শিবাশোধনসমিতির একটা রিপোর্ট পাঠিয়েছে আমাদের সে। পুপুদিদির আসরে আজ সন্ধেবেলায় সেইটে পাঠ হবে।

রিপোর্ট

সন্ধেবেলায় মাঠে বসে গায়ে হাওয়া লাগাচ্ছি এমন সময় শেয়াল এসে বললে, দাদা, তুমি নিজের কাচ্চাবাচ্চাদের মানুষ করতে লেগেছ, আমি কী দোষ করেছি।

জিজ্ঞাসা করলেম, কী করতে হবে শুনি।

শেয়াল বললে, নাহয় হলুম পশু, তাই ব'লে কি উদ্ধার নেই। পণ করেছি, তোমার হাতে মানুষ হব।

শুনে মনে ভাবলুম, সৎকার্য বটে।

জিজ্ঞাসা করলুম, তোমার এমন মৎলব হল কেন।

সে বললে, যদি মানুষ হতে পারি তা হলে শেয়াল-সমাজে আমার নাম হবে, আমাকে পুজো করবে ওরা।

আমি বললুম, বেশ কথা।

বন্ধুদের খবর দেওয়া গেল। তারা খুব খুশি। বললে, একটা কাজের মতো কাজ বটে। পৃথিবীর উপকার হবে। ক'জনে মিলে একটা সভা করলুম, তার নাম দেওয়া গেল শিবা-শোধন-সমিতি।

পাড়ায় আছে অনেক কালের একটা পোড়ো চণ্ডীমণ্ডপ। সেখানে রোজ রাত্তির নটার পরে শেয়াল-মানুষ-করার পুণ্যকর্মে লাগা গেল।

জিজ্ঞাসা করলুম, বৎস, তোমাকে জ্ঞাতিরা কী নামে ডাকে।

শেয়াল বললে, হৌহৌ।

আমরা বললুম, ছি ছি, এ তো চলবে না। মানুষ হতে চাও তো প্রথমে নাম বদলাতে হবে, তার পরে রূপ। আজ থেকে তোমার নাম হল শিবুরাম।

সে বললে, আচ্ছা। কিন্তু মুখ দেখে বোঝা গেল, হৌহৌ নামটা তার যেরকম মিষ্টি লাগে শিবুরাম তেমন লাগল না। উপায় নেই, মানুষ হতেই হবে।

প্রথম কাজ হল তাকে দু পায়ে দাঁড় করানো। অনেক দিন লাগল। বহু কষ্টে নড়্‌বড়্‌ করতে করতে চলে, থেকে থেকে পড়ে পড়ে যায়। ছ মাস গেল দেহটাকে কোনোমতে খাড়া রাখতে। থাবাগুলো ঢাকবার জন্য পরানো হল জুতো মোজা দস্তানা।

অবশেষে আমাদের সভাপতি গৌর গোঁসাই বললেন, শিবুরাম, এইবার আয়নায় তোমার দ্বিপদী ছন্দের মূর্তিটা দেখো দেখি, পছন্দ হয় কিনা।

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ঘুরে ফিরে ঘাড় বেঁকিয়ে শিবুরাম অনেক ক্ষণ ধরে দেখলে। শেষকালে বললে, গোঁসাইজি, এখনো তোমার সঙ্গে তো চেহারার মিল হচ্ছে না।

গোঁসাইজি বললেন, শিবু, সোজা হলেই কি হল। মানুষ হওয়া এত সোজা নয়। বলি, লেজটা যাবে কোথায়। ওটার মায়া কি ত্যাগ করতে পার।

