নিমাইয়ের ঘর

নিমাই ও শিবচরণ

নিমাইয়ের ঘর

নিমাই ও শিবচরণ

শিবচরণ।

এই বুড়োবয়েসে তুই যে একটা সামান্য বিষয়ে আমাকে এত দুঃখ দিবি তা কে জানত।

নিমাই।

বাবা, এটা কি সামান্য বিষয় হল।

শিবচরণ।

আরে বাপু, সামান্য না তো কী। বিয়ে করা বই তো নয়। রাস্তার মুটেমজুরগুলোও যে বিয়ে করছে। ওতে তো খুব বেশি বুদ্ধি খরচ করতে হয় না, বরঞ্চ কিছু টাকা খরচ আছে, তা সেও বাপমায়ে জোগায়। তুই এমন বুদ্ধিমান ছেলে,এতগুলো পাশ করে শেষকালে এইখানে এসে ঠেকল?

নিমাই।

আপনি তো সব শুনেছেন-- আমি তো বিয়ে করতে অসম্মত নই--

শিবচরণ।

আরে, তাতেই তো আমার বুঝতে আরো গোল বেধেছে। যদি বিয়ে করতেই আপত্তি না থাকে তবে না হয় একটাকে না করে আর- একটাকেই করলি। নিবারণকে কথা দিয়েছি-- আমি তার কাছে মুখ দেখাই কী করে।

নিমাই।

নিবারণবাবুকে ভালো করে বুঝিয়ে বললেই সব--

শিবচরণ।

আরে, আমি নিজে বুঝতে পারিনে, নিবারণকে বোঝাব কী। আমি যদি তোর মাকে বিয়ে না করে তোর মাসিকে বিয়ে করবার প্রস্তাব মুখে আনতুম, তা হলে তোর ঠাকুরদাদা কি আমার দুখানা হাড় একত্র রাখত। পড়েছিস ভালোমানুষের হাতে--

নিমাই।

শুনেছি আমার ঠাকুরর্দামশায়ের মেজাজ ভালো ছিল না--

শিবচরণ।

কী বলিস বেটা ! মেজাজ ভালো ছিল না! তোর বাবার চেয়ে তিন-শ গুণে ভালো ছিল! কিছু বলিনে বলে বটে! -- সে যা হোক, এখন যা হয় একটা কথা ঠিক করেই বল্‌।

নিমাই।

আমি তো বরাবর এক কথাই বলে আসছি।

শিবচরণ।

(সরোষে) তুই তো বলছিস এক কথা। আমিই কি এক কথার বেশি বলছি। মাঝের থেকে কথা যে আপনিই দুটো হয়ে যাচ্ছে। আমি এখন নিবারণকে বলি কী। তা সে যা হোক, তুই তা হলে নিবারণের মেয়ে ইন্দুমতীকে কিছুতেই বিয়ে করবিনে? যা বলবি এক কথা বল্‌।

নিমাই।

কিছুতেই না বাবা।

শিবচরণ।

একমাত্র বাগবাজারের কাদম্বিনীকেই বিয়ে করবি? ঠিক করে বলিস।

নিমাই।

সেই রকমই স্থির করেছি--

শিবচরণ।

বড়ো উত্তম কাজ করেছ -- এখন আমি নিবারণকে কী বলব?

নিমাই।

বলবেন, আপনার অবাধ্য ছেলে তাঁর কন্যা ইন্দুমতীর যোগ্য নয়।

শিবচরণ।

কোথাকার নির্লজ্জ! আমাকে আর তোর শেখাতে হবে না। কী বলতে হবে তা আমি বিলক্ষণ জানি। তবে ওর আর কিছুতেই নড়চড় হবে না?

নিমাই।

না বাবা, সেজন্যে আপনি ভাববেন না।

শিবচরণ।

আরে ম'ল! আমি সেই জন্যেই ভেবে মরছি আর-কি! আমি ভাবছি, নিবারণকে বলি কী!
1 | 2 | 3 | 4 | 5 | 6