গুহাদ্বারে

গুহাদ্বারে

বালিকা।

না পিতা ও-সব কথা ব'লো না আমারে,

শুনে ভয় করে শুধু বুঝিতে পারি নে।

সন্ন্যাসী।

তবে থাক্‌, তবে তুই কাছে আয় মোর,

দেখি তোর অতি মৃদু স্পর্শ সুকোমল।

আহা, তোর স্পর্শ মোর ধ্যানের মতন,

সীমা হতে নিয়ে যায় অসীমের দ্বারে।

এ কি মায়া? এ কি স্বপ্ন? এ কি মোহ ঘোর?

জগৎ কি মায়া করে ছায়া হয়ে গিয়ে

করিছে প্রাণের কাছে অনন্তের ভান?

(দূরে সরিয়া) বালিকা, এ সব কথা না শুনিবি যদি

সন্ন্যাসীর কাছে তবে এলি কী আশায়?

বালিকা।

আমি শুধু কাছে কাছে রহিব তোমার,

মুখপানে চেয়ে রব বসি পদতলে।

নগরের পথে যবে হইবে বাহির

ওই হাত ধরে আমি যাব সাথে সাথে।

সন্ন্যাসী।

পিঞ্জরের ছোটো পাখি আহা ক্ষীণ অতি,

এরে কেন নিয়ে যাই অনন্তের মাঝে।

ডানা দিয়ে মুখ ঢেকে ভয়ে হল সারা

আমার বুকের কাছে লুকাইতে চায়।

আহা, তবে নেবে আয়। থাক্‌ মুখ ঢেকে।

বুকের মাঝেতে তবে থাক্‌ লুকাইয়া।

এ কি স্নেহ? আমি কি রে স্নেহ করি এরে?

না না। স্নেহ কোথা মোর। কোথা দ্বেষ ঘৃণা।

কাছে যদি আসে কেহ তাড়াব না তারে,

দূরে যদি থাকে কেহ ডাকিব না কাছে।

(প্রকাশ্যে) বাছা, এ আঁধারে তুই কেমনে রহিবি?

তোরা সব ছোটো ছোটো আলোকের প্রাণী।

কুটির রয়েছে তোর নগরের মাঝে,

সেথা আছে লোকজন, গাছপালা, পাখি;

হেথায় কে আছে তোর।

বালিকা।

তুমি আছ পিতা।

যে স্নেহ দিয়েছ তুমি তাই নিয়ে রব।

সন্ন্যাসী।

(হাসিয়া, স্বগত) বালিকা কি মনে করে স্নেহ করি ওরে?

হায় হায় এ কী ভ্রম। জানে না সরলা

নিষ্কলঙ্ক এ হৃদয় স্নেহরেখাহীন।

তাই মনে করে যদি সুখে থাকে, থাক্‌।

মোহ নিয়ে ভ্রম নিয়ে বেঁচে থাকে এরা।

(প্রকাশ্যে) যাই বৎসে, গুহামাঝে করি গে প্রবেশ,

এক বার বসি গিয়ে সমাধি-আসনে।

বালিকা।

ফিরিবে কখন পিতা?

সন্ন্যাসী।

কেমনে বলিব,

ধ্যানে মগ্ন, নাহি থাকে সময়ের জ্ঞান।
1 | 2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8 | 9 | 10...17