ক্ষান্তমণি ও ইন্দুমতী
চন্দ্রের অন্তঃপুর
ক্ষান্তমণি ও ইন্দুমতী
ইন্দু।
তোমার স্বামী আদর করেই ঠাট্টা করে, সে কি আর সত্যি!
ক্ষান্তমণি।
না ভাই, ঠাট্টা কি সত্যি ঠিক বুঝতে পারি নে। আর সত্যি হবারই বা আটক কী? নিজে তো জানি নিজের গুণ কত।
ইন্দু।
তোমার স্বামীর আবার তেমনি সব বন্ধু জুটেছে, তাঁরাই পাঁচজনে পাঁচ কথা বলে তাঁর মন উতলা করে দেয়। বিশেষ সেদিন বিনোদবাবু আর তোমার স্বামীর সঙ্গে আর-একটি বাবু আমাদের বাড়িতে গিয়েছিল,তাকে দেখে আমার আদবে ভালো লাগল না, লোকটি কে ভাই?
ক্ষান্তমণি।
কী জানি ভাই! বন্ধু একটি-আধটি তো নয়,সবগুলোকে আবার চিনিও নে।
ইন্দু।
এই দেখ্-না তার ছবি। (কাপড় খুঁজিয়া) এ কী হল! এই যাঃ, কোথায় ফেললুম!
ক্ষান্তমণি।
কী ফেললি?
ইন্দু।
ফটোগ্রাফ।
ক্ষান্তমণি।
কার?
ইন্দু।
বিনোদবাবুর। নিশ্চয় তোমাদের এই গলি পার হয়ে আসবার সময় রাস্তায় পড়ে গেছে। আমি যাই খুঁজে আনি গে।
ক্ষান্তমণি।
ছি ছি, রাস্তার মাঝে ছবি খুঁজতে গিয়ে লোক দাঁড় করিয়ে দিবি যে! সে ছবির এতই কিসের কদর?
ইন্দু।
হায় হায়,দিদি যদি কেঁদে-কেটে অনর্থপাত করে?
ক্ষান্তমণি।
তোর দিদি? কমল?
ইন্দু।
হাঁ গো, তার হৃদয় তো পাষাণ নয়, সে যে বড়ো কোমল, কী জানি, আজ থেকে যদি সে হাঙ্গার স্ট্রাইক শুরু করে?
ক্ষান্তমণি।
সে আবার কী?
ইন্দু।
যাকে সংস্কৃত ভাষায় বলে প্রায়োপবেশন।
ক্ষান্তমণি।
আর জ্বালাস নে, বাংলা ভাষায় কী বলে তাই বল্-না।
ইন্দু।
তাকে বলে উপোস ক'রে মরা।
ক্ষান্তমণি।
আমি যেন কমলকে জানি নে--তুই হলেও বা সম্ভব হত। কেন ভাই, আসল জিনিস যখন ধরা দিয়েছে তখন ছবিটার এত খোঁজ কেন?
ইন্দু।
আসল জিনিসকে ডেস্কে বসিয়ে রাখা যায় না, দেরাজে বন্ধ করা চলে না। আসল জিনিসের মেজাজের ঠিক নেই--বেশি খিদে পেলে ভালোবাসার কথা তার মনে থাকে না, বেশি ভালোবাসা পেলে অস্থির করে তোলে--কিন্তু--
ক্ষান্তমণি।
আচ্ছা আচ্ছা, তোর সেই "কিন্তু' এত বেশি দুর্লভ নয়।
ইন্দু।
ক্ষান্তদিদি, তোমার সেই বন্ধু তিনটির মধ্যে তৃতীয় ব্যক্তিটি কে বলো-না।
ক্ষান্তমণি।
খুব সম্ভব গদাই। সে ওদের সঙ্গে প্রায়ই থাকে বটে।
ইন্দু।
বাজি রাখতে পারি, সে গদাই নয়। তার নাম যদি গদাই হয় তা হলে আমার নাম মাতঙ্গিনী।
ক্ষান্তমণি।
তা হলে ললিত।
ইন্দু।
এই এতক্ষণে নামটি পাওয়া গেল। ললিত তার আর সন্দেহ নেই।
ক্ষান্তমণি।
চেহারাটা সুন্দর তো?
ইন্দু।
সুন্দর বৈকি।
ক্ষান্তমণি।
পাতলা,চোখে চশমা আছে?
ইন্দু।
হাঁ হাঁ, চোখে চশমা আছে। আর, সব কথাতেই মুচকে মুচকে হাসে।
ক্ষান্তমণি।
তবে আমাদের ললিত চাটুজ্জে, তাতে আর সন্দেহ নেই।
ইন্দু।
ললিত চাটুজ্জে না হয়ে যায় না। বাজি রাখতে পারি।
ক্ষান্তমণি।
কলুটোলার নিত্যকালী চাটুজ্জের ছেলে। ছোকরাটি কিন্তু মন্দ নয় ভাই। এম। এ। পাস করে জলপানি পাচ্ছে।
ইন্দু।
জলপানি পাবার মতোই চেহারা বটে। তা ওদের ঘরে স্ত্রী পুত্র পরিবার কেউ নেই নাকি? লক্ষ্মীছাড়ার মতো টো টো করে বেড়ায় কেন?
