নিমাই আসীন
চাপকান-শামলা-পরা ইন্দুমতীর ছুটিয়া প্রবেশ
পার্শ্বের ঘর
নিমাই আসীন
চাপকান-শামলা-পরা ইন্দুমতীর ছুটিয়া প্রবেশ
নিমাই।
এ কী!
ইন্দুমতী।
ছি ছি, আর-একটু হলেই চন্দ্রবাবুর কাছে এই বেশে ধরা পড়তুম। তিনি কী মনে করতেন? আমাকে বোধ হয় দেখতে পাননি। (হঠাৎ নিমাইকে দেখিয়া) ও মা, এ যে সেই ললিতবাবু! আর তো পালাবার পথ নেই! (সামলাইয়া লইয়া ধীরে ধীরে চাপকান-শামলা খুলিয়া নিমাইয়ের প্রতি) তোমার বাবুর এই শামলা, আর এই চাপকান। সাবধান করে রেখো, হারিয়ো না। আর শিগ্গির দেখে এস দেখি বাগবাজারের চৌধুরীবাবুদের বাড়ি থেকে পালকি এসেছে কিনা।
নিমাই।
(ঈষৎ হাসিয়া) যে আজ্ঞা।
[ প্রস্থান
[ প্রস্থান
ইন্দুমতী।
ছি ছি! লজ্জায় ললিতবাবুকে ভালো করে দেখে নিতেও পারলুম না। আজ কী করলুম! ললিতবাবু কী মনে করলেন! যা হোক, আমাকে তো চেনেন না। ভাগ্যিস্ হঠাৎ বুদ্ধি জোগাল, বাগবাজারের চৌধুরীদের নাম করে দিলুম। চন্দ্রবাবুর এ বাসাটিও হয়েছে তেমনি। অন্দর বাহির সব এক। এখন আমি কোন্ দিক দিয়ে পালাই! ওই আবার আসছে। মানুষটি তো ভালো নয় ! অন্য কোনো লোক হলে অবস্থা বুঝে চলে যেত! ও আবার ছল করে যে ফিরে আসে! কেন বাপু, দেখবার জিনিস এখানে কী এমন আছে!
নিমাইয়ের প্রবেশ
নিমাইয়ের প্রবেশ
নিমাই।
ঠাকরুন, পালকি তো আসেনি। এখন কী আজ্ঞা করেন।
ইন্দুমতী।
এখন তুমি তোমার কাজে যেতে পার। না না, ওই যে তোমার মনিব এদিকে আসছেন। ওঁকে আমার সম্বন্ধে খবর দেবার কোনো দরকার নেই, আমার পালকি নিশ্চয়ই এসেছে।
[ প্রস্থান
[ প্রস্থান
নিমাই।
কী চমৎকার রূপ! আর কী উপস্থত বুদ্ধি! চোখে মুখে কেমন উজ্জ্বল জীবন্ত ভাব ! বা, বা! আমাকে হঠাৎ চাকর বানিয়ে দিয়ে গেল-- সেও আমার পরম ভাগ্যি! বাঙালির ছেলে চাকরি করতেই জন্মেছি কিন্তু এমন মনিব কি অদৃষ্টে জুটবে! পুরুষের কাপড়ও যেমন মানিয়েছিল ওইটুকু নির্লজ্জতাও ওকে কেমন বেশ শোভা পেয়েছিল। আহা, এই শামলা আর এই চাপকান চন্দরকে ফিরিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে না। বাগবাজারের চৌধুরী! সন্ধান নিতে হচ্ছে।
চন্দ্রকান্তের প্রবেশ
চন্দ্রকান্তের প্রবেশ
চন্দ্রকান্ত।
তুমি এ ঘরে ছিলে না কি। তবে তো দেখেছ?
নিমাই।
চক্ষু থাকলেই দেখতে হয়-- কিন্তু কে বলো দেখি?
চন্দ্রকান্ত।
বাগবাজারের চৌধুরীদের মেয়ে কাদম্বিনী। আমার স্ত্রীর একটি বন্ধু।
নিমাই।
ওর স্বামী বোধ করি স্বাধীনতাওয়ালা?
চন্দ্রকান্ত।
ওঁর আবার স্বামী কোথায়?
নিমাই।
মরেছে বুঝি? আপদ গেছে। কিন্তু বিধবার মতো বেশ নয় তো--
চন্দ্রকান্ত।
বিধবা নয় হে কুমারী। যদি হঠাৎ স্নায়ুর ব্যামো ঘটে থাকে তো বলো,ঘটকালি করি।
নিমাই।
তেমন স্নায়ু হলে এতদিনে গলায় দড়ি দিয়ে মরতুম।
চন্দ্রকান্ত।
তা হলে চলো একবার বিনোদকে দেখে আসা যাক। তার বিশ্বাস সে ভারি একটা অসমসাহসিক কাজ করতে প্রবৃত্ত হয়েছে,তাই একেবারে সপ্তমে চড়ে রয়েছে-- যেন তার পূর্বে বঙ্গদেশে বিবাহ আর কেউ করেনি!
নিমাই।
মেয়েমানুষকে বিয়ে করতে হবে তার আবার ভয় কিসের? এমন যদি হত, না দেখে বিয়ে করতে গিয়ে দৈবাৎ একটা পুরুষমানুষ বেরিয়ে পড়ত তা হলে বটে!
চন্দ্রকান্ত।
বল কী নিমাই? বিধাতার আশীর্বাদে জন্মালুম পুরুষমানুষ হয়ে, কী জানি কার শাপে বিয়ে করতে গেলুম মেয়েমানুষকে, এ কি কম সাহসের কথা?
নলিনাক্ষের প্রবেশ
নলিনাক্ষের প্রবেশ
চন্দ্রকান্ত।
আরে, আরে, এস নলিনদা। ভালো তো?
নলিনাক্ষ।
(নিমাইয়ের প্রতি) বিনোদ কোথায়?
চন্দ্রকান্ত।
বিনোদ যেখানেই থাক্, আপাতত আমার মতো এতবড়ো লোকটা কি তোমার নলিনাক্ষগোচর হচ্ছে না। তোমার ভাব দেখে হঠাৎ ভয় হয়, তবে আমি হয়তো বা নেই।
নলিনাক্ষ।
আমি বিনোদকে খুঁজছি।
চন্দ্রকান্ত।
ইচ্ছা করলে অমনি ইতিমধ্যে আমার সঙ্গেও দুটো-একটা কথা কয়ে নিতে পার। তা চলো, আমরাও তার কাছে যাচ্ছি।
নলিনাক্ষ।
তা হলে তোমরা এগোও। আমি পরে যাব এখন।
[ প্রস্থান
[ প্রস্থান