শিবুরামের মুখ গেল শুকিয়ে। শেয়ালপাড়ায় দশবিশ গাঁয়ের মধ্যে ওর লেজ ছিল বিখ্যাত।

সাধারণ শেয়ালরা ওর নাম দিয়েছিল 'খাসা-লেজুড়ি'। যারা শেয়ালি-সংস্কৃত জানত তারা সেই ভাষায় ওকে বলত, 'সুলোমলাঙ্গুলী'। দু দিন গেল ওর ভাবতে, তিন রাত্রি ওর ঘুম হল না। শেষকালে বৃহস্পতিবারে এসে বললে, রাজি।

পাট্‌কিলে রঙের ঝাঁকড়া রোঁয়াওয়ালা লেজটা গেল কাটা, একেবারে গোড়া ঘেঁষে।

সভ্যেরা সকলে বলে উঠল, অহো, পশুর এ কী মুক্তি! লেজবন্ধনের মায়া ওর এত দিনে কেটে গেল! ধন্য!

শিবুরাম একটা গভীর দীর্ঘনিশ্বাস ফেললে। চোখের জল সামলিয়ে নিয়ে সেও অতি করুণসুরে বললে, ধন্য!

সেদিন ওর আহারে রুচি রইল না, সমস্ত রাত সেই কাটা লেজের স্বপ্ন দেখলে।

পরদিন শিবুরাম সভায় এসে হাজির। গোঁসাইজি বললেন, কেমন হে শিবু, দেহটা হাল্কা বোধ হচ্ছে তো?

শিবুরাম বললে, আজ্ঞে, খুবই হাল্কা। কিন্তু মন বলছে, লেজ গেল তবু মানুষের সঙ্গে বর্ণভেদ তো ঘুচল না।

গোঁসাই বললেন, রঙ মিলিয়ে সবর্ণ হতে চাও যদি, তবে রোঁয়া ঘুচিয়ে ফেলো।

তিনু নাপিত এল।

পাঁচ দিন লাগল খুর বুলিয়ে বুলিয়ে লোমগুলো চেঁচে ফেলতে। রূপ যেটা ফুটে উঠল তা দেখে সভ্যরা সবাই চুপ করে গেল।

শিবুরাম উদ্‌বিগ্ন হয়ে বললে, মশায়, আপনারা কোনো কথা বলেন না কেন।

সভ্যরা বললে, আমরা নিজের কীর্তিতে অবাক।

শিবুরাম মনে শান্তি পেল। কাটা লেজ ও চাঁচা রোঁয়ার শোক ভুলে গেল।

সভ্যরা দুই চক্ষু বুজে বললেন, শিবুরাম, আর নয়। সভা বন্ধ হল। এখন--

শিবু বললে, এখন আমার কাজ হবে শেয়াল-সমাজকে অবাক করা।

এ দিকে শিবুরামের পিসি খেঁকিনি কেঁদে কেঁদে মরে। গাঁয়ের মোড়ল হুক্কুইকে গিয়ে বললে, মোড়ল মশায়, আজ এক বছরের উপর হয়ে গেল আমার হৌহৌকে দেখি নে কেন। বাঘ-ভাল্লুকের হাতে পড়ল না তো?

মোড়ল বললে, বাঘ-ভাল্লুককে ভয় কিসের? ভয় ঐ মানুষ জানোয়ারটাকে, হয়তো তাদের ফাঁদে পড়েছে।

খোঁজ পড়ে গেল। ঘুরতে ঘুরতে ভলণ্টিয়ারের দল এল সেই চণ্ডীমণ্ডপের বাঁশবনে। ডাক দিলে, হুক্কা হুয়া।

শিবুরামের বুকের মধ্যে ধড়্‌ফড়্‌ করে উঠল, একবার গলা ছেড়ে ঐ একতানমন্ত্রে যোগ দিতে ইচ্ছা হল। বহু কষ্টে চেপে গেল।

দ্বিতীয় প্রহরে বাঁশবনে আবার ডাক উঠল, হুক্কা হুয়া। এবার শিবুরামের চাপা গলায় কান্নার মতো একটুখানি রব উঠল। তবু থেমে গেল।

তৃতীয় প্রহরে ওরা আবার যখন ডাক ছাড়লে শিবুরাম আর থাকতে পারলে না; ডেকে উঠল, হুক্কা হুয়া, হুক্কা হুয়া, হুক্কা হুয়া।

হুক্কুই বললে, ঐ তো হৌহৌয়ের গলা শুনি। একবার হাঁক দাও তো।

ডাক পড়ল, হৌহৌ!

