নিবারণ ও শিবচরণ
নিবারণের বাড়ি
নিবারণ ও শিবচরণ
নিবারণ।
তবে তাই ঠিক রইল? এখন আমার ইন্দুমতীকে তোমার গদাইয়ের পছন্দ হলে হয়।
শিবচরণ।
সে বেটার আবার পছন্দ কী! বিয়েটা তো আগে হয়ে যাক্, তার পর পছন্দ সময়মত পরে করলেই হবে।
নিবারণ।
না ভাই, কালের যে রকম গতি সেই অনুসারেই চলতে হয়।
শিবচরণ।
তা হোক-না কালের গতি, অসম্ভব কখনো সম্ভব হতে পারে না। একটু ভেবে দেখো-না, যে ছোঁড়া পূর্বে একবারও বিবাহ করে নি সে স্ত্রী চিনবে কী করে? পাট না চিনলে পাটের দালালি করা যায় না,আর স্ত্রীলোক কী পাটের চেয়ে সিধে জিনিস? আজ পঁয়ত্রিশ বৎসর হল আমি গদাইয়ের মাকে বিবাহ করেছি, তার থেকে পাঁচটা বৎসর বাদ দাও, তিনি গত হয়েছেন সে আজ বছর পাঁচেকের কথা হবে, যা হোক তিরিশটা বৎসর তাঁকে নিয়ে চালিয়ে এসেছি, আমি আমার ছেলের বউ পছন্দ করতে পারব না আর সেই ছোঁড়া ভূমিষ্ট হয়েই আমার চেয়ে পেকে উঠল? তবে যদি তোমার মেয়ের কোনো ধনুর্ভঙ্গ পণ থাকে, আমার গদাইকে যাচিয়ে নিতে চান, সে আলাদা কথা।
নিবারণ।
নাঃ, আমার মেয়ে কোনো আপত্তিই করবে না, তাকে যা বলব সে তাই শুনবে। আর-একটি কথা তোমাকে বলা উচিত। আমার মেয়েটির কিছু বয়স হয়েছে।
শিবচরণ।
আমিও তাই চাই। ঘরে যদি গিন্নি থাকতেন তাহলে বউমা ছোটো হলে ক্ষতি ছিল না। এখন এই বুড়োটাকে যত্ন করে আর ছেলেটাকে কড়া শাসনে রাখতে পারে, এমন একটি মেয়ে না হলে সংসারটি গেল।
নিবারণ।
তা হলে তোমার অভিভাবকের নিতান্ত দরকার দেখছি।
শিবচরণ।
হাঁ ভাই, মা ইন্দুকে বোলো আমার গদাইয়ের ঘরে এলে এই বুড়ো নাবালকটিকে প্রতিপালনের ভার তাঁকেই নিতে হবে। তখন দেখব তিনি কেমন মা।
নিবারণ।
তা ইন্দুর সে অভ্যাস আছে। বহুকাল একটি আস্ত বুড়ো বাপ তারই হাতে পড়েছে। দেখতেই তো পাচ্ছ,ভাই,খাইয়ে-দাইয়ে বেশ একরকম ভালো অবস্থাতেই রেখেছে।
শিবচরণ।
তাই তো, তাঁর হাতের কাজটিকে দেখে তারিফ করতে হয়। যা হোক, আজ তবে আসি। গুটিদুয়েক রোগী এখন মরতে বাকি আছে।
[ প্রস্থান
[ প্রস্থান
ইন্দুমতীর প্রবেশ
ইন্দুমতীর প্রবেশ
ইন্দু।
ও বুড়োটি কে এসেছিল বাবা?
নিবারণ।
কেন মা "বুড়ো বুড়ো' করছিস--তোর বাবাও তো বুড়ো।
ইন্দু।
(নিবারণের পাকা চুলের মধ্যে হাত বুলাইয়া) তুমি তো আমাদের আদ্যিকালের বদ্যি বুড়ো, তোমার সঙ্গে কার তুলনা? কিন্তু ওকে তো কখনো দেখি নি।
নিবারণ।
ওর সঙ্গে ক্রমে খুবই পরিচয় হবে--
ইন্দু।
আমি খুব পরিচয় করতে চাই নে।
নিবারণ।
তোর এ বাবা পুরোনো ঝর্ঝরে হয়ে এসেছে, একবার বাবা বদল করে দেখবি নে ইন্দু?
