বন্দী কান্যকুব্জরাজ, অন্যান্য রাজগণ ও সুবর্ণ
কাঞ্চী।
রাজগণ, রণক্ষেত্রের কাজ শেষ হল?
কলিঙ্গ।
কই শেষ হল। বীরত্বের পুরস্কারটি গ্রহণ করবার পূর্বেই আর-একবার তো বীরত্বের পরিচয় দিতে হবে।
কাঞ্চী।
মহারাজ, এখানে তো আমরা জয়মাল্য নিতে আসি নি, বরমাল্য নিতে এসেছি।
বিদর্ভ।
সেই মালা কি জয়লক্ষ্ণীর হাত থেকে নিতে হবে না।
কাঞ্চী।
না মহারাজ, পুষ্পধনুর অন্তঃপুরেই সে মালা গাঁথা হচ্ছে। রক্ত-মাখা হাতে সেটা ছিন্ন করতে গেলে ফুল ধুলায় লুটিয়ে পড়বে।
কলিঙ্গ।
কিন্তু মহারাজ, পঞ্চশর আমাদের সাতজনের দাবি মেটাবেন কী করে।
কাঞ্চী।
তা যদি বলেন, সাতজনের দাবি তো রণচণ্ডীও মেটাতে পারেন না।
কোশল।
কাঞ্চীরাজ, তোমার প্রস্তাবটি কী পরিষ্কার করেই বলো।
কাঞ্চী।
আমার প্রস্তাব এই, স্বয়ংবরসভায় রাজকন্যা স্বয়ং যাঁর গলায় মালা দেবেন, এই বসন্তের সফলতা তিনিই লাভ করবেন।
বিদর্ভ।
এ প্রস্তাব উত্তম, আমার এতে সম্মতি আছে।
সকলে।
আমাদেরও আছে।
কান্যকুব্জ।
রাজগণ, আমাকে বধ করুন, অথবা দ্বন্দ্বযুদ্ধে আহ্বান করছি, আপনারা আসুন-- আমাকে জীবিত-মৃত্যুর হাতে সমর্পণ করবেন না।
কাঞ্চী।
আপনার কন্যা পতিকুল ত্যাগ করে এসেছেন। তার অধিক দুঃখ আমরা আপনাকে দিচ্ছি নে। এখন যে প্রস্তাব করলেম তাতে তিনি সম্মান লাভ করবেন।
কোশল।
শুভলগ্নে কালই স্বয়ংবরের দিন স্থির হোক।
কাঞ্চী।
সেই ভালো।
বিদর্ভ।
আমরা আয়োজনে প্রবৃত্ত হই গে।
কাঞ্চী।
কলিঙ্গরাজ, বন্দী এখন আপনার আশ্রয়েই রইলেন।
[ কাঞ্চী ব্যতীত অন্য রাজগণের প্রস্থান
[ কাঞ্চী ব্যতীত অন্য রাজগণের প্রস্থান
কাঞ্চী।
ওহে ভণ্ডরাজ!
সুবর্ণ।
কী আদেশ।
কাঞ্চী।
এখন মহারথীরা সরবেন। এবার শিখণ্ডীকে সামনে নিয়ে অগ্রসর হতে হবে।
সুবর্ণ।
মহারাজের কথাটা স্পষ্ট বুঝতে পারছি নে।
কাঞ্চী।
সেখানে তোমাকে আমার ছত্রধর হয়ে বসতে হবে।
সুবর্ণ।
কিংকর প্রস্তুত আছে, কিন্তু তাতে মহারাজের উপকারটা কী হবে।
কাঞ্চী।
ওহে সুবর্ণ, দেখতে পাচ্ছি তোমার বুদ্ধিটা কম বলেই অহংকারটাও কম। রানী সুদর্শনা তোমাকে কী চক্ষে দেখেছেন সেটা এখনো তোমার ধারণার মধ্যে প্রবেশ করে নি দেখছি। যাই হোক, তিনি তো রাজসভায় ছত্রধরের গলায় মালা দিতে পারবেন না, অথচ অধিক দূরে যেতেও মন সরবে না; অতএব যেমন করেই হোক, এ মালা আমারই রাজছত্রের ছায়ায় এসে পড়বে।
সুবর্ণ।
মহারাজ, আমার সম্বন্ধে এই-যে সব অমূলক কল্পনা করছেন, এ অতি ভয়ানক কল্পনা। দোহাই আপনার, আমাকে এই মিথ্যা বিপত্তিজালের মধ্যে জড়াবেন না-- আমাকে মুক্তি দিন।
কাঞ্চী।
কাজটি শেষ হয়ে গেলেই তোমাকে মুক্তি দিতে এক মুহূর্তও বিলম্ব করব না। উদ্দেশ্যসিদ্ধি হয়ে গেলেই উপায়টাকে কেউ আর চিরস্মরণীয় করে রাখে না।