সভাপতি বিছানা ছেড়ে এসে বললেন, শিবুরাম!

বাইরে থেকে আবার ডাক পড়ল, হৌহৌ!

গোঁসাইজি আবার সতর্ক করে দিলেন, শিবুরাম!

তৃতীয়বার ডাকে শিবুরাম ছুটে বেরিয়ে আসতেই শেয়ালরা দিল দৌড়। হুক্কুই, হৈয়ো, হূহূ প্রভৃতি বড়ো বড়ো শেয়াল-বীর আপন আপন গর্তের ভিতর গিয়ে ঢুকল।

সমস্ত শেয়াল-সমাজ স্তম্ভিত।

তার পর ছ মাস গেল।

শেষ খবর পাওয়া গেছে। শিবুরাম সারারাত হেঁকে হেঁকে বেড়াচ্ছে, আমার লেজ কই, আমার লেজ কই।

গোঁসাইয়ের শোবার ঘরে সামনের রোয়াকে ব'সে উর্ধ্ব দিকে মুখ তুলে প্রহরে প্রহরে কোকিয়ে উঠে বলে, আমার লেজ ফিরে দাও।

গোঁসাই দরজা খুলতে সাহস করে না-- ভয় পায়, পাছে তাকে খ্যাপা শেয়ালে কামড়ায়।

শেয়ালকাঁটার বনে যেখানে শিবুরামের বাড়ি সেখানে ওর যাওয়া বন্ধ। জ্ঞাতিরা ওকে দূর থেকে দেখলে, হয় পালায় নয় খেঁকিয়ে কামড়াতে আসে। ভাঙা চণ্ডীমণ্ডপেই থাকে, সেখানে একজোড়া প্যাঁচা ছাড়া আর অন্য প্রাণী নেই। খাঁদু, গোবর, বেঁচি, ঢেঁড়ি প্রভৃতি বড়ো বড়ো ডানপিটে ছেলেরাও ভূতের ভয়ে সেখানকার জঙ্গল থেকে কর্‌মচা পাড়তে যায় না।

শেয়ালি ভাষায় শেয়াল একটা ছড়া লিখেছে, তার আরম্ভটা এইরকম--

ওরে লেজ, হারা লেজ, চক্ষে দেখি ধুঁয়া।

বক্ষ মোর গেল ফেটে হুক্কা হুয়া হুয়া॥

পুপে বলে উঠল, কী অন্যায়, ভারি অন্যায়। আচ্ছা, দাদামশায়, ওর মাসিও ওকে নেবে না ঘরে?

আমি বললুম, তুমি ভেবো না; ওর গায়ের রোঁয়াগুলো আবার উঠুক, তখন ওকে চিনতে পারবে।

কিন্তু, ওর লেজ?

হয়তো লাঙ্গুলাদ্য ঘৃত পাওয়া যেতে পারে কবিরাজমশায়ের ঘরে। আমি খোঁজ নেব।

সে আমাকে আড়ালে নিয়ে গিয়ে বললে, রাগ কোরো না দাদা, হক্‌ কথা বলব-- তোমারও শোধনের দরকার হয়েছে।

