সন্ন্যাসী
পর্বত-পথে দুই জন স্ত্রীলোকের প্রবেশ
পর্বত-শিখরে
সন্ন্যাসী
পর্বত-পথে দুই জন স্ত্রীলোকের প্রবেশ
গান
গান
বনে এমন ফুল ফুটেছে,
মান করে থাকা আজ কি সাজে!
মান-অভিমান ভাসিয়ে দিয়ে
চলো চলো কুঞ্জমাঝে।
আজ কোকিলে গেয়েছে কুহু,
মুহুর্মুহু,
আজ, কাননে ঐ বাঁশি বাজে।
মান করে থাকা আজ কি সাজে!
আজ মধুরে মিশাবি মধু,
পরান-বঁধু
চাঁদের আলোয় ঐ বিরাজে।
মান করে থাকা আজ কি সাজে!
সন্ন্যাসী।
সহসা পড়িল চোখে এ কী মায়াঘোর,
জগতেরে কেন আজ মনোহর হেরি!
পশ্চিমে কনক-সন্ধ্যা সমুদ্রের মাঝে
সুধারে নীলের কোলে যেতেছে মিলায়ে।
নিম্নে বনভূমি মাঝে ঘনায় আঁধার,
সন্ধ্যার সুবর্ণ-ছায়া উপরে পড়েছে।
চারি দিকে শান্তিময়ী স্তব্ধতার মাঝে
সিন্ধু শুধু গাহিতেছে অবিশ্রাম গান।
বামে দূরে দেখা যায় শৈল-পদতলে
শ্যামল তরুর মাঝে নগরের গৃহ।
কোলাহল থেমে গেছে, পথ জনহীন।
দীপ জ্বলে উঠিতেছে দু-একটি করে,
সন্ধ্যার আরতি হয়, শঙ্খ-ঘণ্টা বাজে।
প্রকৃতি, এমন তোরে দেখি নি কখনো;
এমন মধুর যদি মায়ামূর্তি তোর,
দূর হতে বসে বসে দেখি না চাহিয়া!
হেথায় বসি না কেন রাজার মতন,
জগতের রঙ্গভূমি সম্মুখে আমার!
আমি আজি প্রভু তোর, তুই দাসী মোর,
মায়াবিনী দেখা তোর মায়া-অভিনয়,
দেখা তোর জগতের মহা ইন্দ্রজাল।
খেলা কর্ সমুখেতে চন্দ্রসূর্য নিয়ে,
নীলাকাশ রাজছত্র ধর্ মোর শিরে,
সমস্ত জগৎ দিয়ে কর্ মোরে পূজা।
উঠুক রে দিবানিশি সপ্তলোক হতে
বিচিত্র রাগিণীময়ী মায়াময়ী গাথা।
আর এক দল পথিকের প্রবেশ
গান
আর এক দল পথিকের প্রবেশ
গান
মরি লো মরি,
আমায় বাঁশিতে ডেকেছে কে।
ভেবেছিলেম ঘরে রব কোথাও যাব না,
ওই যে বাহিরে বাজিল বাঁশি বলো কী করি।
শুনেছি কোন্ কুঞ্জবনে যমুনাতীরে,
সাঁঝের বেলা বাজে বাঁশি ধীর সমীরে,
ওগো তোরা জানিস যদি (আমায়) পথ বলে দে।
আমায় বাঁশিতে ডেকেছে কে।
দেখি গে তার মুখের হাসি,
(তারে) ফুলের মালা পরিয়ে আসি,
(তারে) বলে আসি তোমার বাঁশি
(আমার) প্রাণে বেজেছে।
আমায় বাঁশিতে ডেকেছে কে।
সন্ন্যাসী।
জগৎ সম্মুখে মোর সমুদ্রের মতো,
আমি তীরে বসে আছি পর্বত-শিখরে,
তরঙ্গেতে গ্রহতারা হতেছে আকুল,
ভাসিতেছে কোটি প্রাণী জীর্ণ কাষ্ঠ ধরি।
আমি শুধু শুনিতেছি কলধ্বনি তার,
আমি শুধু দেখিতেছি তরঙ্গের খেলা।
কিরণ-কুন্তল-জাল এলায়ে চৌদিকে
রুদ্র তালে নৃত্য করে এ মহা প্রকৃতি।
আলোক আঁধার ছায়া জীবন মরণ,
রাত্রি দিন, আশা ভয়, উত্থান পতন,
এ কেবল তালে তালে পদক্ষেপ তার।
শত গ্রহ, শত তারা, শত কোটি প্রাণী
প্রতি পদক্ষেপে তার জন্মিছে মরিছে।
আমি তো ওদের মাঝে কেহ নই আর
তবে কেন এই নৃত্য দেখি না বসিয়া!
এক জন পথিক
গান
এক জন পথিক
গান
যোগী হে, কে তুমি হৃদি-আসনে।
বিভূতি-ভূষিত শুভ্র দেহ,
নাচিছ দিক্-বসনে।
মহা আনন্দে পুলক-কায়
গঙ্গা উথলি উছলি যায়,
ভালে শিশু-শশী হাসিয়া চায়,
জটাজুট ছায় গগনে।