঝারে

--যত দিন বেঁচে রব-- রহিবে নিহিত!

দিনরাত্রি রক্ত মোর করিবে শোষণ।

দুগ্ধপোষ্য শিশু চাঁদ-- তার অনুগ্রহ!

ভিক্ষা-পাওয়া এ জীবন না রাখিলে নয়!

এ হীন প্রাণের কাজ যখনি ফুরাবে

তখনি ধূলায় এরে করিব নিক্ষেপ,

চরণে দলিয়া এরে চূর্ণ ক'রে দেব'।

[অমিয়ার প্রবেশ]

আবার রাক্ষসি, তুই আবার আইলি!

এ সংসারে আছে যত আপনার ভাই--

সকলেরে ডেকে আন্‌, পিতার জীবন

সে কুক্কুরদের মুখে করিস নিক্ষেপ।

পিতার শোণিত দিয়ে পুষিস তাদের।

দূর হ রাক্ষসি, তুই এখনি দূর হ।

অমিয়া ।

পিতা, পিতা, পায়ে পড়ি, শতবার আমি

দূর হয়ে যাইতেছি এ কুটীর হ'তে--

বোলো না, অমন ক'রে বোলো না আমারে।

বুঝিতে পারি নে যে গো কি আমি করেছি।

চাঁদের সহিত দুটি কথা কয়েছিনু--

কেন পিতা, তার তরে এত শান্তি কেন?

রুদ্রচণ্ড ।

চুপ কর্‌, "কেন' "কেন' শুধাস নে আর।

"দুর হ রাক্ষসি' এই আদেশ আমার!

দিনরাত্রি, পাপিয়সি, "কেন কেন' করি

করিস নে মোর আদেশের অপমান।

অমিয়া ।

কোথা যাব পিতা, আমি পথ যে জানি নে।

কারেও চিনি নে আমি-- কি হবে আমার!

পিতা গো, জান ত তুমি, অমিয়া তোমার

নিতান্ত নির্ব্বোধ মেয়ে কিছু সে বুঝে না--

না বুঝে করেছে দোষ ক্ষমা কর তারে।

রুদ্রচণ্ড ।

হতভাগী!

অমিয়া ।

ক্ষমা কর, ক্ষমা কর পিতা!

আজ রাত্রে দূর ক'রে দিও না আমারে,

এক রাত্রি তরে দাও কুটীরে থাকিতে।

রুদ্রচণ্ড ।

শিশুর হৃদয় এ কি পেয়েছিস তুই!

দুই ফোঁটা অশ্রু দিয়ে গলাতে চাহিস!

এখনি ও অশ্রুজল মুছে ফেল্‌ তুই।

অশ্রুজলধারা মোর দু-চক্ষের বিষ।

আর নয়, শোন্‌ শেষ আদেশ আমার--

দূর হ রে--

অমিয়া ।

ধর পিতা, ধর গো আমায়--

রুদ্রচণ্ড ।

ছুঁস্‌ নে, ছুঁস্‌ নে মোরে, রাক্ষসি, ছুস্‌ নে।

[অমিয়ার মূর্চ্ছিত হইয়া পতন ও তাহাকে তুলিয়া লইয়া

বনান্ত-উদ্দেশে রুদ্রচণ্ডের প্রস্থান]

[অমিয়ার মূর্চ্ছিত হইয়া পতন ও তাহাকে তুলিয়া লইয়া

বনান্ত-উদ্দেশে রুদ্রচণ্ডের প্রস্থান]
1 | 2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8 | 9...15