বে-আদব কোথাকার, কিসের শোধন আমার।

তোমার ঐ বুড়োমির শোধন। বয়স তো কম হয় নি, তবু ছেলেমানুষিতে পাকা হতে পারলে না।

প্রমাণ পেলে কিসে।

এই-যে রিপোর্টটা পড়ে শোনালে, ওটা তো আগাগোড়া ব্যঙ্গ, প্রবীণ বয়সের জ্যাঠামি। দেখলে না পুপুদিদির মুখ কিরকম গম্ভীর? বোধ হয় গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠেছিল। ভাবছিল, রোঁয়া-চাঁচা শেয়ালটা এখনি এল বুঝি তার কাছে নালিশ করতে। বুদ্ধির মাত্রাটা একটু কমাতে যদি না পার তা হলে গল্প বলা ছেড়ে দাও।

ওটা কমানো আমার পক্ষে শক্ত। তুমি বুঝবে কী ক'রে; তোমাকে তো চেষ্টাই করতে হয় না, বিধাতা আছেন তোমার সহায়।

দাদা, রাগ করছ বটে, কিন্তু আমি বলে দিলুম, বুদ্ধির ঝাঁজে তোমার রস যাচ্ছে শুকিয়ে। মজা করছ মনে কর, কিন্তু তোমার ঠাট্টা গায়ে ঠেকলে ঝামার মতো লাগে। এর আগে তোমাকে অনেকবার সতর্ক করে দিয়েছি--হাসতে গিয়ে, হাসাতে গিয়ে পরকাল খুইয়ো না। লেজকাটা শেয়ালের কথা শুনে পুপুদিদির চোখ জলে ভরে এসেছিল, দেখতে পাও নি বুঝি? বল তো আজই তাকে আমি একটুখানি হাসিয়ে দিই গে-- বিশুদ্ধ হাসি, তাতে বুদ্ধির ভেজাল নেই।

লেখা তৈরি আছে নাকি?

আছে। নাটকি চালের আলাপ। বললেই হবে, আমাদের পাড়ার উধো গোবরা আর পঞ্চুতে মিলে কথা হচ্ছে। ওদের সবাইকে দিদি চেনে।

আচ্ছা বেশ, দেখা যাক।

গেছো বাবা

উধো। কী রে, সন্ধান পেলি?

গোবরা। আরে ভাই, তোমার কথা শুনে আজ মাসখানেক ধরে বনে-বাদাড়ে ঘুরে ঘুরে হাড় মাটি হল, টিকিও দেখতে পেলুম না।

পঞ্চু। কার সন্ধান করছিস রে।

গোবরা। গেছো বাবার।

পঞ্চু। গেছো বাবা? সে আবার কে রে।

উধো। জানিস নে? বিশ্বসুদ্ধ লোক তাকে জানে।

পঞ্চু। তা, গেছো বাবার ব্যাপারটা কী শুনি।

উধো। বাবা যে গাছে চড়ে বসবে সেই গাছই হবে কল্পতরু। তলায় দাঁড়িয়ে হাত পাতলেই যা চাইবি তাই পাবি রে।

পঞ্চু। খবর পেলি কার কাছ থেকে।

উধো। ধোকড় গাঁয়ের ভেকু সর্দারের কাছ থেকে। বাবা সেদিন ডুমুর গাছে চড়ে বসে পা দোলাচ্ছিল; ভেকু জানে না, তলা দিয়ে যাচ্ছে, মাথায় ছিল এক হাঁড়ি চিটেগুড়, তামাক তৈরি করবে। বাবার পায়ে ঠেকে তার হাঁড়ি গেল টলে-- চিটেগুড়ে তার মুখ চোখ গেল বুজে। বাবার দয়ার শরীর; বললে, ভেকু, তোর মনের কামনা কী খুলে বল্‌। ভেকুটা বোকা; বললে, বাবা, একখানা ট্যানা দাও, মুখটা মুছে ফেলি। যেমনি বলা অমনি গাছ থেকে খসে পড়ল একখানা গামছা। মুখ চোখ মুছে উপরে যখন তাকালো তখন আর কারও দেখা নেই। যা চাইবে কেবল একবার। বাস্‌, তার পরে কেঁদে আকাশ ফাটালেও সাড়া মিলবে না।