ইন্দু।
তবে আমি চললুম।
নিবারণ।
না না,শোন্-না। তোরই যেন বাবার দরকার নেই, আমার একটি বাপের পদ খালি আছে--তাই আমি একটি সন্ধান করে বের করেছি মা।
ইন্দু।
তুমি কী বকছ বুঝতে পারছি নে।
নিবারণ।
নাঃ, তুমি আমার তেমনি হাবা মেয়ে কিনা। সব বুঝতে পেরেছিস, কেবল দুষ্টুমি!
ভৃত্যের প্রবেশ
ভৃত্যের প্রবেশ
ভৃত্য।
তিনটি বাবু এসেছে দেখা করতে।
ইন্দু।
তাদের যেতে বলে দে। সকাল থেকে কেবলই বাবু আসছে।
নিবারণ।
না না, ভদ্রলোক এসেছে,দেখা করা চাই।
ইন্দু।
তোমার যে নাবার সময় হয়েছে।
নিবারণ।
একবার শুনে নিই কী জন্যে এসেছেন, বেশি দেরি হবে না।
ইন্দু।
তুমি একবার গল্প পেলে আর উঠতে চাইবে না, আবার কালকের মতো খেতে দেরি হবে। আচ্ছা,আমি ঐ পাশের ঘরে দাঁড়িয়ে রইলুম,পাঁচ মিনিট বাদে ডেকে পাঠাব।
নিবারণ।
তোর শাসনের জ্বালায় আমি আর বাঁচি নে। চাণক্যের শ্লোক জানিস তো? প্রাপ্তে তু ষোড়শে বর্ষে পুত্রে মিত্রবদাচরেৎ। তা আমার কি সে বয়স পেরোয় নি?
[ ইন্দুর প্রস্থান
[ ইন্দুর প্রস্থান
নিবারণ।
(ভৃত্যের প্রতি) বাবুদের ডেকে নিয়ে আয়।
চন্দ্রকান্ত, বিনোদবিহারী ও গদাইয়ের প্রবেশ
চন্দ্রকান্ত, বিনোদবিহারী ও গদাইয়ের প্রবেশ
নিবারণ।
এই যে চন্দ্রবাবু! আসতে আজ্ঞা হোক। আপনারা সকলে বসুন। ওরে, তামাক দিয়ে যা।
চন্দ্রকান্ত।
আজ্ঞে না, তামাক থাক্।
নিবারণ।
তা, ভালো আছেন চন্দ্রবাবু?
চন্দ্রকান্ত।
আজ্ঞে হাঁ, আপনার আশীর্বাদে একরকম আছি ভালো।
নিবারণ।
আপনাদের কোথায় থাকা হয়?
বিনোদ।
আমরা কলকাতাতেই থাকি।
চন্দ্রকান্ত।
মহাশয়ের কাছে আমাদের একটি প্রস্তাব আছে।
নিবারণ।
(শশব্যস্ত হইয়া) কী বলুন।
চন্দ্রকান্ত।
মহাশয়ের ঘরে আদিত্যবাবুর যে অবিবাহিত কন্যাটি আছেন তাঁর জন্যে একটি সৎপাত্র পাওয়া গেছে। যদি অভিপ্রায় করেন--
নিবারণ।
অতি উত্তম কথা। পাত্রটি কে?
চন্দ্রকান্ত।
বিনোদবিহারীবাবুর নাম শুনেছেন বোধ করি।
নিবারণ।
বিলক্ষণ! তা আর শুনি নি! তিনি আমাদের দেশের একজন প্রধান লেখক। "জ্ঞানরত্নাকর' তো তাঁরি লেখা?
চন্দ্রকান্ত।
আজ্ঞে না। সে বৈকুণ্ঠ বসাক বলে একটি লোকের লেখা।
নিবারণ।
তাই বটে। আমার ভুল হয়েছে। তবে "প্রবোধলহরী'? আমি ঐ দুটোতে বরাবর ভুল করে থাকি।
চন্দ্রকান্ত।
আজ্ঞে না। "প্রবোধলহরী' তাঁর লেখা নয়। সেটা কার বলতে পারি নে।
নিবারণ।
তবে তাঁর একখানা বইয়ের নাম করুন দেখি।
চন্দ্রকান্ত।
"কাননকুসুমিকা' দেখেছেন কী?