ক্ষান্তমণি।
স্ত্রী পুত্র থেকেই বা কী হয়? ওর তো তবু নেই। বলে যে, রোজগার না ক'রে বিয়ে করবে না।
ইন্দু।
জানিস, ক্ষান্তদিদি, ওদের তিনজনের ছবিতে যেন তিন কাল মূর্তিমান। চন্দ্রবাবু অতীত, বিনোদবাবু বর্তমান, আর ললিতবাবু ভাবী।
ক্ষান্তমণি।
ভাবী? কার ভাবী লো?
ইন্দু।
সে কথাটা রইল ভবিষ্যতের গর্ভে।
ক্ষান্তমণি।
দেখ্ ভাই ইন্দু, তোকে সত্যি করে বলি। তোরা তো আমাকে বঙ্কিমবাবুর বইগুলো পড়ালি, ভেবেছিলুম একটুও বুঝতে পারব না--কিন্তু বেশ লাগছে।
ইন্দু।
এই দেখ্, মুশকিলে ফেললি তো। তোর মনটা এখন আয়েষা হয়ে দাঁড়িয়েছে, কিন্তু ওজনমত জগৎসিংহ পাবি কোথা?
ক্ষান্তমণি।
তা বলিস নে ইন্দু। আমি যেরকম মাপের আয়েষা সেরকম মাপের জগৎসিংহও ঘরে মজুদ আছে। কিন্তু--
ইন্দু।
চালচলনটা দোরস্ত হয় নি। মনে মনে আয়েষা হয়েছ,ব্যবহারে আয়েষাগিরি করে উঠতে পারছ না।
ক্ষান্তমণি।
কতকটা তাই বটে।
ইন্দু।
প্র৻াক্টিক্যাল্ এডুকেশন হয় নি আর-কি। কিছুদিন প্র৻াক্টিস্ চাই।
ক্ষান্তমণি।
তোর ইংরিজি আমি বুঝতে পারি নে, ভাই।
ইন্দু।
আমার বক্তব্য হচ্ছে, বঙ্কিমের কাছে মন্ত্র পেয়েছ,আমার কাছ থেকে তার সাধনা পেতে হবে।
ক্ষান্তমণি।
তোমার কাছ থেকে?
ইন্দু।
আমার কাছ থেকে হলেই নিরাপদ হবে। মনুসংহিতার সঙ্গে বঙ্কিমবাবুর মিল রক্ষা করেই আমি তোমাকে শিক্ষা দেব। আজ এখনি হোক হাতে-খড়ি। আচ্ছা, এক কাজ করা যাক। মনে করো, আমি চন্দ্রবাবু, আপিস থেকে ফিরে এসেছি, খিদেয় প্রাণ বেরিয়ে যাচ্ছে--তার পর তুমি কী করবে বলো দেখি। রোসো ভাই, চন্দ্রবাবুর ঐ চাপকান আর শামলাটা পরে নিই, নইলে আমাকে চন্দ্রবাবু মনে হবে না।
[ আপিসের বেশ পরিধান ও ক্ষান্তর উচ্চহাস্য
[ আপিসের বেশ পরিধান ও ক্ষান্তর উচ্চহাস্য
ক্ষান্তমণি।
স্বামীর প্রতি পরিহাস অত্যন্ত গর্হিত কার্য। পতিব্রতা রমণী কদাপি উচ্চহাস্য করেন না। কোনো কারণে হাস্য অনিবার্য হইলে সাধ্বী স্ত্রী প্রথমে স্বামীর অনুমতি লইয়া পরে বদনে অঞ্চল দিয়া নয়ন নত করিয়া ঈষৎ স্মিতহাস্য হাসিতে পারেন। এই গেল মনুসংহিতা,এবার এসো নবীন কবির গীতিকাব্যে। আমি আপিস থেকে ফিরে এসেছি,এখন তোমার কী কর্তব্য বলো।
ক্ষান্তমণি।
প্রথমে তোমার চাপকানটি এবং শামলাটি খুলে দিই, তার পরে জলখাবার--
ইন্দু।
নাঃ, তোমার কিছু শিক্ষা হয় নি। আচ্ছা,তুমি তবে চন্দ্রবাবু সাজো,আমি তোমার স্ত্রী সাজছি--
ক্ষান্তমণি।
না ভাই,সে আমি পারব না--
ইন্দু।
আচ্ছা, তবে আর-একবার চেষ্টা করো, বড়োবউ, চাপকানটা খুলে আমার ধুতি-চাদরটা এনে দাও তো।
ক্ষান্তমণি।
(উঠিয়া) এই দিচ্ছি।
ইন্দু।
ও কী করছ! তুমি ঐখানে হাতের উপর মাথা রেখে বসে থাকো--বলো, "নাথ, আজ সন্ধেবেলায় কী সুন্দর বাতাস দিচ্ছে! আজ আর কিছুতে মন লাগছে না, ইচ্ছে করছে পাখি হয়ে উড়ে যাই।'
ক্ষান্তমণি।
(যথাশিক্ষিত) নাথ, আজ সন্ধেবেলায় কী সুন্দর বাতাস দিচ্ছে! আজ আর কিছুতে মন লাগছে না, ইচ্ছে করছে পাখি হয়ে উড়ে যাই।
ইন্দু।
কোথায় উড়ে যাবে? তার আগে আমায় লুচি দিয়ে যাও, ভারি খিদে পেয়েছে--
ক্ষান্তমণি।
(তাড়াতাড়ি উঠিয়া) এই দিচ্ছি--
ইন্দু।
এই দেখো, সব মাটি করলে। অস্থানে মনুসংহিতা এসে পড়ে। তুমি যেমন ছিলে তেমনি থাকো, বলো, "লুচি?' কই, লুচি তো আজ ভাজি নি। মনে ছিল না। আচ্ছা, লুচি কাল হবে এখন। আজ, এসো, এখানে এই মধুর বাতাসে বসে--'
চন্দ্র (নেপথ্য হইতে) ।
বড়োবউ!
