গুহাদ্বারে

সন্ন্যাসীর প্রবেশ

গুহাদ্বারে

সন্ন্যাসীর প্রবেশ

বালিকা।

এলে তুমি এতক্ষণে, বসে আছি হেথা,

পিতা, আমি তোমা তরে গিয়েছিনু বনে,

এনেছি আঁচল ভরে ফলফুল তুলে।

দেখো চেয়ে কী সুন্দর রাঙা দুটি ফুল।

সন্ন্যাসী।

(হাসিয়া) দিতে চাস যদি বাছা, দে তবে যা খুশি।

মোর কাছে কিছু নাই সুন্দর কুৎসিত।

এক মুঠা ফুল যদি ভালো লাগে তোর

এক মুঠা ধুলা সেও কী করিল দোষ।

ভালো মন্দ কেন লাগে? সবি অর্থহীন।

আজ বৎসে, সারাদিন কাটালি কী করে?

বালিকা।

ওই দেখো--চুপি চুপি এস এই দিকে।

সারাদিন মোর সাথে খেলা করে করে

সাঁঝেতে লতাটি মোর ঘুমিয়ে পড়েছে।

নুইয়ে পড়েছে ভূঁয়ে কচি ডালগুলি,

পাতাগুলি মুদে গেছে জড়াজড়ি করে।

এস পিতা, এইখানে ব'সো এর কাছে --

ধীরে ধীরে গায়ে দাও হাতটি বুলিয়ে।

সন্ন্যাসী।

(স্বগত) এ কী রে মদিরা আমি করিতেছি পান।

এ কী মধু অচেতনা পশিছে হৃদয়ে।

এ কী রে স্বপন-ঘোরে ছাইছে নয়ন।

আবেশে পরানে আসে গোধূলি ঘনায়ে।

পড়িছে জ্ঞানের চোখে মেঘ-আবরণ।

ধীরে ধীরে মোহময় মরণের ছায়া

কেন রে আমারে যেন আচ্ছন্ন করিছে।

(সহসা ফুল ফল ছিঁড়িয়া ফেলিয়া, ভূমিতে পদাঘাত করিয়া)

দূর হোক -- এ সকল কিছু ভালো নয় --

বালিকা, বালিকা তোর এ কী ছেলেখেলা।

আমি যে সন্ন্যাসী যোগী মুক্ত নির্বিকার,

সংসারের গ্রন্থিহীন, স্বাধীন সবল,

এ ধুলায় ঢাকিবি কি আমার নয়ন?

(কিয়ৎক্ষণ থামিয়া)

বাছা রে, অমন করে চাহিয়া কেন রে।

কেন রে নয়ন ছুটি করে ছল ছল।

জানিস নে তুই, মোরা সন্ন্যাসী বিরাগী

আমাদের এ সকল ভালো নাহি লাগে।

ছি, ছি, জনমিল প্রাণে এ কী এ বিকার।

সহসা কেন রে এত করিল চঞ্চল।

কোথা লুকাইয়া ছিল হৃদয়ের মাঝে

ক্ষুদ্র রোষ, অগ্নিজিহ্ব নরকের কীট।

কোন্‌ অন্ধকার হতে উঠিল ফুঁসিয়া।

এতদিন অনাহারে এখনো মরে নি।

হৃদয়ে লুকানো আছে এ কী বিভীষিকা।

কোথা যে কে আছে গুপ্ত কিছু তো জানি নে।

হৃদয়-শ্মশান মাঝে মৃতপ্রাণী যত

প্রাণ পেয়ে নাচিতেছে কঙ্কালের নাচ,

কেমনে নিশ্চিন্ত হয়ে রহি আমি আর।

(প্রকাশ্যে) দাও বৎসে এনে দাও ফলফুল তব,

দেখাও কোথায় বাছা লতাটি তোমার --

না, না, আমি চলিলাম নগরে ভ্রমিতে।

দু-দণ্ড বসিয়া থাকো, আসিব এখনি।
1...3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8 | 9 | 10 | 11...17