গুহার দ্বারে

গুহার দ্বারে

সন্ন্যাসী।

এইখানে সব বুঝি শেষ হয়ে গেল।

যে ধ্যানে অনন্তকাল মগ্ন হব বলে

আসন পাতিয়াছিনু বিশ্বের বাহিরে,

আরম্ভ না হতে হতে ভেঙে গেল বুঝি।

তারি মুখ জাগে মনে সমাধিতে বসে,

তারি মুখ হৃদয়ের প্রলয়-আঁধারে

সহসা তারার মতো কোথা ফুটে ওঠে,

সেই দিকে আঁখি যেন বদ্ধ হয়ে থাকে,

ক্রমে ক্রমে অন্ধকার মিলাইয়া যায়,

জগতের দৃশ্য ধীরে ফুটে ফুটে ওঠে--

গাছপালা, সূর্যালোক, গৃহ, লোকজন

কোথা হতে জেগে ওঠে গুহার মাঝারে।

সদা মনে হয় বালা কোথায় না জানি,

হয়তো সে গেছে চলে নগরে ভ্রমিতে,

হয়তো কে অনাদর করেছে তাহারে,

এসেছে সে কাঁদো-কাঁদো মুখখানি করে

আমার বুকের কাছে লুকাইতে মাথা।

এইখানে সব বুঝি শেষ হয়ে গেল।

মিছে ধ্যান মিছে জ্ঞান মিছে আশা মোর।

আকাশ-বিহারী পাখি উড়িত আকাশে --

মাটি হতে ব্যাধ তারে মারিয়াছে বাণ,

ক্রমেই মাটির পানে যেতেছে পড়িয়া --

ক্রমেই দুর্বল দেহ শ্রান্ত ভগ্ন পাখা,

ক্রমেই আসিছে নুয়ে অভ্রভেদী মাথা।

ধুলায়, মৃত্যুর মাঝে লুটাইতে হবে।

লৌহপিঞ্জরের মাঝে বসিয়া বসিয়া

আকাশের পানে চেয়ে ফেলিব নিশ্বাস।

তবে কি রে আর কিছু নাইকো উপায়।

বালিকা।

দেখো পিতা, লতাটিতে কুঁড়ি ধরিয়াছে,

প্রভাতের আলো পেলে উঠিবে ফুটিয়া।

[সন্ন্যাসী সবেগে গিয়া লতা ছিঁড়িয়া ফেলিল

[সন্ন্যাসী সবেগে গিয়া লতা ছিঁড়িয়া ফেলিল

বালিকা।

ও কী হল! ও কী হল! কী করিলে পিতা।

সন্ন্যাসী।

রাক্ষসী, পিশাচী, ওরে, তুই মায়াবিনী --

দূর হ, এখনি তুই যা রে দূর হয়ে।

এত বিষ ছিল তোর ওইটুকু মাঝে।

অনন্ত জীবন মোর ধ্বংস করে দিলি।

ওরে তোরে চিনিয়াছি, আজ চিনিয়াছি --

প্রকৃতির গুপ্তচর তুই রে রাক্ষসী,

গলায় বাঁধিয়া দিলি লোহার শৃঙ্খল।

তুই রে আলোয়-আলো, তুই মরীচিকা--

কোন্‌ পিপাসার মাঝে, দুর্ভিক্ষের মাঝে

কোন্‌ মরুভূমি মাঝে, শ্মশানের পথে

কোন্‌ মরণের মুখে যেতেছিস নিয়ে।

ওই যে দেখি রে তোর নিদারুণ হাসি,

প্রকৃতির হৃদিহীন উপহাস তুই --

শৃঙ্খলেতে বেঁধে ফেলে পরাজিত মোরে

হা হা করে হাসিতেছে প্রকৃতি রাক্ষসী।

এখনো কি আশা তোর পুরে নি পাষাণী?

এখনো করিবি মোরে আরো অপমান,

আরো ধুলা দিবি ফেলে এ মাথায় মোর,

আরো গহ্বরেতে মোরে টেনে নিয়ে যাবি?

না রে না, তা হবে না রে, এখনো যুঝিব --

এখনো হইব জয়ী ছিঁড়িব শৃঙ্খল।
1...9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 | 15 | 16 | 17