ইন্দু।
ঐ চন্দ্রবাবু আসছেন! আমাকে দেখতে পেয়েছেন বোধ হল। তুমি বোলো তো ভাই, বাগবাজারের চৌধুরীদের কাদম্বিনী। আমার পরিচয় দিয়ো না, লক্ষ্মীটি,মাথা খাও।
[ পলায়ন
[ পলায়ন
পাশের ঘর
গদাই আসীন। চাপকান-শামলাপরা ইন্দুর ছুটিয়া প্রবেশ
পাশের ঘর
গদাই আসীন। চাপকান-শামলাপরা ইন্দুর ছুটিয়া প্রবেশ
গদাই।
একি!
ইন্দু।
ও মা, এ যে সেই ললিতবাবু! আর তো পালাবার পথ নেই। (সামলাইয়া লইয়া ধীরে ধীরে চাপকান-শামলা খুলিয়া গদাইয়ের প্রতি) তোমার বাবুর এই শামলা আর এই চাপকান। সাবধান করে রেখো, হারিয়ো না। আর শীগগির দেখে এসো দেখি, বাগবাজারের চৌধুরীবাবুদের বাড়ি থেকে পালকি এসেছে কিনা।
গদাই।
(হাসিয়া) যে আজ্ঞা।
[ প্রস্থান
[ প্রস্থান
ইন্দু।
ছি ছি! ললিতবাবু কী মনে করলেন! যা হোক, আমাকে তো চেনেন না। ভাগ্যিস, হঠাৎ বুদ্ধি জোগালো,বাগবাজারের চৌধুরীদের নাম করে দিলুম। চন্দ্রবাবুর এ বাসাটিও হয়েছে তেমনি। অন্দর বাহির সব এক। এখন আমি কোন্ দিক দিয়ে পালাই? ঐ আবার আসছে। মানুষটি তো ভালো নয়।
গদাইয়ের প্রবেশ
গদাইয়ের প্রবেশ
গদাই।
ঠাকরুন,পালকি তো আসে নি। এখন কী আজ্ঞা করেন?
ইন্দু।
এখন তুমি তোমার কাজে যেতে পারো। না, না, এ যে তোমার মনিব এ দিকে আসছেন। ওঁকে আমার খবর দেবার কোনো দরকার নেই,আমার পালকি নিশ্চয় এসেছে।
[ প্রস্থান
[ প্রস্থান
গদাই।
কী চমৎকার! আর কী উপস্থিত বুদ্ধি! বা বা! আমাকে হঠাৎ একদম চাকর বানিয়ে দিয়ে গেল--সেও আমার পরম ভাগ্যি। বাঙালির ছেলে চাকরি করতেই জন্মেছি,কিন্তু এমন মনিব কি অদৃষ্টে জুটবে? নির্লজ্জতাও ওকে কেমন শোভা পেয়েছে! আহা, এই শামলা আর এই চাপকান চন্দরকে ফিরিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে না। বাগবাজারের চৌধুরী! সন্ধান নিতে হচ্ছে।
চন্দ্রের প্রবেশ
চন্দ্রের প্রবেশ
চন্দ্রকান্ত।
তুমি এ ঘরে ছিলে নাকি? তবে তো দেখেছ?
গদাই।
চক্ষু থাকলেই দেখতে হয়--কিন্তু কে বলো দেখি।
চন্দ্রকান্ত।
বাগবাজারের চৌধুরীদের মেয়ে কাদম্বিনী। আমার স্ত্রীর একটি বন্ধু।
গদাই।
ওঁর স্বামী বোধ করি স্বাধীনতাওয়ালা?
চন্দ্রকান্ত।
ওঁর আবার স্বামী কোথায়?
