গুহাদ্বারে

সন্ন্যাসীর প্রবেশ

গুহাদ্বারে

সন্ন্যাসীর প্রবেশ

সন্ন্যাসী।

আয় তোরা, কাছে আয় কে আসিবি আয়,

সকলি সুন্দর হেরি এ বিশ্বজগতে।

বালিকা।

আমিও কি কাছে যাব! ডাকো পিতা, ডাকো,

কী দোষ করিয়াছিনু বলো বুঝাইয়া!

সন্ন্যাসী।

কিছু ভয় করিস নে, কোনো দোষ নেই --

তোরে ফেলে আর কভু যাব না বালিকা।

(গুহার কাছে গিয়া)

এ কী অন্ধকার হেথা। এ কী বদ্ধ গুহা।

আয়, বাছা, মোরা দোঁহে বাহিরেতে যাই

চাঁদের আলোতে গিয়ে বসি এক বার।

(বাহিরে আসিয়া)

আহা এ কী সুমধুর! এ কী শান্তি-সুধা।

কী আরামে গাছগুলি রয়েছে দাঁড়ায়ে!

মনে সাধ যায় ঐ তরু হয়ে গিয়ে

চন্দ্রালোকে দাঁড়াইয়া স্তব্ধ হয়ে থাকি।

ধীরে ধীরে কত কী যে মনে আসিতেছে।

অতীতের অতি দূর ফুলবন হতে

বায়ু যেন বহে আসে নিশ্বাসের মতো,

সাথে লয়ে পল্লবের মর্মর বিলাপ,

মিলিত জড়িত শত পুষ্পগন্ধরাশি।

এমনি জোছনা-রাত্রে কোন্‌খানে ছিনু,

কারা যেন চারি পাশে বসে ছিল মোর!

তোরি মতো দু-একটি মধুমাখা মুখ

চাঁদের আলোতে মিশে পড়িতেছে মনে।

আর না রে, আর না রে, আর ফিরিব না।

তোদের অনেক দূরে ফেলিয়া এসেছি।

অনন্তের পারাবারে ভাসায়েছি তরী,

মাঝে মাঝে অতি দূরে রেখা দেখা যায়

তোদের সে মেঘময় মায়াদ্বীপগুলি।

সেথা হতে কারা তোরা বাঁশিটি বাজায়ে

আজিও ডাকিস মোরে! আমি ফিরিব না।

বন্দী করে রেখেছিলি মায়ামুগ্ধ করে,

পালায়ে এসেছি আমি, হয়েছি স্বাধীন।

তীরে বসে গা তোদের মায়াগানগুলি --

অনন্তের পানে আমি চলেছি ভাসিয়া।

বাছা, তুই কাছে আয়, দেখি তোরে আমি,

মুখেতে পড়েছে তোর চাঁদের কিরণ।

বালিকা।

(কাছে আসিয়া) গান পড়িতেছে মনে গাই বসে পিতা।

গান

মেঘেরা চলে চলে যায়,

চাঁদেরে ডাকে "আয় আয়"।

ঘুমঘোরে বলে চাঁদ, কোথায় -- কোথায়!

না জানি কোথা চলিয়াছে,

কী জানি কী সে সেথা আছে,

আকাশের মাঝে চাঁদ চারি দিকে চায়।

সুদূরে -- অতি -- অতি দূরে,

বুঝি রে কোন্‌ সুরপুরে

তারাগুলি ঘিরে বসে বাঁশরি বাজায়।

মেঘেরা তাই হেসে হেসে

আকাশে চলে ভেসে ভেসে

লুকিয়ে চাঁদের হাসি চুরি করে যায়।

সন্ন্যাসী।

এ কী রে চলেছি কোথা, এসেছি কোথায়।

বুঝি আর আপনারে পারি নে রাখিতে।

বুঝি মরি, ডুবি, বুঝি লুপ্ত হয়ে যাই।

ওরে কোন্‌ অতলেতে যেতেছি তলায়ে,

সর্বাঙ্গে চাপিছে ভার আঁখি মুদে আসে।

চৌদিকে কী যেন তোরে আসিছে ঘিরিয়া,

কোথায় রাখিলি তোর পালাবার পথ।

ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে যে রে যেতেছিস চলি

সহসা চরণে কোথা লাগিবে আঘাত

বিনাশের মাঝখানে উঠিবি জাগিয়া।

এখনি ছিঁড়িয়া ফেল্‌ স্বপনের মায়া।

চল্‌ তোর নিজ রাজ্যে অনন্ত আঁধারে।

যত চন্দ্র সূর্য সেথা ডুবে নিবে যাবে।

ক্ষুদ্র এ আলোতে এসে হনু দিশেহারা,

আঁধার দেয় না কভু পথ ভুলাইয়া।
1...5 | 6 | 7 | 8 | 9 | 10 | 11 | 12 | 13...17