গুহায়

সন্ন্যাসী

গুহায়

সন্ন্যাসী

আহা এ কী শান্তি, এ কী গভীর বিরাম!

অন্তর বাহির যাবে, যাবে দেশ-কাল,

"আছি" মাত্র রবে শুধু আর কিছু নয়।

বালিকা।

দুই দিন দুই রাত্রি চলে গেছে পিতা

গুহার দুয়ারে আমি বসিয়া রয়েছি,

তাই আজ এক বার এসেছি দেখিতে।

একটিও জনপ্রাণী আসে নি হেথায়,

দীর্ঘ দিন, দীর্ঘ রাত্রি গিয়েছে কাটিয়া,

কেন হেথা অন্ধকারে একা বসে আছ!

কতক্ষণ বসে বসে শুনিনু সহসা

তুমি যেন স্নেহবাক্যে ডাকিছ আমারে।

নিতান্ত একেলা তুমি রয়েছ যে পিতা

তাই আর পারিনু না, আসিলাম কাছে।

ও কী প্রভু, কথা কেন কহিছ না তুমি,

ও কী ভাবে চেয়ে আছ মোর মুখপানে!

ভালো লাগিছে না পিতা? যাব তবে চলে?

সন্ন্যাসী।

না না, এলি যদি, তবে যাস নে চলিয়া।

আমি তো ডাকি নি তোরে, নিজে এসেছিস

একটুকু দাঁড়া, তোরে দেখি ভালো করে।

সংসারের পরপারে ছিলেম যে আমি,

সহসা জগৎ হতে কে তোরে পাঠালে?

সেথা হতে সাথে করে কেন নিয়ে এলি

দিবালোক, পুষ্পগন্ধ, স্নিগ্ধ সমীরণ।

কিবা তোর সুধাকণ্ঠ, স্নেহমাখা স্বর।

মরি কী অমিয়াময়ী লাবণ্যপ্রতিমা।

সরলতাময় তোর মুখখানি দেখে

জগতের 'পরে মোর হতেছে বিশ্বাস।

তুই কি রে মিথ্যা মায়া, দু-দণ্ডের ভ্রম!

জগতের কাছে তুই ফুটেছিস ফুল

জগৎ কি তোরি মতো এত সত্য হবে!

চল্‌ বাছা গুহা হতে বাহিরেতে যাই।

সমুদ্রের এক পারে রয়েছে জগৎ

সমুদ্রের পরপারে আমি বসে আছি,

মাঝেতে রহিলি তুই সোনার তরণী --

জগৎ-অতীত এই পারাবার হতে

মাঝে মাঝে নিয়ে যাবি জগতের কূলে।
1...6 | 7 | 8 | 9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14...17