গদাই।
মরেছে বুঝি? আপদ গেছে। কিন্তু বিধবার মতো বেশ তো--
চন্দ্রকান্ত।
বিধবা নয় হে--কুমারী। যদি হঠাৎ স্নায়ুর ব্যামো ঘটে থাকে তো বলো, ঘটকালি করি।
গদাই।
তেমন স্নায়ু হলে এতদিনে গলায় দড়ি দিয়ে মরতুম।
চন্দ্রকান্ত।
তা হলে চলো, একবার বিনোদকে দেখে আসা যাক। তার বিশ্বাস, সে ভারি একটা অসমসাহসিক কাজ করতে প্রবৃত্ত হয়েছে, তাই একেবারে সপ্তমে চড়ে রয়েছে--যেন তার পূর্বে বঙ্গদেশে বাপ-পিতামহের আমল থেকে বিবাহ কেউ করে নি!
গদাই।
মেয়েমানুষকে বিয়ে করতে হবে,তার আবার ভয় কিসের?
চন্দ্রকান্ত।
বলো কী গদাই? বিধাতার আশীর্বাদে জন্মালুম পুরুষ হয়ে,কী জানি কার শাপে বিয়ে করতে গেলুম মেয়েমানুষকে, এ কি কম সাহসের কথা? গদাই, যেয়ো না হে! তোমাকে দরকার আছে, এখনি আসছি।
[ প্রস্থান
[ প্রস্থান
গদাই।
(পকেট হইতে নোটবুক ও পেন্সিল বাহির করিয়া) আর তো পারছি নে। মাথার ভিতরটা যেরকম ঘুলিয়ে গেছে, আজ বোধ হয় একটা দুষ্কর্ম করব। কবিতা লিখে ফেলব। বুদ্ধি পরিষ্কার থাকলে কবিতার ব্যাক্টিরিয়া জন্মাতেই পারে না। চিত্তের অবস্থাটা খুব অস্বাস্থ্যকর হওয়া চাই। আজ আমাদের মগজের ভিতরে ঐ কীটাণুগুলি কেবলই চোদ্দ অক্ষর খুঁজে কিলবিল করে বেড়াচ্ছে।
[ লিখিতে প্রবৃত্ত
কাদম্বিনী যেমনি আমায় প্রথম দেখিলে,
কেমন করে ভৃত্য বলে তখনি চিনিলে।
ভাবটা নতুন রকমের হয়েছে, কিন্তু হতভাগা ছন্দটাকে বাগাতে পারছি নে। (গণনা করিয়া) প্রথম লাইনটা হয়েছে ষোলো, দ্বিতীয়তা হয়েছে পনেরো। কিন্তু কাকে ফেলে কাকে রাখি। (চিন্তা) "আমায়'-কে "আমা' বললে কেমন শোনায়? কাদম্বিনী যেমনি আমা প্রথম দেখিলে--কানে তো নেহাত খারাপ ঠেকছে না। তবুও একটা অক্ষর বেশি থাকে। কাদম্বিনীর "নী'টা কেটে যদি সংক্ষেপ করে দেওয়া যায়? পুরো নামের চেয়ে সে তো আরো আদরের শুনতে হবে। কাদম্বি--না,ঠিক শোনাচ্ছে না। কদম্ব--ঠিক হয়েছে--
কদম্ব যেমনি আমা প্রথম দেখিলে,
কেমন করে ভৃত্য বলে তখনি চিনিলে।
উঁ হুঁ,ও হচ্ছে না, "কেমন করে' কথাটাকে তো কমাবার জো নেই। "কেমন করিয়া'--তাতে আরো একটা অক্ষর বেড়ে যায়। "তখনি চিনিলে'র জায়গায় "তৎক্ষনাৎ চিনিলে' বসিয়ে দিতে পারি,কিন্তু সুবিধে হয় না। দূর হোক গে! ছন্দে লেখাটা বর্বরতা। যে সময় পুরুষমানুষ কানে কুন্ডল, হাতে অঙ্গদ পরত,পদ্য জিনিসটা সেই যুগের; ডিমক্রাটিক যুগের জন্যে গদ্য। হওয়া উচিত ছিল--"বলি ও কাদম্বিনী, যেমনি আমার উপর নজর পড়ল অমনি আমাকে গোলাম বলে চিনে নিলে কেমন করে খুলে বলো তো।' এর মধ্যে বিক্রমাদিত্যের নবরত্নসভার সীলমোহরের ছাপ নেই--একেবারে খাস শ্রীযুক্ত গদাইচন্দ্রের গোমুখী-বিনির্গত।
শিবচরণের প্রবেশ
শিবচরণের প্রবেশ
শিবচরণ ।
কী হচ্ছে গদাই?
গদাই।
আজ্ঞে, ফিজিয়লজির নোটগুলো একবার দেখে নিচ্ছি।
শিবচরণ।
ফিজিয়লজির কোন্ জায়গাটাতে আছ?