নিবারণ।
"কাননকুসুমিকা'! না,দেখি নি। নামটি অতি সুললিত। বাংলা বই কবে সেই বাল্যকালে পড়তেম। তখন অবশ্যই "কাননকুসুমিকা' পড়ে থাকব,স্মরণ হচ্ছে না। তা বিনোদবাবুর পুত্রের বয়স কত হবে, ক'টি পাস করেছেন তিনি?
চন্দ্রকান্ত।
মশায় ভুল করছেন। বিনোদবাবুর বয়স অতি অল্প। তিনি এম। এ। পাস করে সম্প্রতি বি। এল। উত্তীর্ণ হয়েছেন। বিবাহ হয় নি। তাঁরই কথা মহাশয়কে বলছিলুম। তা আপনার কাছে প্রকাশ করে বলাই ভালো। এই এঁর নাম বিনোদবাবু।
নিবারণ।
আপনি বিনোদবাবু! আজ আমার কী সৌভাগ্য! আমি মেয়েদের কাছে শুনেছি আপনি দিব্যি লিখতে পারেন।
চন্দ্রকান্ত।
তা এঁর সঙ্গে আপনার ভাইঝির বিবাহ দিতে যদি আপত্তি না থাকে--
নিবারণ।
আপত্তি! আমার পরম সৌভাগ্য।
চন্দ্রকান্ত।
তা হলে এ সম্বন্ধে যা যা স্থির করবার আছে কাল এসে মহাশয়ের সঙ্গে কথা হবে।
নিবারণ।
যে আজ্ঞো। কিন্তু একটা কথা বলে রাখি--মেয়েটির বাপ টাকাকড়ি কিছু রেখে যেতে পারেন অনি। তবে এই পর্যন্ত বলতে পারি, এমন লক্ষ্মী মেয়ে আর পাবেন না।
চন্দ্রকান্ত।
তবে অনুমতি হয় তো এখন আসি।
নিবারণ।
এত শীঘ্র যাবেন? বলেন কী! আর-একটু বসুন-না।
চন্দ্রকান্ত।
আপনার এখনো নাওয়া-খাওয়া হয় নি--
নিবারণ।
সে এখন ঢের সময় আছে। বেলা তো সবে--
চন্দ্রকান্ত।
আজ্ঞে বেলা নিতান্ত কম হয় নি। এখন যদি আজ্ঞা করেন তো উঠি।
নিবারণ।
তবে আসুন। দেখুন চন্দরবাবু, মতি হালদারের ঐ-যে কুসুমকানন না কী বইখানা বললেন ওটা লিখে দিয়ে যাবেন তো।
চন্দ্রকান্ত।
কাননকুসুমিকা? বইখানা পাঠিয়ে দেব, কিন্তু সেটা মতি হালদারের নয়।
নিবারণ।
তবে থাক্। বরঞ্চ বিনোদবাবুর একখানা প্রবোধলহরী যদি থাকে তো একবার--
চন্দ্রকান্ত।
প্রবোধলহরী তো--
বিনোদ।
আঃ, থামো-না! তা,যে আজ্ঞো,আমিই পাঠিয়ে দেব। আমার প্রবোধলহরী, বারবেলাকথন, তিথিদোষখণ্ডন, প্রায়শ্চিত্তবিধি এবং নূতন পঞ্জিকা আপনাকে পাঠিয়ে দেব।
নিবারণ।
দেখুন,বিনোদবাবুর একখানি ফটোগ্রাফ পাওয়া যায় কি? তা হলে কমলকে একবার--
চন্দ্রকান্ত।
ফোটোগ্রাফ সঙ্গেই এনেছি,কিন্তু এতে আমাদের তিন জনেরই ছবি আছে।
নিবারণ।
তা হোক, ছবিটি দিব্যি উঠেছে, এতেই কাজ চলবে।
চন্দ্রকান্ত।
তা হলে আজ্ঞা হয় তো আসি।
[ প্রস্থান
[ প্রস্থান
নিবারণ।
নাঃ, লোকটার বিদ্যে আছে। বাঁচা গেল, একটি মনের মতো সৎপাত্র পাওয়া গেল। কমলের জন্য আমার বড়ো ভাবনা ছিল।
ইন্দুর প্রবেশ
ইন্দুর প্রবেশ
ইন্দু।
বাবা, তোমার হল?
