করভোদ্যান
রোহিণী।
ব্যাপারখানা কী। কিছু তো বুঝতে পারছি নে। (মালীদের প্রতি) তোরা সব তাড়াতাড়ি কোথায় চলেছিস।
প্রথম মালী।
আমরা বাইরে যাচ্ছি।
রোহিণী।
বাইরে কোথায় যাচ্ছিস।
দ্বিতীয় মালী।
তা জানি নে, আমাদের রাজা ডেকেছে।
রোহিণী।
রাজা তো বাগানেই আছে। কোন্ রাজা।
প্রথম মালী।
বলতে পারি নে।
দ্বিতীয় মালী।
চিরদিন যে রাজার কাজ করছি সেই রাজা।
রোহিণী।
তোরা সবাই চলে যাবি!
প্রথম মালী।
হাঁ, সবাই যাব, এখনই যেতে হবে। নইলে বিপদে পড়ব।
[প্রস্থান
[প্রস্থান
রোহিণী।
এরা কী বলে বুঝতে পারি নে-- ভয় করছে। যে নদীর পাড়ি ভেঙে পড়বে সেই পাড়ি ছেড়ে যেমন জন্তুরা পালায় এই বাগান ছেড়ে তেমনি সবাই পালিয়ে যাচ্ছে।
কোশলরাজের প্রবেশ
কোশলরাজের প্রবেশ
কোশল।
রোহিণী, তোমাদের রাজা এবং কাঞ্চীরাজ কোথায় গেল জান।
রোহিণী।
তাঁরা এই বাগানেই আছেন, কিন্তু কোথায় কিছুই জানি নে।
কোশল।
তাদের মন্ত্রণাটা ঠিক বুঝতে পারছি নে। কাঞ্চীরাজকে বিশ্বাস করে ভালো করি নি।
[প্রস্থান
[প্রস্থান
রোহিণী।
রাজাদের মধ্যে কী একটা ব্যাপার চলছে। শীঘ্র একটা দুর্দৈব ঘটবে। আমাকে সুদ্ধ জড়াবে না তো?
অবন্তীরাজ।
(প্রবেশ করিয়া) রোহিণী, রাজারা সব কোথায় গেল জান।
রোহিণী।
তাঁরা কে কোথায় তার ঠিকানা করা শক্ত। এইমাত্র কোশলরাজ এখানে ছিলেন।
অবন্তী।
কোশলরাজের জন্যে ভাবনা নেই। তোমাদের রাজা এবং কাঞ্চীরাজ কোথায়।
রোহিণী।
অনেকক্ষণ তাঁদের দেখি নি।
অবন্তী।
কাঞ্চীরাজ কেবলই আমাদের এড়িয়ে এড়িয়ে বেড়াচ্ছে। নিশ্চয় ফাঁকি দেবে। এর মধ্যে থেকে ভালো করি নি। সখী, এ বাগান থেকে বেরোবার পথটা কোথায় জান।
রোহিণী।
আমি তো জানি নে।
অবন্তী।
দেখিয়ে দিতে পারে এমন কোনো লোক নেই?
রোহিণী।
মালীরা সব বাগান ছেড়ে গেছে।
অবন্তী।
কেন গেল।
রোহিণী।
তাদের কথা ভালো বুঝতে পারলুম না। তারা বললে, রাজা তাদের শীঘ্র বাগান ছেড়ে যেতে বলেছেন।
অবন্তী।
রাজা! কোন্ রাজা।
রোহিণী।
তারা স্পষ্ট করে বলতে পারলে না।
অবন্তী।
এ তো ভালো কথা নয়। যেমন করেই হোক এখান থেকে বেরোবার পথ খুঁজে বের করতেই হবে। আর এক মুহূর্ত এখানে নয়।
[দ্রুত প্রস্থান
[দ্রুত প্রস্থান
রোহিণী।
চিরদিন তো এই বাগানেই আছি কিন্তু আজ মনে হচ্ছে যেন বাঁধা পড়ে গেছি, বেরিয়ে পড়তে না পারলে নিষ্কৃতি নেই। রাজাকে দেখতে পেলে যে বাঁচি। পরশু যখন তাঁকে রানীর ফুল দিলুম তখন তিনি তো একরকম আত্মবিস্মৃত ছিলেন-- তার পর থেকে তিনি আমাকে কেবলই পুরস্কার দিচ্ছেন। এই অকারণ পুরস্কারে আমার ভয় আরো বাড়ছে।-- এত রাতে পাখিরা সব কোথায় উড়ে চলেছে? এরা হঠাৎ এমন ভয় পেল কেন। এখন তো এদের ওড়বার সময় নয়। রানীর পোষা হরিণী ও দিকে দৌড়ল কোথায়। চপলা, চপলা! আমার ডাক শুনলই না। এমন তো কখনোই হয় না। চার দিকের দিগন্ত মাতালের চোখের মতো হঠাৎ লাল হয়ে উঠেছে। যেন চার দিকেই অকালে সূর্যাস্ত হচ্ছে। বিধাতার এ কী উন্মত্ততা আজ! ভয় হচ্ছে। রাজার দেখা কোথায় পাই।