গদাই।
হার্টের ফাংশন নিয়ে।
শিবচরণ।
দেখি তোমার নোটবইটা। আমি তোমাকে হয়তো কিছু--
গদাই।
আজ্ঞে, এ একেবারে লেটেস্ট্ থিওরি নিয়ে--বোধ হয় মাসখানেক হল এর ডিস্কভারি হয়েছে। এখনো সকলে জানে না।
শিবচরণ।
সত্যি নাকি? আমি আবার চশমাটা আনি নি। সব্জেক্টটা ইন্টারেস্টিং, পরে শুনে নেব তোর কাছ থেকে। কিন্তু,এখানে করছিস কী?
গদাই।
এক্জামিনটা খুব কাছে এসেছে--চন্দ্রবাবুর বাসাটা নিরিবিলি আছে, তাই এখানে--
শিবচরণ।
দেখো বাপু, একটা কথা আছে। তোমার বয়স হয়েছে,তাই আমি তোমার জন্যে একটি কন্যা ঠিক করেছি।
গদাই।
(স্বগত) কী সর্বনাশ!
শিবচরণ।
নিবারণবাবুকে জানো বোধ করি--
গদাই।
আজ্ঞে হাঁ, জানি।
শিবচরণ।
তাঁরই কন্যা ইন্দুমতী। মেয়েটি দেখতে শুনতে ভালো,বয়সেও তোমার যোগ্য। দিনও একরকম স্থির।
গদাই।
একেবারে স্থির করেছেন? কিন্তু এখন তো হতে পারে না।
শিবচরণ।
কেন বাপু?
গদাই।
এক্জামিন কাছে এসেছে--
শিবচরণ।
তা হোক্-না এক্জামিন। বউমাকে বাপের বাড়ি রেখে দেব, এক্জামিন হয়ে গেলে ঘরে আনা যাবে।
গদাই।
ডাক্তারিটা পাস না করেই কি--
শিবচরণ।
কেন বাপু,তোমার সঙ্গে তো একটা শক্ত ব্যায়রামের বিয়ে দিচ্ছি নে। মানুষ ডাক্তারি না জেনেও বিয়ে করে। কিন্তু,আপত্তিটা কিসের জন্যে?
গদাই।
উপার্জনক্ষম না হয়ে বিয়ে করাটা--
শিবচরণ।
উপার্জন? আমি কি তোমাকে আমার বিষয় থেকে বঞ্চিত করতে যাচ্ছি? তুমি কি সাহেব হয়েছ যে, বিয়ে করেই স্বাধীন ঘরকন্না করতে যাবে?
[ গদাই নিরুত্তর
তোমার হল কী! বিয়ে করবে, তার আবার এত ভাবনা কী! আমি কি তোমার ফাঁসির হুকুম দিলুম!
গদাই।
বাবা,আপনার পায়ে পড়ি,আমাকে এখন বিয়ে করতে অনুরোধ করবেন না।
শিবচরণ।
(সরোষে) অনুরোধ কী বেটা! হুকুম করব। আমি বলছি, তোকে বিয়ে করতেই হবে।
গদাই।
আমাকে মাপ করুন,আমি এখন কিছুতেই বিয়ে করতে পারব না।
শিবচরণ।
(উচ্চস্বরে) কেন পারবি নে! তোর বাপ পিতামহ। তোর চৌদ্দপুরুষ বরাবর বিয়ে করে এসেছে,আর তুই বেটা দু পাতা ইংরিজি উলটে আর বিয়ে করতে পারবি নে!
গদাই।
আমি মিনতি করে বলছি বাবা,একেবারে মর্মান্তিক অনিচ্ছে না থাকলে আমি কখনোই এ প্রস্তাবে--
শিবচরণ।
তুমি বেটা আমার বংশে জন্মগ্রহণ করে হঠাৎ একদিনে এত বড়ো বৈরাগী হয়ে উঠলে কোথা থেকে। এমন সৃষ্টিছাড়া অনিচ্ছেটা হল কেন,সেটা তো শোনা আবশ্যক।
গদাই।
আচ্ছা, আমি মাসিমাকে সব কথা বলব,আপনি তাঁর কাছে জানতে পারবেন।
শিবচরণ।
আচ্ছা।
[ প্রস্থান
[ প্রস্থান
গদাই।
আমার ছন্দ মিল ভাব সমস্ত ঘুলিয়ে গেল; এখন যে আর এক লাইনও মাথায় আসবে এমন সম্ভাবনা দেখি নে।
চন্দ্রের প্রবেশ
চন্দ্রের প্রবেশ
চন্দ্রকান্ত।
আজ বিনোদের বিয়ে,মনে আছে তো গদাই?
গদাই।
তাই তো, ভুলে গিয়েছিলুম বটে।
চন্দ্রকান্ত।
তোমার স্মরণশক্তির যেরকম অবস্থা দেখছি, এক্জামিনের পক্ষে সুবিধে নয়। এইখানে বৈঠক হবে,চলো ওদের ধরে নিয়ে আসিগে।
গদাই।
আজ শরীরটা তেমন ভালো ঠেকছে না, আজ থাক্--
চন্দ্রকান্ত।
বিনোদের বিয়েটা তো বছরের মধ্যে সদা সর্বদা হবে না গদাই! যা হবার আজই চুকে যাবে। অতএব আজ তোমাকে ছাড়ছি নে, চলো।
গদাই।
চলো।
[ প্রস্থান
[ প্রস্থান
ক্ষান্তমণি ও ইন্দুর প্রবেশ
ক্ষান্তমণি ও ইন্দুর প্রবেশ
ইন্দু।
বর তো তোমাদের এখান থেকেই বেরোবেন? তাঁর তিন কূলে আর কেউ নেই নাকি?
