প্রভাত

প্রভাত

সন্ন্যাসী।

(অরণ্য হইতে ছুটিয়া বাহিরে আসিয়া)

যাক, রসাতলে যাক সন্ন্যাসীর ব্রত!

(ছুঁড়িয়া ফেলিয়া) দূর করো, ভেঙে ফেলো দণ্ড কমণ্ডলু!

আজ হতে আমি আর নহি রে সন্ন্যাসী!

পাষাণ-সংকল্পভার দিয়ে বিসর্জন

আনন্দে নিশ্বাস ফেলে বাঁচি এক বার।

হে বিশ্ব, হে মহাতরী চলেছ কোথায়,

আমারে তুলিয়া লও তোমার আশ্রয়ে --

একা আমি সাঁতারিয়া পারিব না যেতে।

কোটি কোটি যাত্রী ওই যেতেছে চলিয়া,

আমিও চলিতে চাই উহাদেরি সাথে।

যে পথে তপন শশী আলো ধরে আছে,

সে পথ করিয়া তুচ্ছ, সে আলো ত্যজিয়া,

আপনারি ক্ষুদ্র এই খদ্যোত-আলোকে

কেন অন্ধকারে মরি পথ খুঁজে খুঁজে!

জগৎ, তোমারে ছেড়ে পারি নে যে যেতে,

মহা আকর্ষণে সবে বাঁধা আছি মোরা।

পাখি যবে উড়ে যায় আকাশের পানে

মনে করে, এনু বুঝি পৃথিবী ত্যজিয়া,

যত ওড়ে -- যত ওড়ে যত ঊর্ধ্বে যায় --

কিছুতে পৃথিবী তবু পারে না ছাড়িতে

অবশেষে শ্রান্তদেহে নীড়ে ফিরে আসে।

(চারিদিকে চাহিয়া)

আজি এ জগৎ হেরি কী আনন্দময়!

সবাই আমারে যেন দেখিতে আসিছে।

নদী তরুলতা পাখি হাসিছে প্রভাতে।

উঠিয়াছে লোকজন প্রভাত হেরিয়া,

হাসিমুখে চলিয়াছে আপনার কাজে।

ওই ধান কাটে, ওই করিছে কর্ষণ,

ওই গাভী নিয়ে মাঠে চলেছে গাহিয়া।

ওই যে পূজার তরে তুলিতেছে ফুল,

ওই নৌকা লয়ে যাত্রী করিতেছে পার।

কেহ বা করিছে স্নান, কেহ তুলে জল,

ছেলেরা ধুলায় বসে খেলা করিতেছে,

সখীরা দাঁড়ায়ে পথে কহে কত কথা।

আহা সে অনাথা বালা কোথায় না জানি!

কে তারে আশ্রয় দেবে, কে তারে দেখিবে!

ব্যথিত হৃদয় নিয়ে কার কাছে যাবে,

কে তারে পিতার মতো বুকে নিয়ে তুলে

নয়নের অশ্রুজল দিবে মুছাইয়া?

কী করেছি, কী বলেছি, সব গেছি ভুলে,

বিস্মৃত দুঃস্বপ্ন শুধু চেপে আছে প্রাণে--

একখানি মুখ শুধু মনে পড়িতেছে,

দুটি আঁখি চেয়ে আছে করুণ বিস্ময়ে।

আহা, কাছে যাই তার, বুকে নিয়ে তারে

শুধাই গে কী হয়েছে কী করেছি আমি!

একটি কুটিরে মোরা রহিব দু-জনে,

রামায়ণ হতে তারে শুনাব কাহিনী,

সন্ধ্যার প্রদীপ জ্বেলে, শাস্ত্রকথা শুনে

বালিকা কোলেতে মোর পড়িবে ঘুমায়ে।
1...9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 | 15 | 16 | 17