নাগরিকদল

নাগরিকদল

প্রথম।

ওহে, এতগুলো রাজা একত্র হয়ে লড়াই বাধিয়ে দিয়ে, ভাবলুম খুব তামাশা হবে-- কিন্তু দেখতে দেখতে কী যে হয়ে গেল ভালো বোঝাই গেল না।

দ্বিতীয়।

দেখলে না? ওদের নিজেদের মধ্যেই গোলমাল বেধে গেল-- কেউ যে কাউকে বিশ্বাস করে না।

তৃতীয়।

পরামর্শ ঠিক রইল না যে। কেউ এগোতে চায়, কেউ পিছোতে চায়; কেউ এ দিকে যায়, কেউ ও দিকে যায়, একে কি আর যুদ্ধ বলে।

প্রথম।

ওরা তো লড়াইয়ের দিকে চোখ রাখে নি-- ওরা পরস্পরের দিকেই চোখ রেখেছিল।

দ্বিতীয়।

কেবলই ভাবছিল-- লড়াই করে মরব আমি, আর তার ফল ভোগ করবে আর-কেউ।

তৃতীয়।

কিন্তু লড়েছিল কাঞ্চীরাজ, সে কথা বলতেই হবে।

প্রথম।

সে যে হেরেও হারতে চায় না।

দ্বিতীয়।

শেষকালে অস্ত্রটা একেবারে তার বুকে এসে লাগল।

তৃতীয়।

তার আগে সে যে পদে পদেই হারছিল তা যেন টেরও পাচ্ছিল না।

প্রথম।

অন্য রাজারা তো তাকে ফেলে কে কোথায় পালাল তার ঠিক নেই।

দ্বিতীয়।

কিন্তু শুনেছি, কাঞ্চীরাজ মরে নি।

তৃতীয়।

না, চিকিৎসায় বেঁচে গেল, কিন্তু তার বুকের মধ্যে যে হারের চিহ্নটা আঁকা রইল সে তো আর এ জন্মে মুছবে না।

প্রথম।

রাজারা কেউ পালিয়ে রক্ষা পায় নি, সবাই ধরা পড়েছে। কিন্তু বিচারটা কিরকম হল।

দ্বিতীয়।

আমি শুনেছি, সকল রাজারই দণ্ড হয়েছে, কেবল কাঞ্চীর রাজাকে বিচার-কর্তা নিজের সিংহাসনের দক্ষিণপার্শ্বে বসিয়ে স্বহস্তে তার মাথায় রাজমুকুট পরিয়ে দিয়েছে।

তৃতীয়।

একটা কিন্তু একেবারেই বোঝা গেল না।

দ্বিতীয়।

বিচারটা যেন কেমন বেখাপ রকম শোনাচ্ছে।

প্রথম।

তা তো বটেই। অপরাধ যা-কিছু করেছে সে তো ঐ কাঞ্চীর রাজা। এরা তো একবার লোভে, একবার ভয়ে,কেবল এগোচ্ছিল আর পিছোচ্ছিল।

তৃতীয়।

এ কেমন হল। যেন বাঘটা গেল বেঁচে আর তার লেজটা গেল কাটা।

দ্বিতীয়।

আমি যদি বিচারক হতুম তা হলে কাঞ্চীকে কি আর আস্ত রাখতুম। ওর আর চিহ্ন দেখাই যেত না।

তৃতীয়।

কী জানি ভাই, মস্ত মস্ত বিচারকর্তা-- ওদের বুদ্ধি একরকমের!

প্রথম।

ওদের বুদ্ধি বলে কিছু আছে কি। ওদের সবই মর্জি। কেউ তো বলবার লোক নেই।

দ্বিতীয়।

যা বলিস ভাই, আমাদের হাতে শাসনের ভার যদি পড়ত তা হলে এর চেয়ে ঢের ভালো করে চালাতে পারতুম।

তৃতীয়।

সে কি একবার করে বলতে।
1...12 | 13 | 14 | 15 | 16 | 17 | 18 | 19 | 20