নিবারণ।
ও ইন্দু,তুই তো দেখলি নে--তোরা সেই যে বিনোদবাবুর লেখার এত প্রশংসা করিস, তিনি আজ এসেছিলেন।
ইন্দু।
আমার তো খেয়েদেয়ে আর কাজ নেই,তোমার এখানে যত রাজ্যির অকেজো লোক এসে জোটে আর আমি আড়াল থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে তাদের দেখি! আচ্ছা বাবা, চন্দ্রবাবু বিনোদবাবু ছাড়া আর-একটি যে লোক এসেছিল--বদ্-চেহারা লক্ষ্মীছাড়ার মতো দেখতে, চোখে চশমা-পরা, সে কে?
নিবারণ।
তুই যে বলছিলি আড়াল থেকে দেখিস নে? বদ্-চেহারা আবার কার দেখলি? বাবুটি তো দিব্যি ফুটফুটে কার্তিকের মতো দেখতে। তাঁর নামটি কী জিজ্ঞাসা করা হয় নি।
ইন্দু।
তাকে আবার ভালো দেখতে হল? দিনে দিনে তোমার কী যে পছন্দ হচ্ছে বাবা! এখন নাইতে চলো।--
[ নিবারণের প্রস্থান
নাঃ, ওঁর নামটা জানতে হচ্ছে। নিশ্চয় ক্ষান্তদিদি বলতে পারবেন।--বাবা, শোনো শোনো।
[ নিবারণের পুনঃপ্রবেশ
ওরা তোমাকে বিনোদবাবুর একটা ফটোগ্রাফ দিয়ে গেল না?
নিবারণ।
হাঁ, এতে তিন বন্ধুরই ছবি আছে।
ইন্দু।
তাতে ক্ষতি নেই। ওটা আমাকে দাও-না, আমি দিদিকে দেখাব।
নিবারণ।
ভেবেছিলুম,আমি নিজে দেখাব।
ইন্দু।
না বাবা, আমি দেখাব, বেশ মজা হবে।
নিবারণ।
এই নে মা, কিন্তু ওকে নিয়ে বেশি ঠাট্টা করিস নে।
ইন্দু।
বাবা, আমার সঙ্গে চব্বিশ ঘণ্টা বাস করছে, আর যাই হোক ঠাট্টায় ওর আর বিপদের আশঙ্কা নেই।
[ নিবারণের প্রস্থান
[ নিবারণের প্রস্থান
ইন্দু।
কমলদিদি,কমলদিদি।
কমলের প্রবেশ
কমলের প্রবেশ
কমল।
কী ইন্দু?
ইন্দু।
আর দেরি কোরো না।
কমল।
কেন, কী করতে হবে বল্-না।
ইন্দু।
এখন কাব্যশাস্ত্রমতে কমলকে বিকশিত হয়ে উঠতে হবে।
কমল।
কেন বল্ তো।
ইন্দু।
খড়্খড়ের ফাঁক দিয়ে যাঁর অরুণরেখার আভাস পাওয়া যাচ্ছিল সেই দিনমণি উঠে পড়েছেন তোমার ভাগ্যগগনে।
কমল।
তুই খবর পেলি কোথা থেকে?
ইন্দু।
স্বয়ং দিনমণির কাছ থেকে।
কমল।
একটু স্পষ্ট ভাষায় কথা ক।
ইন্দু।
আমার চেয়ে ঢের বেশি অস্পষ্ট ভাষায় যিনি কাব্য রচনা করেন সেই কবি স্বয়ং এই ঘরে পরিদৃশ্যমান হয়েছিলেন।
কমল।
কী কারণে?
ইন্দু।
তোমার উপর করক্ষেপ করবার দাবি জানিয়ে যেতে। এতদিন যিনি ছিলেন তোমার কানের শোনা,এখন তিনি হবেন তোমার নয়নের মণি,বাবার কাছে স্বয়ং দরবার জানিয়ে গেছেন। তোমার মনের মানুষ এখন থেকে তোমারই কোণের মানুষ হবার উমেদার, কথাবার্তা ঠিকঠাক হয়ে গেছে। সুখবর কিনা বলো, দিদি!
কমল।
এখনো বলবার সময় হয় নি।
ইন্দু।
বলিস কী ভাই! কাব্যের চেয়ে কবির দাম বেশি নয়?