পঞ্চু। হায় রে হায়, শাল নয়, দোশালা নয়, শুধু একখানা গামছা! ভেকুর আর বুদ্ধি কত হবে।

উধো। তা হোক, নেপু। ঐ গামছা নিয়েই তার দিব্যি চলে যাচ্ছে-- দেখিস নি? রথতলার কাছে অত বড়ো আটচালা বানিয়েছে। গামছা হোক, বাবার গামছা তো।

পঞ্চু। কী করে বল। ভেল্‌কি নাকি।

উধো। হোঁদলপাড়ার মেলায় ভেকু সেদিন বাবার গামছা পেতে বসল। হাজারে হাজারে লোক এসে জুটল। বাবার নামে টাকাটা সিকেটা আলুটা মুলোটা চার দিক থেকে গামছার উপর পড়তে লাগল। মেয়েরা কেউ বা এসে বলে, ও ভেকুদাদা, আমার ছেলেটার মাথায় বাবার গামছা একটু ঠেকিয়ে দে, আজ তিমমাস ধ'রে জ্বরে ভুগছে। ওর নিয়ম হচ্ছে নৈবিদ্যি চাই পাঁচ সিকে,পাঁচটা সুপুরি, পাঁচ কুন্‌কে চাল, পাঁচ ছটাক ঘি।

পঞ্চু। নৈবিদ্যি তো দিচ্ছে, ফল পাচ্ছে কিছু?

উধো। পাচ্ছে বৈকি। গাজন পাল গামছা ভরে পনেরো দিন ধরে ধান ঢেলেছে; তার পরে ঐ গামছার কোণে দড়ি লাগিয়ে একটা পাঁঠাও দিলে বেঁধে, ঐ পাঁঠার ডাকে চার দিক থেকে লোক এসে জমল। কী বলব, ভাই, মাস এগারো পরেই গাজনের চাকরি জুটে গেল। আমাদের রাজবাড়ির কোতোয়ালের সিদ্ধি ঘোঁটে, তার দাড়ি চুম্‌রিয়ে দেয়।

পঞ্চু। সত্যি বলছিস?

উধো। সত্যি না তো কী। গাজন যে আমার মামাতো ভাইয়ের ভায়রা-ভাই হয়।

পঞ্চু। আচ্ছা ভাই উধো, গামছাটা তুই দেখেছিস?

উধো। দেখেছি বৈকি। হটুগঞ্জের তাঁতে দেড়গজ ওসারের যে গামছা বুনুনি হয়, চাঁপার বরন জমি, লাল পাড়, এক্কেবারে বেমালুম তাই।

পঞ্চু। বলিস কী। তা, সে গাছের উপর থেকে পড়ল কী করে।

উধো। ঐ তো মজা। বাবার দয়া!

পঞ্চু। চল্‌ ভাই, চল্‌, খোঁজ করতে বেরোই। কিন্তু, চিনব কী করে।

উধো। সেই তো মুশকিল। কেউ তো তাকে দেখে নি। আবার হবি তো হ, ভেকু বেটার চোখ গেল চিটেগুড়ে বুজে।

পঞ্চু। তবে উপায়?

উধো। আমি তো হাটে ঘাটে যাকে দেখছি তাকেই জোড়হাত ক'রে জিগেস করছি, দয়া ক'রে জানাও, তুমিই কি গেছো বাবা। শুনে তারা তেড়ে মারতে আসে। একজন তো দিল আমার মাথায় হুঁকোর জল ঢেলে।

গোবরা। তা দিক গে। ছাড়া হবে না। খুঁজে বের করবই। যা থাকে কপালে।

পঞ্চু। ভেকু বলে, গাছে চড়লেই তবে বাবার চেহারা ধরা পড়ে, যখন নীচে থাকেন চেনবারই জো নেই।