ক্ষান্তমণি।
বাপ-মা নেই বটে,কিন্তু শুনেছি দেশে পিসি-মাসি সব আছে--তাদের খবরও দেয় নি। বলে যে,বিয়ে করছি, হাট বসাচ্ছি নে তো। আবার বলে কী,এ তো আর শুম্ভ-নিশুম্ভর যুদ্ধু না, কেবল দুটিমাত্র প্রাণীর বিয়ে,এত শোরশরাবৎ লোক-লস্করের দরকার কী?
ইন্দু।
একবার আমাদের হাতে পড়ুক-না,দুটিমাত্র প্রাণীর বিয়ে যে কিরকম ধুন্দুমার ব্যাপার,তা তাঁকে একরকম মোটামুটি বুঝিয়ে দেব।--আজ যে তুমি বাইরের ঘরে?
ক্ষান্তমণি।
এই ঘরে সব বরযাত্রী জুটবে। দেখ্-না ভাই,ঘরের অবস্থাখানা। তারা আসবার আগে একটুখানি গুছিয়ে নেবার চেষ্টায় আছি।
ইন্দু।
তোমার একলার কর্ম নয়,এসো ভাই,দুজনে এ জঞ্জাল সাফ করা যাক। এগুলো দরকারি নাকি?
ক্ষান্তমণি।
কিচ্ছু না। যত রাজ্যির পুরোনো খবরের কাগজ জুটেছে। কাগজগুলো যেখানে পড়া হয়ে যায় সেইখানেই পড়ে থাকে।
ইন্দু।
এগুলো?
ক্ষান্তমণি।
এগুলো মকদ্দমার কাগজ--হারাতে পারলে বাঁচেন বোধ হয়। কেন যে হারায় না তাও তো বুঝতে পারি নে। কতকগুলো গদির নীচে গোঁজা, কতক আলমারির মাথায়,কতক ময়লা চাপকানের পকেটে। যখন কোনোটার দরকার পড়ে বাড়ি মাথায় করে বেড়ান,আস্তাকুঁড় থেকে আর বাড়ির ছাত পর্যন্ত এমন যায়গা নেই যেখানে না খুঁজতে হয়।
ইন্দু।
এর সঙ্গে যে ইংরেজি নভেলও আছে--তারও আবার পাতা ছেঁড়া! কতকগুলি চিঠি--এ কি দরকারি!
ক্ষান্তমণি।
ওর মধ্যে দরকারি আছে অ-দরকারিও আছে,কিচ্ছু বলবার জো নেই। খুব গোপনীয়ও আছে,সেগুলো চারিদিকে ছড়ানো। খুব বেশি দরকারি চিঠি সাবধান করে রাখবার জন্যে বইয়ের মধ্যে গুঁজে রাখা হয়, সে আর কিছুতেই খুঁজে পাওয়া যায় না।
ইন্দু।
এ-সব কী। কতকগুলো লেখা, কতকগুলো প্রুফ, খালি দেশলাইয়ের বাক্স, কাননকুসুমিকা, কাগজের পুঁটুলির মধ্যে ছাতাধরা মসলা, একখানা তোয়ালে,গোটাকতক দাবার ঘুঁটি,একটি ইস্কাবনের গোলাম,ছাতার বাঁট--এ চাবির গোছা ফেলে দিলে বোধ হয় চলবে না?
ক্ষান্তমণি।
এই দেখো! এই চাবির মধ্যে ওঁর যথাসর্বস্ব। আজ সকালে একবার খোঁজ পড়েছিল, কোথাও সন্ধান না পেয়ে শেষে উমাপতিদের বাড়ি থেকে সতেরোটা টাকা ধার করে নিয়ে এলেন। দাও তো ভাই, এ চাবি ওঁকে সহজে দেওয়া হবে না। ঐ ভাই,ওরা আসছে,চলো ও ঘরে পালাই।
[ প্রস্থান
[ প্রস্থান
বিনোদ, চন্দ্রকান্ত, গদাই, নলিনাক্ষ, শ্রীপতি ও ভূপতির প্রবেশ
বিনোদ, চন্দ্রকান্ত, গদাই, নলিনাক্ষ, শ্রীপতি ও ভূপতির প্রবেশ
বিনোদ।
(টোপর পরিয়া) সঙ তো সাজলাম,এখন তোমরা পাঁচ জনে মিলে হাততালি দাও--উৎসাহ হোক,মনটা দমে যাচ্ছে।
চন্দ্রকান্ত।
এরই মধ্যে? এখনো তো রঙ্গমঞ্চে চড় নি?