কমল।
দামের তুলনা করব কী করে? দুটো জিনিস এক জাতের নয়। যেমন মধু আর মধুকর।
ইন্দু।
সে কথা মানি। যেমন বাঁশ আর বাঁশি। বাঁশি যেরকম করে বাজে বাঁশ ঠিক তার বিপরীতভাবে অন্তরে বাহিরে বাজতে পারে, তা হলে কী করা কর্তব্য এইবেলা বলো। এখনো সময় আছে। নাহয় বাবাকে বলে আসি যে,কাব্যের মধ্যে শুধু কথার মিল চাই,সেটাতে ভুল হলেও চলে; কিন্তু কবির মধ্যে চাই প্রাণের মিল,সেটাতে ভুল হলে সাংঘাতিক। আজ নেই দিদি, স্বয়ং দেখেশুনে পছন্দ করে নাও। ছবিটা দেখে তার ভূমিকা করতে পারো।
কমল।
এর মধ্যে তো একজন দেখছি চন্দরবাবু।
ইন্দু।
বাকি দুজনের মধ্যে কে বিনোদবাবু আন্দাজ কর্ দেখি। এর মধ্যে কেই বা কোকিল কেই বা কাক,কেই বা কবি কেই বা অকবি বল্ দেখি।
কমল।
তোর মতন এমন সূক্ষ্ম দৃষ্টি আমার নেই ভাই!
ইন্দু।
আচ্ছা এই নে, তোর ডেস্কের উপর রাখ্, চেয়ে দেখতে দেখতে ভক্তের ধ্যানদৃষ্টিতে সত্য আপনি প্রকাশিত হবে। দময়ন্তী দুজনের মধ্যে নলকে চিনে নিয়েছিলেন,তোর তো কেবল দুজন।
কমল।
অত চিন্তায় অত ধ্যানে আমার দরকার নেই।
ইন্দু।
বলিস কী দিদি!
কমল।
আমি তো স্বয়ম্বরা হতে যাচ্ছি নে বোন! তা আমার আবার পছন্দ! দুটো-একটা কাপড়চোপড় ছাড়া জীবনের ক'টা জিনিসই বা নিজের পছন্দ অনুসারে পাওয়া গেছে? আপনাকেই আপনি পছন্দ করে নিতে পারি নি।
ইন্দু।
তুই ভাই, কথায় কথায় বড়ো বেশি গম্ভীর হয়ে পড়িস। বিনোদের কাছে যদি অমনি করে থাকিস তা হলে সে তোর সঙ্গে প্রেমালাপ করতে সাহস করবে না।
কমল।
সেজন্য নাহয় তুই নিযুক্ত থাকিস।
ইন্দু।
তা হলে যে তোর গাম্ভীর্য আরো সাতগুণ বেড়ে যাবে। দেখ্ ভাই, তুই তো একটা পোষা কবি হাতে পেলি, এবার তাকে দিয়ে তোর নিজের নামে কবিতা লিখিয়ে নিস, যতক্ষণ পছন্দ না হয় ছাড়িস নে। নিজের নামে কবিতা দেখলে কিরকম লাগে, কে জানে।
কমল।
মনে হয়, আমার নাম করে আর কাকে লিখছে। তোর যদি শখ থাকে আমি তোর নামে একটা লিখিয়ে নেব।
ইন্দু।
তুই কেন,সে আমি নিজে করে নেব। আমাদের যে সম্পর্ক আমি যে কান ধরে লিখিয়ে নিতে পারি। তুমি তো তা পারবে না। আপাতত ছবিটা তোর কাছে রাখ্।
কমল।
ছবিতে আমার দরকার নেই।
ইন্দু।
নেই দরকার? তবে ওটা আমার রইল? সর্বস্বত্ব ত্যাগ করলে?
কমল।
কেন বল্ দেখি। এত উৎসাহ কেন তোর?
ইন্দু।
সেদিন নাম খুঁজছিলুম, রূপও তো খুঁজতে হবে। এই ছবির মধ্যে যদি নামে রূপে মিল হয়ে যায়?
কমল।
অর্থাৎ?
ইন্দু।
অর্থাৎ (গদাইয়ের ছবি দেখাইয়া) এর নাম যদি গদাই না হয়, যদি কুমুদ কিম্বা পরিমল, কিম্বা কিশলয় কিম্বা কোকনদ, কিম্বা কপিঞ্জল হয়ে দাঁড়ায়?
কমল।
তা হলেই চুকে যাবে?
ইন্দু।
একেবারে চুকে না যাক, মিউজিয়মে একটা প্রথম স্পেসিমেন্ পাওয়া যাবে তো?
কমল।
আচ্ছা,তোর স্পেসিমেন্ জমা কর্--আপাতত তোর চুল বেঁধে দিই গে চল্।