উধো। গাছে চড়িয়ে চড়িয়ে মানুষকে পরখ করব কী ক'রে ভাই। আমি এক বুদ্ধি করেছি, আমার আমড়া গাছ আমড়ায় ভরে গেছে, যাকে দেখছি তাকেই বলছি, আমড়া পেড়ে নাও-- গাছটা প্রায় খালি হয়ে এল, ডালগুলোও ভেঙেছে।

পঞ্চু। আর দেরি নয় রে, চল্‌। কপালের জোর যদি থাকে তবে দর্শনলাভ হবেই। একবার গলা ছেড়ে ডাক দে-না, ভাই! গেছো বাবা, ও বাবা, দয়াল বাবা, পারুলবনে কোথাও যদি থাক লুকিয়ে, একবার অভাগাদের দর্শন দাও।

গোবরা। ওরে হয়েছে রে, দয়া হল বুঝি।

পঞ্চু। কই রে, কই।

গোবরা। ঐ-যে চালতা গাছে।

পঞ্চু। কী রে, চালতা গাছে কী। দেখছি নে তো কিছু।

গোবরা। ঐ-যে দুলছে।

পঞ্চু। কী দুলছে। ও তো লেজ রে।

উধো। তোর কেমন বুদ্ধি গোবরা, ও বাবার লেজ নয় রে, হনুমানের লেজ। দেখছিস নে মুখ ভ্যাঙাচ্ছে।

গোবরা। ঘোর কলি যে! বাবা ঐ কপিরূপ ধরেছেন আমাদের ভোলাবার জন্যে।

পঞ্চু। ভুলছি নে, বাবা, কালামুখ দেখিয়ে ভোলাতে পারবে না। যত পার মুখ ভ্যাঙাও, নড়ছি নে-- তোমার ঐ শ্রীলেজের শরণ নিলুম।

গোবরা। ওরে, বাবা যে লম্বা লাফ দিয়ে পালাতে শুরু করল রে।

পঞ্চু। পালাবে কোথায়। আমাদের ভক্তির দৌড়ের সঙ্গে পারবে কেন।

গোবরা। ঐ বসেছে কয়েৎবেল গাছের ডগায়।

উধো। পঞ্চু, উঠে পড়্‌-না গাছে।

পঞ্চু। আরে, তুই ওঠ্‌-না।

উধো। আরে, তুই ওঠ্‌।

পঞ্চু। অত উচ্চে উঠতে পারব না, বাবা, কৃপা ক'রে নেমে এসো।

উধো। বাবা, তোমার ঐ শ্রীলেজ গলায় বেঁধে যেন চক্ষু মুদতে পারি এই আশীর্বাদ করো।

[ প্রস্থান

ওহে কমবুদ্ধি, হাসাতে পারলে?

না। যে মানুষ সবই বিনা বিচারে বিশ্বাস করতে পারে তাকে হাসানো সোজা নয়। ভয় হচ্ছে, পুপেদিদি পাছে গেছো বাবার সন্ধান করতে আমাকে পাঠায়।

মুখ দেখে আমারও তাই বোধ হচ্ছে। গেছো বাবার 'পরে ওর টান পড়েছে। আচ্ছা, কাল পরীক্ষা ক'রে দেখব, বিশ্বাস না করিয়েও মজা লাগাতে পারা যায় কি না।

কিছুক্ষণ বাদে পুপু এসে বললে, আচ্ছা, দাদামশায়, গেছো বাবার কাছে তুমি হলে কী চাইতে।

আমি বললেম, পুপুদিদির জন্যে এমন একটা কলম চাইতেম যা নিয়ে লিখতে বসলে অঙ্ক কষতে একটা ভুলও হত না।

পুপুদিদি হাততালি দিয়ে বলে উঠল, আঃ, সে কী মজাই হত!

অঙ্কে দিদি এবার একশোর মধ্যে সাড়ে তেরো মার্কা পেয়েছে।
1 | 2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8 | 9...15