বিনোদ।
আচ্ছা চন্দর,অভিনয়ে আমার পার্ট কী হবে বুঝিয়ে দাও দেখি।
চন্দ্রকান্ত।
মহারাণীর বিদূষক।
বিনোদ।
সাজটিও যথোপযুক্ত হয়েছে। ইংরেজ রাজাদের যে ফুল্গুলো ছিল তাদেরও টুপিটা এই টোপরের মতো।
চন্দ্রকান্ত।
সেজের বাতি নিবিয়ে দেবার ঠোঙাগুলোরও ঐরকম চেহারা। এই পঁচিশটা বৎসরের যত-কিছু শিক্ষা-দীক্ষা,যত-কিছু আশা-আকাঙক্ষা--ভারতের ঐক্য,বাণিজ্যের উন্নতি,সমাজের সংস্কার,সাহেবের ছেলে পিটোনো প্রভৃতি যে-সকল উঁচু উঁচ ভাবের পলতে মগজের ঘি খেয়ে খুব উজ্জ্বল হয়ে জ্বলে উঠেছিল সেগুলো ঐ টোপর চাপা পড়ে একদম নিবে যাবে।
শ্রীপতি।
চন্দরদা,তুমি তো বিয়ে করেছ, বলো-না কী করতে হবে। হাঁ করে সবাই মিলে দাঁড়িয়ে থাকলে কি "বিয়ে-বিয়ে' মনে হয়?
চন্দ্রকান্ত।
সে তো ভাই, স্টোন্-এজ্,আইস্-এজের কথা। সে যুগে না ছিল পূর্বরাগের কোমলতা, না ছিল অপূর্ব অনুরাগের উত্তাপ। কেবল বিবাহের যিনি আদ্যাশক্তি সেই মহামায়াই আজও আছেন অন্তরে-বাহিরে,আর সমস্তই ভুলেছি।
ভূপতি।
শ্যালীর হাতের কানমলা?
চন্দ্রকান্ত।
হায় পোড়াকপাল! শ্যালী থাকলে তবু বিবাহের সংকীর্ণতা অনেকটা কাটে, ওরই মধ্যে একটুখানি পাশ ফেরবার জায়গা পাওয়া যায়--শ্বশুরমশায় একেবারে কড়ায় গন্ডায় ওজন করে দিয়েছেন,সিকি পয়সার ফাউ দেন নি।
বিনোদ।
বাস্তবিক, বর পছন্দ করবার সময় যেমন জিজ্ঞাসা করে কটি পাস আছে,কনে পছন্দ করবার সময় তেমনি খোঁজ নেওয়া উচিত কটি ভগিনী আছে।
চন্দ্রকান্ত।
চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে। ঠিক বিয়ের দিনটিতে বুঝি চৈতন্য হল? নিতান্ত বঞ্চিত হবে না; তোমার কপালে একটি আছে,নামটি হচ্ছে ইন্দুমতী।
গদাই।
(স্বগত) যাঁকে আমার স্কন্ধের উপর উদ্যত করা হয়েছে--সর্বনাশ আর-কি।
শ্রীপতি।
বিনোদ,একটুখানি বোসো।
বিনোদ।
না ভাই,তা হলে আর উঠতে পারব না, মনটা দেহের উপরে যেন পাথরের কাগজচাপা হয়ে চেপে রাখবে।
ভূপতি।
এসো তবে, বর কনের উদ্দেশে থ্রী চিয়ার্স্ দিয়ে বেরিয়ে পড়া যাক। হিপ্ হিপ্ হুরে--
চন্দ্রকান্ত।
দেখো,আমার প্রিয়বন্ধুর বিয়েতে আমি কখনোই এরকম অনাচার হতে দেব না; শুভকর্মে অমন বিদেশী শেয়াল-ডাক ডেকো না। তার চেয়ে সবাই মিলে উলু দেবার চেষ্টা করো-না।
নলিনাক্ষ।
এই তবে আমাদের অবিবাহিত বন্ধুত্বের শেষ মিলন। জীবনস্রোতে তুমি এক দিকে যাবে, আমি এক দিকে যাব। প্রার্থনা করি তুমি সুখে থাকো। কিন্তু মুহূর্তের জন্যে ভেবে দেখো বিনু, এই মরুময় জগতে তুমি কোথায় যাচ্ছ--
চন্দ্রকান্ত।
বিনু, তুই বল্,মা,আমি তোমার জন্যে দাসী আনতে যাচ্ছি। তা হলে কনকাঞ্জলিটা হয়ে যায়।
শ্রীপতি।
এইবার তবে উলু আরম্ভ হোক।
[ সকলে উলুর চেষ্টা ও প্রস্থান
[ সকলে উলুর চেষ্টা ও প্রস্থান
ইন্দু ও ক্ষান্তমণির প্রবেশ
ইন্দু ও ক্ষান্তমণির প্রবেশ
ক্ষান্তমণি।
শুনলি তো ভাই, আমার কর্তাটির মধুর কথাগুলি?
ইন্দু।
কেন ভাই, আমার তো মন্দ লাগে নি।
ক্ষান্তমণি।
তোর মন্দ লাগবে কেন? তোর তো আর বাজে নি। যার বেজেছে সেই জানে--
ইন্দু।
তুমি যে একেবারে ঠাট্টা সইতে পার না। তোমার স্বামী কিন্তু ভাই তোমাকে সত্যি ভালোবাসে। দিনকতক বাপের বাড়ি গিয়ে বরং পরীক্ষা করে দেখো-না--
ক্ষান্তমণি।
তাই একবার ইচ্ছা করে, কিন্তু জানি থাকতে পারব না। তা যা হোক, এখন তোদের ওখানে যাই। ওরা তো বউবাজারের রাস্তা ঘুরে যাবে,সে এখনো ঢের দেরি আছে।
ইন্দু।
তুমি এগোও ভাই,তোমার স্বামীর এই বইগুলি গুছিয়ে দিয়ে যাই।
[ ক্ষান্তর প্রস্থান
ললিতবাবু তাঁর এই খাতাটা ফেলে গেছেন। এটা না দেখে আমি যাচ্ছি নে। (খাতা খুলিয়া) ওমা! এ যে কবিতা। কাদম্বিনীর প্রতি। আ মরণ। সে পোড়ারমুখি আবার কে।
জল দিবে অথবা বজ্র, ওগো কাদম্বিনী,
হতভাগ্য চাতক তাই ভাবিছে দিনরজনী।
ভারি যে অবস্থা খারাপ! জলও না,বজ্রও না,হতভাগ্য চাতকের জন্যে কবিরাজের তেলের দরকার।
আর কিছু দাও বা না-দাও,অয়ি অবলে সরলে,
বাঁচি সেই হাসিভরা মুখ আর-একবার দেখিলে।
আহাহাহা! অবলে সরলে! পুরুষগুলো ভারি বোকা! মনে করলে, ওঁর প্রতি ভারি অনুগ্রহ করে সে হেসে গেল। হাসতে নাকি সিকি পয়সা খরচ হয়। কই আমাদের কাছে তো কোনো কাদম্বিনী সাত পুরুষে এমন করে হাসতে আসে না! অবলে সরলে! সত্যি বাপু, মেয়ে জাতটাই ভালো নয়। এত ছলও জানে। ছি ছি! এ কবিতাও তেমনি। আমি যদি কাদম্বিনী হতুম তো এমন পুরুষের মুখ দেখতাম না। যে লোক চোদ্দটা অক্ষর সামলে চলতে পারে না তার সঙ্গে আবার প্রণয়! এ খাতা আমি ছিঁড়ে ফেলব; পৃথিবীর একটা উপকার করব; কাদম্বিনীর দেমাক বাড়তে দেব না।
পুরুষের বেশে হরিলে পুরুষের মন,
এবার নারীবেশে কেড়ে নিয়ে যাও জীবন মরণ।
এর মানে কী!
কদম্ব যেমনি আমা প্রথম দেখিলে,
কেমন করে ভৃত্য বলে তখনি চিনিলে!
ওমা! ওমা! ওমা! এ যে আমারি কথা। এইবার বুঝেছি পোড়ারমুখি কাদম্বিনী কে! (হাস্য) তাই বলি,এমন করে কাকে লিখলেন! ওমা, কত কথাই বলেছেন। আর-একবার ভালো করে সমস্তটা পড়ি, কিন্তু কী চমৎকার হাতের অক্ষর! একেবারে যেন মুক্তো বসিয়ে গেছে।
[ নীরবে পাঠ
পশ্চাৎ হইতে খাতা অন্বেষণে গদাইয়ের প্রবেশ
কিন্তু ছন্দ থাক্ না-থাক্ পড়তে তো কিছুই খারাপ হয় নি, সত্যি,ছন্দ নেই বলে আরো মনের সরল ভাবটা ঠিক যেন প্রকাশ হয়েছে। আমার বেশ লাগছে। আমার বোধ হয় ছেলেদের প্রথম ভাঙা কথা যেমন মিষ্টি লাগে কবিদের প্রথম ভাঙা ছন্দ তেমনি মিষ্টি। (খাতা বুকে চাপিয়া) এ খাতা আমি নিয়ে যাব। এ তো আমাকেই লিখেছেন। আমার এমনি আনন্দ হচ্ছে। (প্রস্থানোদ্যম। পশ্চাতে ফিরিয়া গদাইকে দেখিয়া)ওমা! (মুখ আচ্ছাদন)
গদাই।
ঠাকরুন,আমি একখানা খাতা খুঁজতে এসেছিলুম।
[ ইন্দুমতীর দ্রুত পলায়ন
জন্ম জন্ম কেবলই আমার খাতাই হারাক। কবিতার বদলে যা পেয়েছি কালিদাস তাঁর কুমারসম্ভব শকুন্তলা বাঁধা রেখে এমন জিনিস পায় না!
[ মহা উল্লাসে প্রস্থান
[ মহা উল্লাসে প্রস্থান